“চিন্তাশীল পাঠক ও ভক্ত-অনুরাগীদের তিনি শুধু রহস্যের গভীরে নিক্ষেপই করেছেন, বেরিয়ে আসার পথ দেখাননি কিংবা তিনি নিজেও হয়তো বেরুতে পারেননি। তাই তার যত কঠিন কঠিন লেখা, উপন্যাস, আমার কাছে সেসব শিশুসুলভ।”
বাংলাদেশে যত ‘হিমু’ আর ‘মিসির আলী’ আছেন, যারা কিছু কমন প্রশ্নে অস্পষ্টতার দরুন গল্প-কাহিনীতে রহস্যের জট পাকান, রহস্যের জালে নিজেদের আবৃত করে ‘মহান’ হতে চান অথবা তৃপ্তিবোধ করেন, আপনারা আমার কাছে চলে আসতে পারেন। আশা করি সেই সব কমন বিষয়গুলো সুস্পষ্ট হবে। অযথা রহস্যের জট পাকানো কিংবা নিজেদের “রহস্যঘেরা জীবন” যাপনের কোনোই প্রয়োজন নেই। বরং সময়গুলো আরো উচ্চতর জ্ঞান অন্বেষণে ব্যয় করে নিজেদের মহান হিসেবে গড়ে তুলুন এবং অবাস্তব গল্প-কাহিনীর পরিবর্তে জ্ঞানান্বেষণেই তৃপ্তিবোধ করুন।
আরো পড়ুন- সাংবাদিকদের ফেবু সাংবাদিকতা
দুঃখ লাগে, হুমায়ুন আহমেদ সারা জীবন যে প্রশ্নগুলোর পেছনে ছুটেছেন অথবা প্রশ্নগুলো তাকে ছুটিয়েছে, সেসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর তার অনুসারীদের তিনি দিয়ে যেতে পারেননি। তারুণ্যের উদ্যমতা এবং চাকচিক্যময় জীবন পেরিয়ে শেষ বয়সে অসুস্থাবস্থায় যখন তিনি নিউইয়র্কের হাসপাতালে ছিলেন, তখন হয়তো একটা উত্তম সময় ও সুযোগ ছিল, সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার। কিন্তু সেটিও তিনি নষ্ট করেছেন অবাস্তব কল্প-কাহিনী ফেঁদে। তার ভাষায়, “অসুস্থতার কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে এবং অসুস্থতাকে ভুলে থাকতেই” তখন লেখালেখি করেছেন।
“দুঃখ লাগে, হুমায়ুন আহমেদ সারা জীবন যে প্রশ্নগুলোর পেছনে ছুটেছেন অথবা প্রশ্নগুলো তাকে ছুটিয়েছে, সেসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর তার অনুসারীদের তিনি দিয়ে যেতে পারেননি।”
অথচ তিনি হয়তো জানেন না, এ অসুস্থতাও কত মূল্যবান। তখন যথাসম্ভব একাকী ও নিরিবিলি সময় কাটানোর প্রয়োজন ছিল। বিশেষ প্রয়োজনে হয়তো নিজের অনুভব-অনুভূতি, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং সেসব প্রশ্নের উত্তরে কলম ধরতে পারতেন।
সম্পাদকের মিনি কলাম
হুমায়ুন আহমেদের লেখার ভাষা অত্যন্ত সহজ সরল। স্বতন্ত্রতা স্পষ্ট। প্রচলিত অর্থে ‘সৃষ্টিশীলতা’ বলতে যা বোঝায় তা অনেকটাই আছে বলা যায়। কিছু কিছু অসম্ভব প্রশ্নও তুলেছেন। আর কিছু কিছু বিষয়ে আপোষহীন ছিলেন, থেকেছেন। এসব অস্বীকারের উপায় নেই। বিশেষ করে জীবন ও জগতের কিছু গভীর প্রশ্ন তাকে সারা জীবন ভাবিয়েছে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি ভেবেছেন। হয়তো একারণেই তার লেখা আরো বেশি ভিন্ন এবং ‘সৃষ্টিশীল’।
তবে এটাও স্বীকার করতেই হবে- তার চিন্তাশীল পাঠক ও ভক্ত-অনুরাগীদের তিনি শুধু রহস্যের গভীরে নিক্ষেপই করেছেন, বেরিয়ে আসার পথ দেখাননি কিংবা তিনি নিজেও হয়তো বেরুতে পারেননি। তাই তার যত কঠিন কঠিন লেখা, উপন্যাস, আমার কাছে সেসব শিশুসুলভ। কারণ আল্লাহর রহমতে সেসব রহস্যের জাল অনেক আগেই ভেদ করা সম্ভব হয়েছে। আর ‘চিন্তাশীল পাঠক-ভক্ত-অনুরাগীদের’ বাইরে তরুণ প্রজন্মের বিশাল একটা অংশ রয়েছে, যারা বের হবে দূরের কথা, রহস্যের ভেতরে ঢুকেইনি। কেবল ভোগ-উপভোগ-উন্মত্ততাই তাদের নিকট ‘জীবন’।
জাকির মাহদিন: সাংবাদিক ও কলাম লেখক
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]