শনিবার সকাল ৬:১৩, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

স্বাধীন বাংলাদেশের অপমৃত্যু (১৯৭১-২০১৮)

জাকির মাহদিন

আজকের ‘শিক্ষার দৌড়টা’ আমার ভালোই জানা। সম্ভবত স্বাধীন বাংলাদেশের এটাই শেষ প্রজন্ম। যারা অন্তত এখনো ‘হু-হ্যা’ করতে পারে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, সন্ধ্যা ছয়টার তিতাস এক্সপ্রেসে। তিন-চার ঘণ্টার এ ট্রেন যাত্রায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই পাশের সিটে বসে এক সুন্দরী স্মার্ট তরুণী। যদিও এদের সঙ্গে বসার তেমন একটা আগ্রহ বা ফিলিংস নেই আমার। তবু ভাবলাম, আজ তার সঙ্গে একটু আড্ডা দেয়া যাবে। এদিকে তার সঙ্গে আরো ক’জন বন্ধু আছেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, এদের একজন স্বয়ং তার স্বামী। আরেকজন সম্ভবত দেবর। এছাড়া আরো দুয়েকজন আছেন। এরা সিট পেয়েছে মাত্র একটি, যেটিতে এই সুন্দরী বসেছে।

ট্রেনে একটু ভীড়। বাকিরা সবাই দাঁড়িয়ে, তাই ওদের সঙ্গে বসে থেকে সে আড্ডা দিতে পারছে না। এজন্য সেও কথা বলার জন্য আমাকেই বেছে নিল। একদিকে ওর স্বামী-দেবররা দাঁড়িয়ে হই-হুল্লোর করছে, অন্যদিকে আমরা দুজন চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। হাই-হ্যালো পর্ব শেষ করে জানতে পারলাম তার স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাকরি করে। বাসাও নিয়েছে। মেয়েটির বাড়ি ঢাকায়, পড়াশুনাও করে ঢাকা। মাস্টার্স করছে। সম্ভবত চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে তার কিছু গবেষণাও আছে। বিশেষ করে বর্তমানে বিশেষ একটি রোগ ও এর চিকিৎসা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আমি জানালাম, আমি লেখালেখি এবং ইদানিং সাংবাদিকতা করছি।

ঘটনাটি দুবছর আগের। এখন হয়তো এই ‘হু-হ্যাঁ’ করার শক্তিটিও আর নেই। অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশের অপমৃত্যু।

এরপর এক পর্যায়ে আমাদের আড্ডা মূল পর্বে প্রবেশ করে। আমার সঙ্গে যে কেউ কথা বললে শেষ পর্যন্ত যা হয় আর কি! তার সঙ্গে তারই গবেষণার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় নিয়ে একটু গভীরভাবে কথা বলি। কিছু প্রশ্ন রাখলাম। এরপর আমার কাছে এই সুন্দরীকেও খুবই পানসে মনে হলো। কারণ এরা দলবলসহ ‘ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার চিন্তা ও স্বপ্নে বিভোর, যা দশ বছর আগেই আমি পায়ে দলে এসেছি।

আরো জানতে চেয়েছিলাম, সামাজিক-মানবিক-সামগ্রিক কোনো চিন্তা-চেতনা তাদের মধ্যে কাজ করে কি না। উত্তর আশানুরূপ নয়। তিনি বিশেষ যে ‘রোগটি’ নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন, সে সম্পর্কে আমি কিছু বলায় মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, ‘হু-হ্যা’ করেছেন। কতটুকু বুঝেছেন আল্লাহ-মালুম।

অবাক হইনি। কারণ এর আগেও অনেক উচ্চশিক্ষিত সুন্দরী-অসুন্দরীর সঙ্গে একান্তভাবে আলাপ করার ‘সৌভাগ্য’ হয়েছে। ফলাফল একই। আজকের ‘শিক্ষার দৌড়টা’ আমার ভালোই জানা। সম্ভবত স্বাধীন বাংলাদেশের এটাই শেষ প্রজন্ম। যারা অন্তত এখনো ‘হু-হ্যা’ করতে পারে।

বিঃ দ্রঃ, ঘটনাটি দুবছর আগের। এখন হয়তো এই ‘হু-হ্যাঁ’ করার শক্তিটিও আর নেই। অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশের অপমৃত্যু।

পুনশ্চ : কাউকে ছোট করা এখানে উদ্দেশ্য নয়। তবে সমস্যাগুলো বলাবলির বাইরে থাকা আরো বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

 

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply