সোমবার রাত ৪:৩২, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

বাকপটু মামুনুল হকদের আবেগী বয়ান

সুলতান মাহমুদ

রাজনীতি করতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-রাষ্ট্রদর্শনের চর্চা লাগে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পেরেছে, কারণ তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রদর্শন আছে। তাদের নিজেদের রাষ্ট্রচিন্তক, রাজনীতি বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী আছে। কওমি মাদরাসাগুলোতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানও পড়ানো হয় না এবং তাদের একজন রাষ্ট্রদার্শনিক-রাজনীতি বিশ্লেষকও নেই। এমনকি আলেম রাজনৈতিকরাও ন্যূনতম রাজনীতির জ্ঞান রাখেন না।

ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের অধিকারী রাষ্ট্রনায়করা বাকপটু হয় না। তাদের কণ্ঠে তেজস্বীতা থাকে না। তারা কথার খই ফুটিয়ে মানুষকে মোহগ্রস্ত করতে জানে না। যেমন বাংলাদেশের এ যাবতকালের সর্বাধিক সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। পক্ষান্তরে বাকপটু রাজনীতিবিদরা তাদের বাকচাতুর্য, বাগ্মিতা দিয়ে সাময়িক মানুষকে মাদকাসক্ত করে রাখে, কিন্তু এরা রাষ্ট্রপরিচালনায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। যেমন স্বাধীনতার স্থপতি এবং অন্যান্যরা।

কওমি অঙ্গনের একজন বাকপটু যোগ্য আলেম ও বক্তা মাওলানা মামুনুল হক। তার কন্ঠে বলিষ্ঠতা, ব্যাঘ্রতা, তেজস্বীতা সব আছে। বাঘের তর্জন-গর্জন আছে। একটি কথা দ্বিতীয়বার রিপিট করতে হয় না। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের কিছু সমস্যা হচ্ছে, তিনি সবসময় যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে ওয়াজ করেন। বয়ানে সর্বদা একটা প্রতিপক্ষ বানিয়ে তার বিরোধিতা করে ওয়াজ করেন। দরদ দিয়ে নরম কথা বলতে জানেন না তিনি। অবশ্য নরম কথা বললে তার বক্তব্যের বিশেষত্ব কিছু অবশিষ্ট থাকে না আর। সমস্যা হচ্ছে, মাওলানা মামুনুল হকের এ বাকচাতুর্য দেখে কওমির কিছু অর্বাচীন পোলাপাইন তাঁকে আগামী বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক, সিপাহসালারসহ অনেককিছু ভাবতে শুরু করেছে। অথচ তিনি একজন চরম আবেগী আলেম। রাষ্ট্রনায়করা আবেগী হয় না। রাষ্ট্রনায়করা হয় বিবেকবান। আবেগ আর বিবেকের মধ্যে ব্যস্তানুপাতিক ব্যবধান বিদ্যমান। একটি বাড়লে অন্যটি কমতে থাকে।

সমস্যা হচ্ছে, মাওলানা মামুনুল হকের এ বাকচাতুর্য দেখে কওমির কিছু অর্বাচীন পোলাপাইন তাঁকে আগামী বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক, সিপাহসালারসহ অনেককিছু ভাবতে শুরু করেছে। অথচ তিনি একজন চরম আবেগী আলেম। রাষ্ট্রনায়করা আবেগী হয় না। রাষ্ট্রনায়করা হয় বিবেকবান। আবেগ আর বিবেকের মধ্যে ব্যস্তানুপাতিক ব্যবধান বিদ্যমান। একটি বাড়লে অন্যটি কমতে থাকে।

