শিশু স্বভাবতই কর্মী, তবে শ্রোতা হতে কষ্ট বোধ করে। ধৈর্য তাদের অনেকাংশে কম থাকে। কর্মচঞ্চলতাই তাদের স্বাভাবিক ধর্ম। ওরা কেবল চাপমুক্ত হয়ে নির্মল সারল্যে বেড়ে উঠতে চায়।
একটি শিশুকে অনেক ভালো শিক্ষা দিচ্ছি ঠিক, কিন্তু ভালো মানুষ হিসেবে শিশুর সেই নৈতিকতা তৈরি করে দিতে হয় শৈশবেই। বিনয়ী হয়ে বড় হবে, তাই শিশুশিক্ষা। লেখা আর পড়া নয় বরং অন্তর মূল্যবোধের আগ্রহ ও চর্চা করেই শিক্ষার সূচনা করবে। অন্তর্জগতে আলো ছড়িয়ে ভালো হয়ে সমাজকে স্বমহিমায় আলোকিত করবে। তাই প্রাক-প্রাথমিকে ক্লাসরুমের কারিকুলাম থাকবে। কিন্তু কোন কাজ কীভাবে দিলে শিশুর বিকাশ ঘটবে, সেটা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।
কোমলমতী শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। শৈশবের সময়টাই প্রাণোচ্ছলতা কিংবা আরামের মুহূর্ত। আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রমাণ আছে যে, তিন থেকে ছয় বছর বয়সী কোনো শিশু কোনো ধরনের শিক্ষাসম্পর্কিত প্রাতিষ্ঠানিক চর্চায় যদি না যায়, তাহলেও পরবর্তী পরীক্ষায় বিন্দুমাত্র সমস্যা হয় না। যে বয়সে লেখাপড়া শেখানোর জন্য, প্রথম-দ্বিতীয় করার জন্য পাগল হয়ে পাঠশালায় পাঠানো হয় ,তা তার পক্ষে পড়ালেখা কতোটা সম্ভব? তা অভিভাবক মোটেই ভেবে দেখে না। এ বয়সটা তাদের খেলার। এ সময় শিশুমনে কল্পনার জগৎ তৈরি করতে হয়। শিশু তার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে জ্ঞান লাভ করে কেবল তার কান দুটি দ্বারা শুনে। তাই শিক্ষায় সমস্ত ইন্দ্রিয়কে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
শিশু স্বভাবতই কর্মী, তবে শ্রোতা হতে কষ্ট বোধ করে। ধৈর্য তাদের অনেকাংশে কম থাকে। কর্মচঞ্চলতাই তাদের স্বাভাবিক ধর্ম। ওরা কেবল চাপমুক্ত হয়ে নির্মল সারল্যে বেড়ে উঠতে চায়। শিশুদের বিনোদনের জন্য একেবারেই শৈশব থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খেলার ব্যবস্থা করলে মনোদৈহিক বিকাশ ভাল হয়। শিশুর বিকাশের পাঁচটি দিক আছে—দৈহিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, আবেগীয় বিকাশ, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ। প্রাক-প্রাথমিকে ক্লাসরুমের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে নিজে করে নিজেই শেখে। শিশুশিক্ষার মানে পাঠে আগ্রহ সৃষ্টি করা। বইপাঠে তাদের আনন্দ আসবে, মানসিক পরিবর্তন ঘটবে। তাই ভালো লাগা, মন্দ লাগা এবং রুচিশীলতা বৃদ্ধি করার সঙ্গে বুদ্ধির প্রবণতাকেই কর্মমুখী শিক্ষায় জীবন গড়ানো প্রয়োজন।
কোমলমতী শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। শৈশবের সময়টাই প্রাণোচ্ছলতা কিংবা আরামের মুহূর্ত। আন্তর্জাতিক গবেষণায় প্রমাণ আছে যে, তিন থেকে ছয় বছর বয়সী কোনো শিশু কোনো ধরনের শিক্ষাসম্পর্কিত প্রাতিষ্ঠানিক চর্চায় যদি না যায়, তাহলেও পরবর্তী পরীক্ষায় বিন্দুমাত্র সমস্যা হয় না।
সুদক্ষ প্রজন্ম পেতে হলে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজন। এতে ওরা সৃজনশীল মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠে। স্কুলের ব্যাপারটা হবে কল্পনার আনন্দে শেখা। উদ্বেগের কথা হল, প্রযুক্তির এ যুগে আমাদের অজান্তেই মায়া মমতা প্রেম আর ভালোবাসাহীন একটা প্রজন্ম চরম নিষ্ঠুরতাকে উপভোগ করতে করতে বিকশিত হচ্ছে, আমরা মোটেই টের পাচ্ছি না। ব্যস্ত জীবন নিয়ে কাটে বর্তমান সময়। শিশুবয়সে অতিরিক্ত পড়ালেখার চাপে আড়ষ্ট। কোমলমতি শিশুদের মানসিক উৎকর্ষ সাধনের সকল প্রক্রিয়াকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যাবতীয় মানবিকতার চর্চা থেকে সরিয়ে আমরা আমাদের শিশুদের নৃশংসতা এবং নিষ্ঠুরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
সবাইকে মেরে কেটে বেরিয়ে যাওয়ার বা এগিয়ে যাবার অত্মকেন্দ্রিক শিক্ষা নিচ্ছে। পরপোকারী, মমতা কিংবা পরমত সহিষ্ণু ভালোবাসার শিক্ষা পায় না। এককভাবে এগিয়ে যেতে শেখে। ফলে স্বার্থপর হয়ে সমাজে বেড়ে ওঠে। মুলতঃ সমাজে আক্ষরিক অর্থে এক শ্রেণির মূল্যবোধহীন জ্ঞানপাপী সৃষ্টি হয়। ভালো একটি জাতি তৈরির জন্য সৎ মানুষ খুবই প্রয়োজন। ভালো ফলাফলের চেয়ে ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে এবং শিশুদের মানসিক বিকাশে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করলে সুন্দর মননে গড়ে তুলবে আগামী প্রজন্মকে। এই অবেলায় তারই পথ চেয়ে বসে আছি।
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা : কবি ও শিক্ষিকা
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]