আমাদের সমাজ বর্তমানে ইংরেজিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, নতুন প্রজন্মের অতিথিদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়। মায়েরা যেন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন, তাদের চার-পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চাটিকে নিয়ে। কে আগে বাচ্চাকে সবার থেকে আধুনিক করে গড়ে তুলবে।
তমদ্দুন মজলিশ ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক পুস্তিকা লিখে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা রাজপথে মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলে গুলি করলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেকে শহীদ হন। বিশ শতকে বাঙালি ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আজ একুশ শতকে এসে বাঙালি তার ওইসব মহৎ অর্জনগুলো বর্জন করে মাতৃভাষা বাংলাকে বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দিচ্ছে।
আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর বছর পাঁচেক রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলা ভাষা প্রচলিত হয়েছিল। এ সময় বাংলা ভাষা, প্রশাসন, শিক্ষার মাধ্যম, নিম্ন আদালত প্রভৃতি ক্ষেত্রে দ্রুত চালু হতে থাকে। মোটকথা, সত্তর দশকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে সমাজ জীবনের বিভিন্ন স্তরে প্রাপ্য মর্যাদা পেয়েছিল বাংলা ভাষা। কিন্তু বর্তমানে আমরা বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার করছি না।
আমাদের বাংলা ভাষার সাথে এখন মিশে গেছে ইংরেজি, হিন্দি, ফারসি, পর্তুগীজ, উর্দুসহ নানা ভাষা। তাছাড়া আমাদের সমাজ বর্তমানে ইংরেজিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, নতুন প্রজন্মের অতিথিদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়। মায়েরা যেন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন, তাদের চার-পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চাটিকে নিয়ে। কে আগে বাচ্চাকে সবার থেকে আধুনিক করে গড়ে তুলবে। কিন্তু এই আধুনিকতার মারপ্যাঁচে পড়ে বাচ্চাটি মাতৃভাষা বাংলার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বেতার অথবা টেলিভিশনের অনেক নাম ইংরেজিতে লেখা হয়। বাংলাদেশ বেতার হয়ে যায় ‘রেডিও বাংলাদেশ’। বিলবোর্ড, ব্যানার, এমনি অনেক জায়গায় বাংলার বদলে ইংরেজি লেখা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানুষ বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে ‘বাংলিশ’ লেখা দিচ্ছে। আমরা যে শুধু ইংরেজি বলি তা নয়। তার থেকেও জঘন্য কাজ আমরা বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে ‘বাংলিশ’ ভাষায় কথা বলি।
একসময় যেখানে শিশুরা প্রথম শেখা বুলিতে ‘মা’ বলে ডাকতো সেখানে বর্তমানের মায়েরা ‘মাম্মি’, ‘মম’ শব্দটি শেখাচ্ছেন। ফলে জাতির অতি মধুর শব্দ ‘মা’ ডাকটি কেমন যেন একরকম হারিয়েই গিয়েছে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করানো হয়। এমনকি বাংলাদেশে অনেক ইংরেজি নামে বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এতে করে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। বেতার অথবা টেলিভিশনের অনেক নাম ইংরেজিতে লেখা হয়। বাংলাদেশ বেতার হয়ে যায় ‘রেডিও বাংলাদেশ’। বিলবোর্ড, ব্যানার, এমনি অনেক জায়গায় বাংলার বদলে ইংরেজি লেখা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানুষ বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে ‘বাংলিশ’ লেখা দিচ্ছে। আমরা যে শুধু ইংরেজি বলি তা নয়। তার থেকেও জঘন্য কাজ আমরা বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে ‘বাংলিশ’ ভাষায় কথা বলি।
বাংলা ভাষার প্রতি এই অশ্রদ্ধা, অবজ্ঞা, উপেক্ষা, নৈরাজ্য এমন পর্যায়ে গেছে যে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য, লালিত্য, মাধুর্য আজ বিলুপ্তির পথে। এতে মনে হয় না যে ত্রিশ কোটি বাঙালির মাতৃভাষা এ শতাব্দীর শেষ অব্দি টিকে থাকবে। খুব অল্প সময়ে আমাদের বাংলা ভাষা অবলুপ্তির পথে চলে যাবে। আগামী প্রজন্ম জানতেই পারবে না তাদের মাতৃভাষা কী। শেখার তো প্রশ্নই আসে না। অথচ এই বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে আমাদের অনেক ভাই, মা, বোন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেন। তাদের প্রতি ফোঁটা রক্তের দাম আমরা- এই আধুনিক বাঙালিরা দিচ্ছি না। এটা বাঙালির জন্য অত্যন্ত লজ্জার।
আরওয়া শবনম : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]