তাঁর ভুল আবেগের একটি সমস্যা হল, তিনি হুজুগে গণজোয়ার দেখলে খেই হারিয়ে ফেলেন। বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেন না। মনে করেন এই গণজোয়ার সমুদ্রের জোয়ারের ন্যায় সবকিছু ভাসিয়ে নিবে। অথচ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্বাহী ক্ষমতার সামনে এ হুজুগে গণজোয়ার বন্যার পানিতে ভেসে আসা খড়-কুঁটোর মতই দুর্বল। ৫ মে ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে হুজুগে গণজোয়ার দেখে মামুনুল হক প্রকাশ্যে আল্টিমেটাম দিয়ে সৈয়দ আশরাফকে বলেছিলেন, ‘আজকের রাতের পর আগামীকাল তোরা কোথায় পালাবি সে পথ খোঁজ’। হুজুগে জনতা তার কথায় ভরসা করে রাতে ওখানে অবস্থান করে জেনোসাইডের শিকার হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গপালের ন্যায় আত্মহুতি দিয়েছেন। মামুনুল হক তার সেই ভুল বক্তব্যের জন্য আজও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। দুই. বছর দেড়েক আগে এরদোগানের জনপ্রিয়তা দেখে তাকে খলিফাতুল মুসলিমীন আখ্যা দিয়েছিলেন। তিন. এখন পাকি মৌলভী ফজলুর রহমানের কথিত আজাদী মার্চের জোয়ার দেখে তার পক্ষে বিভিন্ন সাফাইমূলক কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন।

ওয়াজ ও বয়ানে চিৎকার-চেচামেচিতে বিখ্যাত মাওলানা মামুনুল হক

মাওলানা মামুনুল হক গণতান্ত্রিক ইসলামি রাজনীতির পরিমণ্ডলে বড় হয়েছেন। এই গণতান্ত্রিক ইসলামি রাজনীতির মূল দর্শনই হচ্ছে গণজোয়ার তৈরি করে ক্ষমতায় আসা। অথচ ইসলাম গনজোয়ার তৈরি করে কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহনে বিশ্বাসী নয়। মামুনুল হকের ওয়াজ শুনতে পারেন। শুনে কিছুক্ষণ ঠিকঠাক বলে স্লোগান দিয়ে চিৎকার চেঁচামেছি করতে পারেন, আমলের কথা বললে তাও গ্রহণ করতে পারেন; কিন্তু তার কোন রাজনৈতিক মত-দর্শন গ্রহণ করতে যাবেন না। করলে শাপলা চত্ত্বরের ন্যায় আত্মহুতি দিতে হবে। তাঁকে আমি একজন মোটিভেশনাল স্পিকারের অধিক কিছু ভাবি না।

তাঁর ভুল আবেগের একটি সমস্যা হল, তিনি হুজুগে গণজোয়ার দেখলে খেই হারিয়ে ফেলেন। বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেন না। মনে করেন এই গণজোয়ার সমুদ্রের জোয়ারের ন্যায় সবকিছু ভাসিয়ে নিবে। অথচ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্বাহী ক্ষমতার সামনে এ হুজুগে গণজোয়ার বন্যার পানিতে ভেসে আসা খড়-কুঁটোর মতই দুর্বল। ৫ মে ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে হুজুগে গণজোয়ার দেখে মামুনুল হক প্রকাশ্যে আল্টিমেটাম দিয়ে সৈয়দ আশরাফকে বলেছিলেন, ‘আজকের রাতের পর আগামীকাল তোরা কোথায় পালাবি সে পথ খোঁজ’। হুজুগে জনতা তার কথায় ভরসা করে রাতে ওখানে অবস্থান করে জেনোসাইডের শিকার হয়েছেন।

রাজনীতি করতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-রাষ্ট্রদর্শনের চর্চা লাগে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পেরেছে, কারণ তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রদর্শন আছে। তাদের নিজেদের রাষ্ট্রচিন্তক, রাজনীতি বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী আছে। কওমি মাদরাসাগুলোতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানও পড়ানো হয় না এবং তাদের একজন রাষ্ট্রদার্শনিক-রাজনীতি বিশ্লেষকও নেই। এমনকি আলেম রাজনৈতিকরাও ন্যূনতম রাজনীতির জ্ঞান রাখেন না।

একমাত্র আবেগ ব্যতীত এদের আর কোন পুঁজি নেই। এদের আবেগ সবসময় বিপদ সীমার ঊর্ধ্বে থাকে। কাজেই বাংলাদেশের আগামী ৫০ বছরেও কোন ইসলামি দল ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখছি না। সুতরাং ইসলামি দলগুলোর কর্মীরা অথর্ব দলগুলোর পেছনে হেইয়ো হেইয়ো করে সময় ক্ষেপণ না করে বিএনপি ও আওয়ামীলীগে যোগ দিন। এতে আপনাদের ইসলাম না হলেও রাজনীতি হবে।

সুলতান মাহমুদ : সমাজচিন্ত্যক, আলেম

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply