শুক্রবার দুপুর ১২:৩৮, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

সুন্দরীর মানদণ্ড কী?

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

“আমরা আধুনিক সুন্দরী মেয়ে বলতে বুঝি সেজে-গুজে থাকা, হাইহিল পরা ললনা। যে ঢং করতে জানবে, মেকআপের আস্তরণ এ সবসময় নিজেকে ঢেকে রাখবে, দুনিয়া সম্পর্কে তার কোনো ধারণা থাকবে না ইত্যাদি। যদি থাকে তাহলে এই মেয়ে দিয়ে সংসার হবে না- এমন কথা আজো শুনতে হয়।”

বাংলাদেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের একটা কথা বলি, এর থেকে বেশি ভালো এই দেশে আশা করেন কী করে?  ব্যক্তিগতভাবে যদিও আমি এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার ঘোর বিরোধী। কারণ আমার কাছে পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই সুন্দর। সৃষ্টিকর্তা তার সমস্ত সৃষ্টিই বড় যত্ন করে অসাধারণভাবেই তৈরি করেছেন। আর মানুষ তো তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তা তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন।

আরো পড়ুন> নির্ভেজাল সুন্দর মানুষগুলো

তার নারী সৃষ্টি নিয়ে কে কী বলবেন জানি না। কিন্তু আমার কাছে, আমি একজন নারী হিসেবে জন্ম নেওয়ায় গর্বিত বোধ করি। একজন নারী, যে কি না একজন মানুষকে জন্ম দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। তার প্রতি আমাদের এই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কী রকম? আমাদের এই সমাজ নারীর সৌন্দর্য বলতে কী বোঝে? আমাদের সমাজ একজন নারীর মাঝে শুধু নারিত্ব খোঁজে। কিন্তু তার মনুষ্যত্ব আর ব‍্যক্তিত্ববোধকে মেনে নিতে তারা নারাজ। নারী মানে তাদের কাছে ভারী মেকআপে সাজুগুজু করা একটা বস্তু। কারণ ওটাই তাদের রসালো আলাপের বড় জায়গা। একজন মেয়ে ভালো ছাত্রী হবে, কিন্তু পাঠ‍্য বইয়ের বাইরে তার জ্ঞান থাকতে পারবে না। তাহলে সে অতিরিক্ত বোঝে!

“একজন নারী, যে কি না একজন মানুষকে জন্ম দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। তার প্রতি আমাদের এই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কী রকম? আমাদের এই সমাজ নারীর সৌন্দর্য বলতে কী বোঝে?”

একজন মেয়ে বলতে তার আলোচনার বিষয় থাকতে হবে তার পোশাক নিয়ে, তার সাজের অনুষঙ্গ নিয়ে, তার বিয়ে নিয়ে। কিন্তু সমাজ সম্পর্কে, দেশ সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান থাকবে অথবা মতামত থাকবে- এটা এই সমাজ আশা করে না। তাই হয়তো দুই জন নারী দেশ শাসন করার পরও আজো পার্লামেন্টে নারী কোটা রাখতে হয়। আমাদের সমাজ আজো চোখ বুঁজে একটা মেয়েকে খারাপ বলে দিতে পারে, সত্য-মিথ্যে যাচায়ের প্রয়োজন পরে না। দশটা লাঠি ঠেকানো যাবে, কিন্তু একটা মুখ ঠেকানো যাবে না- এই কথাটা আজো শুনতে হয় মেয়ের বাবা-মাকে।

লেখকের সব লেখা

আমরা আধুনিক সুন্দরী মেয়ে বলতে বুঝি সেজে-গুজে থাকা, হাইহিল পরা ললনা। যে ঢং করতে জানবে, মেকআপের আস্তরণ এ সবসময় নিজেকে ঢেকে রাখবে, দুনিয়া সম্পর্কে তার কোনো ধারণা থাকবে না ইত্যাদি। যদি থাকে তাহলে এই মেয়ে দিয়ে সংসার হবে না- এমন কথা আজো শুনতে হয়।

জ্ঞান যে মানুষের সৌন্দর্যেরর সবচেয়ে বড় দিক, তা নারীর ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ মানতে রাজি নয়। তাই আমাদের দেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় একজন নারীর মেকআপ আর গেটআপে যতটা দৃষ্টি দেওয়া হয়, ততটা তার মেধা যাচাইয়ে দেওয়া হয় না। তাই আমাদের এই সমাজের মানুষের উচিত, আগে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। তাহলে দেখবেন সবকিছুই সঠিকভাবে চলছে।

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি: শিক্ষার্থী

ক্যাটাগরি: নারী,  পাঠকের মত,  মিনি কলাম

ট্যাগ: জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply