বাঙালিরা নিজেদের মধ্যেই সবসময় হিংসা ও হানাহানি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও তারা ছোটখাটো চুরিদারির সাথেও লিপ্ত হয়ে পড়ে ও তাদের চিন্তাধারায় ভেজাল থাকে বেশি। তাদের কর্মস্থলে বস যখন কোনো নিদের্শ দেন, তখন ফাঁকিবাজি করার চেষ্টা করেিএবং কোনো সুযোগকে কাজে লগিয়ে অসৎ পথে লাভবান হতে চায়।
বর্তমানে সৌদি আরবের প্রবাসীরা যখন কর্সংস্থানের অভাবে রীতিমতো দিশেহারা, ঠিক তখনই বাংলাদেশের সুমন একটি ওয়েবসাইটে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন, বিজ্ঞাপনদাতার সাথে। সুমন চাকরি করতে আগ্রহী- এ কথা জানানোর পর ওপাশ থেকে সুমনকে সরাসরি বলে দিলো ‘বাঙালি মাফি কুইস’!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজী মুহিবুল হাসান কাজ করতেন একটি আধা সরকারি অফিসে। সেখানে তার কলিগদের সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়েই কথা হতো তার। একদিন প্রসঙ্গক্রমে মুহিবুল হাসানকে তার এক কলিগ বললো, তুমি ব্যক্তিবিশেষ হয়তো ভালো কিন্তু ‘বাঙালি মাফি কুইস’। এর কয়দিন পর এই অফিস থেকে মুহিবুলের চাকরি চলে যায়।
সৌদি আরবের জেদ্দার কর্নিচ এলাকার সাগরপাড়ে লেখকের দেখা হয়েছিল চাঁদপুরের শফিক ও ভারতীয় এক নাগরিকের সাথে। তারা দুজন বসে গল্প করছিলেন। প্রসঙ্গ আসতেই জানা গেলো, তারা দুজনই পাশাপাশি দুই বাড়িতে হাউস ড্রাইভারের চাকরি করেন। এখানে একই পদে একই চাকরি করলেও ভারতীয় লোকটি বেতন পান ২০০০ রিয়াল আর শফিক বাংলাদেশি হওয়ার কারণে তার বেতন ১৫০০ রিয়াল। ‘বাঙালি মাফি কুইস’ আরবি এই কথাটির অর্থ হলো বাঙালি ভালো না।
সৌদিতে কাজের জন্য কোথাও যোগাযোগ করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কথাটি শোনা যায়। এছাড়াও নানান ধরনের কাজের মধ্যে বাঙালিরা কোনো উন্নত মানের কাজ পান না বা দেওয়া হয় না।
ধরা যাক, কোনো হাসপাতালে অনেক ধরনের কাজ আছে, তাহলে সেখানে বাঙালিকে কোনো উন্নত মানের কাজ না দিয়ে তাকে দেওয়া হবে সবচেয়ে নিচের কাজটি, যেমন ‘ক্লিনার’। কিন্তু কম্পিউটারের কাজসহ আরো যত ভালো কাজ আছে সেইসব কাজ করে থাকে ফিলিপিনো, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা। তবে এক্ষেত্রে ফিলিপিনোদের কদর সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। কারণ তারা শিক্ষিত ও পরিশ্রমী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।
বাঙালিদের প্রতি এমন নেতিবাচক মনোভাব কেন সৌদিয়ানদের? এই প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন এক প্রবীণ বাঙালি প্রবাসী। দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবাসে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হানিফ জানান, এখানে প্রবাসী বাঙালিদের বড় একটা অংশ মূলত সংকীর্ণ মানসিকতা পোষণ করে। এর প্রধান কারণ, সুশিক্ষার অভাব। এখানে যারা দেশ থেকে আসেন তাদের বড় একটা অংশ প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হননি। অনেকে তার নিজের নামটিও লিখতে পারে না।
বাঙালিরা নিজেদের মধ্যেই সবসময় হিংসা ও হানাহানি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও তারা ছোটখাটো চুরিদারির সাথেও লিপ্ত হয়ে পড়ে ও তাদের চিন্তাধারায় ভেজাল থাকে বেশি। তাদের কর্মস্থলে বস যখন কোনো নিদের্শ দেন, তখন ফাঁকিবাজি করার চেষ্টা করেিএবং কোনো সুযোগকে কাজে লগিয়ে অসৎ পথে লাভবান হতে চায়। এসব ব্যাপার প্রথম প্রথম সৌদিয়ানরা না বুঝলেও এখন প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে তারা বুঝে গেছেন যে, ‘বাঙালি মাফি কুইস’।
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]