সাধুদের জন্য হিন্দু ধর্মের চিরাচরিত ও অলঙ্ঘনীয় নিয়ম; তারা সারাজীবন বিয়ে করতে পারবে না। অবিবাহিত থাকবে। কিন্তু এলাকায় জনশ্রুতি আছে- এ সাধু ধর্মের চিরকালীন বিধি ভঙ্গ করে তার আশ্রমে আশ্রিত একজন বিধবা মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান।
নেত্রকোনা দুর্গাপুরের চন্ডিগড়ে অবস্থিত নয়নযোগী অনাথ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ গোস্বামী (নয়ন যোগী)। তার দায়িত্বে প্রায় একশোজন অসহায় শিশু, কিশোর-কিশোরি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকতেন। এদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা ও পড়ালেখার যাবতীয় খরচ সরকার নির্বাহ করে। এছাড়া বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকেও নানা অনুদান আসে এখানে। তিনি এলাকায় ‘সাধু’ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। সবাই তাকে সাধু নামেই চিনতো এবং সাধু বলেই সম্বোধন করতো।
সাধু গত ৭ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে মারা যান। এলাকার মানুষজন বলছেন, একসময় তিনি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছিলেন। সাধু থাকাবস্থায় বিয়েও করেছিলেন। সাধুর পরিবার খু্ব দরিদ্র ছিলো। ছোটবেলায় হারিয়েছিলেন বাবা-মা দুজনকেই। পরে তার খালা অনেক কষ্ট করে তাকে লালনপালন করেন। লেখাপড়া শেখান। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যখন দলে দলে হিন্দুরা গাট্টিবোঁচকা নিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছেন, সাধু তখন কিশোর। দল বেধে এ দেশ থেকে হিন্দুদের চলে যাওয়া দেখে তিনি ভিত হয়ে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে চণ্ডিগড় মসজিদে এসে কালেমা পড়ে মুসলমান হন।
শুধু নামে মুসলমানই নয়, একেবারে পাক্কা মুসল্লি সেজে বসেন। সারাক্ষণ মসজিদে থাকতেন, নামাজ, দোয়া কালাম এমনকি কুরআন শরিফও নাকি পড়তেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর আবার তিনি হিন্দু হয়ে যান। তারপর ধীরে ধীরে হয়ে যান পুরোদস্তুর একজন সাধু। চন্ডিগড় এলাকা; যেখানে সাধু জন্মেছেন আবার মৃত্যুবরণও করেছেন, সে এলাকার মানুষজন এবং যারা তাকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা এমনটাই বলছেন।
সাধুদের জন্য হিন্দু ধর্মের চিরাচরিত ও অলঙ্ঘনীয় নিয়ম; তারা সারাজীবন বিয়ে করতে পারবে না। অবিবাহিত থাকবে। কিন্তু এলাকায় জনশ্রুতি আছে- এ সাধু ধর্মের চিরকালীন বিধি ভঙ্গ করে তার আশ্রমে আশ্রিত একজন বিধবা মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে তিনি জনরোষের মুখে পড়েন। পরে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে বিধবা মহিলাকে বিয়ে করে আবার এলাকায় এসে স্থায়ী হন। এসব বিষয়ের সত্যতা জানতে সাধুর স্ত্রী নিশাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি সম্পর্কের ভিত্তিতে বিয়ে হওয়ার কথা স্বীকার করলেও সাধু মুসলমান হওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। তবে তিনি বলেন, সাধু জানার জন্য সব ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতেন। আর তিনি কাজ করতেন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য।
হিন্দুধর্মের একজন সাধু কি বিয়ে করতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, অতীতে অনেক সাধুই বিয়ে করেছেন। তাই তিনিও করেছেন। এটা দোষের কিছু নয়। এদিকে সাধু এলাকার অসহায় মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। আর এ সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে তিনি কোনো ধর্ম বাছবিচার করতেন না। যে কোনো ধর্মের মানুষকে সহযোগিতা করতেন।এলাকার মানুষ তার উপকারের কথাও বলছেন।
জুনায়েদ আহমেদ: স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, শীর্ষ তিন, সারাদেশ
[sharethis-inline-buttons]