শুক্রবার ভোর ৫:৪৫, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

সাংবাদিক নির্যাতন: দায়ী কারা?

জুনায়েদ আহমেদ

আজকে আরিফ নির্যাতিত হয়েছে, আগামীকাল আমার কিংবা আপনার পালা। অতএব সময় থাকতে দালালীপনা ছেড়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। প্রকৃত সাংবাদিকতা শিখুন ও চর্চা করুন।

সম্প্রতি কুড়িগ্রামে মহিলা জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নিউজ করায় ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদ্যস্যদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নামে রাতের আঁধারে দরজা ভেঙ্গে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ডিসির অফিসে বেধড়ক নির্যাতন এবং তার কাছে মাদক পাওয়া গিয়েছে বলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে রাতারাতি এক বছর সাজা দেওয়ার খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। নির্যাতিত সাংবাদিকের নাম আরিফুল ইসলাম। সে বাংলাট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতো।

এ ঘটনা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ-মিছিল, প্রতিবাদ করছে। প্রতিবাদে তারা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টান্তমূল শাস্তির দাবি করছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

নির্যাতিত সাংবাদিকের পাশে অন্যান্য সাংবাদিকরা দাঁড়িয়েছেন, প্রতিবাদ করছেন-  এটা খুব ইতিবাচক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই মহিলা জেলা প্রশাসক একজন সাংবাদিককে ম্যাজিস্ট্রেট, আনসার বাহিনী দিয়ে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার মত ‘সৎ সাহস’ কোত্থেকে পেলেন? কীভাবে পেলেন? এই পর্যন্ত যেতে কারা উৎসাহ যুগিয়েছে?এ বিষয়গুলো আমাদের খোঁজা দরকার।

আরো পড়ুন> করোনা নয়, এ যেন করুণা

বিষয়গুলো খুঁজতে গিয়ে আমরা যা দেখতে পাই- একজন সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার মত ‘সৎ সাহসে’ পৌঁছতে সহযোগিতা করেছে সাংবাদিক নামেরই কতিপয় ‘দালাল’ সাংবাদিক। অর্থাৎ যারা এখন আন্দোলনে নেমেছেন, কথার খই ফোটাচ্ছেন, এই করবেন সেই করবেন বলে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন- তারাই এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে এদের অন্যায়, অপকর্মের খবর চেপে রেখে এই পর্যন্ত আসতে সহযোগিতা করেছেন।

একজন সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার মত ‘সৎ সাহসে’ পৌঁছতে সহযোগিতা করেছে সাংবাদিক নামেরই কতিপয় ‘দালাল’ সাংবাদিক।

এরাই সাংবাদিককে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো যায়, এটা একটা মামুলি ব্যাপার, তাতে কিচ্ছু হয় না, সরকারি আমলাদের এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী করে তুলেছেন। সাংবাদিকেদের বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য এই দালালরাই দায়ী।

সাংবাদিক নির্যাতন- এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। আগেও অনেক সাংবাদিককে নির্যাতন করা হয়েছে, এখনো নির্যাতন করা হচ্ছে। আন্দোলন,  প্রতিবাদও হচ্ছে। কই, নির্যাতন তো বন্ধ হচ্ছে না? বরং আগের তুলনায় দিন দিন আরো বেড়েছে। সাংবাদিকরা যতদিন পর্যন্ত এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ আমলাদের দালালী না ছাড়বে, সমাজে এদের প্রকৃত রূপটা তুলে না ধরবে, ততদিন পর্যন্ত সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে বলে মনে হয় না।

মনে রাখবেন, আজকে আরিফ নির্যাতিত হয়েছে, আগামীকাল আমার কিংবা আপনার পালা। অতএব সময় থাকতে দালালীপনা ছেড়ে সবাই  ঐক্যবদ্ধ হোন। প্রকৃত সাংবাদিকতা শিখুন ও চর্চা করুন। তারপর তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে তুলুন।  সাংবাদিকদের হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করুন।

জুনায়েদ আহমেদ: সংবাদকর্মী

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: জুনায়েদ আহমেদ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply