আদর্শহীন জাতিও পৃথিবীর বুকে অতি নিকৃষ্ট। আদর্শ তাই, যা অনুসরণ করলে মানুষের ‘সার্বিক কল্যাণ’ সাধিত হয়। ঘড়ির প্রতিটি কাঁটাই প্রয়োজনীয়। কারণ একটি অপরটিকে নির্দেশ করে। জাতির উন্নয়নে যেমন অর্থনীতির প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন একটি আদর্শ ও আদর্শিক শিক্ষা-নীতির। জাতিকে সুশৃঙ্খল ও উন্নত করতে অবশ্যই একটি সর্বোন্নত ও আদর্শিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন।
সুশিক্ষিত ও উত্তম আদর্শে প্রশিক্ষিত জাতি দীর্ঘ সময় ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। উত্তম আদর্শ নির্বাচনে চাই সুশিক্ষা। পৃথিবীর শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আদর্শ ও শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। লেখাবিহীন বই যেমন মূল্যহীন, তেমনি আদর্শহীন জাতিও পৃথিবীর বুকে অতি নিকৃষ্ট। আদর্শ তা-ই, যা অনুসরণ করলে মানুষের ‘সার্বিক কল্যাণ’ সাধিত হয়। ঘড়ির প্রতিটি কাঁটাই প্রয়োজনীয়। কারণ একটি অপরটিকে নির্দেশ করে। জাতির উন্নয়নে যেমন অর্থনীতির প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন একটি আদর্শ ও আদর্শিক শিক্ষা-নীতির।
জাতিকে সুশৃঙ্খল ও উন্নত করতে অবশ্যই একটি সর্বোন্নত ও আদর্শিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন। আদর্শ হচ্ছে শিক্ষার একটি অপরিহার্য বিষয়। আদর্শিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতি নির্মিত হলে তাতে অবশ্যই জাতি শুধু অগ্রগামী নয়, অপ্রতিদ্বন্দ্বীও হবে। পৃথিবীতে কখনো ‘বিখ্যাত’ মানুষের অভাব ছিল না। বর্তমানেও নেই। বিভিন্ন কালের বিখ্যাত মানুষগুলো আদর্শ হিসেবে আসলে কতটুকু বিবেচিত হতে পারে তা নতুন করে ভাববার বিষয়?
আরো পড়ুন> অপরিণামদর্শী বিয়ে ও তালাক
সৃষ্টিজগতের সবকিছুই পরিবর্তনশীল। বর্তমানে আমরা দাবি করছি, পরিবর্তনের দ্বারাই জাতিকে অগ্রগামী করা যায়। তাই নিত্য-নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে পরিবর্তন বিশেষ জরুরি, সে দিকে লক্ষ্য আছে খুব অল্পসংখ্যক মানুষের। যারা লক্ষ্য করছেন, তারাও বিষয়টি নিজেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখছেন। পরিবর্তনের তেমন আওয়াজ তুলছেন না বা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সমস্যা চিহিৃত করে তা নিজের কাছে রেখে দিলে তো আর সমাধান আসবে না।
“আদর্শহীন শিক্ষা বা কর্ম লাগামহীন ঘোড়ার সমতুল্য। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকগুলো নানান মনীষীর ‘মহান কর্মের’ কথা দিয়ে ভরপুর। অথচ এদের অনেকের মাঝেই প্রকৃত শিক্ষা বা আদর্শ ছিল না। আদর্শ সবর্দা অনুসরণীয়; অনুকরণীয় নয়। নিজের মেধা-মনন না খাটিয়ে ভেড়ার পালের মতো দিনের পর দিন কেবল অন্ধ অনুকরণ করলেই হবে না। চিন্তাভাবনা করে, জেনে-বুঝে আদর্শের অনুসরণ করাই শ্রেয়। মানুষের একার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়। কাজ করতে হলে সবার মাঝে প্রয়োজন সমন্বয় ও ঐক্য, যা আদর্শ ছাড়া সম্ভব নয়। আদর্শ চিহ্নিত করার শিক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনটা আদর্শ আর কোনটা আদর্শ নয় এবং কেন নয় তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা আবশ্যক।”
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক গবেষক শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতির মতো বিভিন্ন ‘পদ্ধতি’ আবিষ্কার করছেন ঠিকই, কিন্তু সমস্যার সমাধান তাতে কতটুকু হচ্ছে? বর্তমান বিশ্বের প্রায় সব শিক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে প্রচুর ঘাটতি। যে কারণে নতুন কোনো কিছু এলেই তারা তা হাতের নাগালে পেতে চায়। নিজের উদ্দেশ্য মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তন করে। সর্বদাই একটা অস্থিরতা কাজ করে। এর প্রধান কারণ, শিক্ষাক্ষেত্রে তীব্র আদর্শিক সংকট।
লেখকের সব কলাম
আদর্শহীন শিক্ষা বা কর্ম লাগামহীন ঘোড়ার সমতুল্য। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকগুলো নানান মনীষীর ‘মহান কর্মের’ কথা দিয়ে ভরপুর। অথচ এদের অনেকের মাঝেই প্রকৃত শিক্ষা বা আদর্শ ছিল না। আদর্শ সবর্দা অনুসরণীয়; অনুকরণীয় নয়। নিজের মেধা-মনন না খাটিয়ে ভেড়ার পালের মতো দিনের পর দিন কেবল অন্ধ অনুকরণ করলেই হবে না। চিন্তাভাবনা করে, জেনে-বুঝে আদর্শের অনুসরণ করাই শ্রেয়। মানুষের একার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়। কাজ করতে হলে সবার মাঝে প্রয়োজন সমন্বয় ও ঐক্য, যা আদর্শ ছাড়া সম্ভব নয়। আদর্শ চিহ্নিত করার শিক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনটা আদর্শ আর কোনটা আদর্শ নয় এবং কেন নয় তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা আবশ্যক।
“আদর্শ কী? আদর্শ কেন? আদর্শ না থাকলে সমস্যা কী? বর্তমান বিশ্বের মানবজাতির সার্বিক সমস্যার সমাধানে কারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণযোগ্য, কারা গ্রহণযোগ্য না? এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা অপরিহার্য।”
আদর্শ কী? আদর্শ কেন? আদর্শ না থাকলে সমস্যা কী? বর্তমান বিশ্বের মানবজাতির সার্বিক সমস্যার সমাধানে কারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণযোগ্য, কারা গ্রহণযোগ্য না? এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা অপরিহার্য। জাতিগুলোর উন্নয়নের মূলমন্ত্র হল ‘উন্নত চিন্তা-ভাবনা ও আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা’। শিক্ষা ব্যবস্থা যত সমন্বিত ও সমৃদ্ধ হবে, জাতি তত উন্নত ও অগ্রগামী হবে। আদর্শিক শিক্ষিতরাই জাতির কল্যাণে সর্বদা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে থাকে। সমাজে কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা শিক্ষক। তাই পেশাগত দিক থেকে প্রত্যেকের কাজ ও দায়িত্ব আলাদা হতে পারে। কিন্তু মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ সর্বজনীন তথা সর্বজনসম্মত। স্থান-কাল-পাত্রভেদে এসবে মৌলিক কোনো পার্থক্য হয় না। বিশেষ করে আদর্শ কখনো ভিন্ন হতে পারে না। মৌলিকভাবে আদর্শ এক ও অভিন্ন। নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক একক চ্যালেঞ্জিং আদর্শই সবার গ্রহণ করা শ্রেয়। যা সার্বিক কল্যাণকর নয় তা কখনো আদর্শ হতে পারে না।
অকল্যাণকর কাজগুলো সর্বদা অমানবিকই হয়ে থাকে। তাই মানবিক ও সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করেই আদর্শ অনুসন্ধান প্রয়োজন। প্রাপ্ত আদর্শের আলোকে জীবনকে সাজিয়ে মানব কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করা প্রতিটি মানুষের আবশ্যক দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রকৃত আদর্শের যারা অনুসারী তারাই সুনাগরিক হিসেবে বিবেচ্য। জাতিগুলোর প্রকৃত উন্নতি করতে হলে ‘উন্নত ও সমন্বিত শিক্ষা’র যেমন প্রয়োজন, তেমনি একক চ্যালেঞ্জিং আদর্শের প্রয়োজনীয়তা ও ভূমিকা অপরিসীম।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট
বার্তা সম্পাদক : দেশ দর্শন ডটকম
sharifuddin420953@gmail.com
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]
খুব ভালো লিখেছেন জনাব।
ধন্যবাদ।