“আমাদের সমাজে নারীর প্রতি প্রত্যেকটি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি- একেকটা ধর্ষক তৈরির একেকটা পদক্ষেপ। একজন নারী যে একজন মানুষ- এ কথা তো ছেলেদের শেখাই না। এমনকি ছেলেটিকেও পুরুষত্বের গর্বে এতো গর্বিত করি যে- সেও যে একজন মানুষ- এটাও মনে করাই না।”
পরিশ্রমী এবং দায়িত্ববোধ ও চিন্তাসম্পন্ন মানুষ কখনো ধর্ষক হয় না। বিশেষত অলস মস্তিষ্কের, দায়সারা বেঁচে থাকার জন্য কাজ করা মানুষগুলোর মধ্য থেকেই ধর্ষকের জন্ম হয়। এদের মধ্যে কাজ করে হতাশা, যা এদের কে অনেক সময় বিকৃত রুচির দিকে নিয়ে যায়। যার পরিণতিতে একসময় তৈরি হয় ধর্ষক। তাই একজন মেয়ে হয়ে আমি মনে করি শুধু শাস্তি নয়, সামাজিক ভাবেও এদের ঠেকাতে হবে। এই যে ধর্ষক, সে কি একদিনে ধর্ষক হয়েছে? না, তার জন্ম ধর্ষক হিসেবে নয়; মানুষ হিসেবে হয়েছিল। তারপর জন্ম থেকে বেড়ে উঠার এই সময়কালের মধ্যেই সে তৈরি হয়েছে ধর্ষক হিসেবে।
আরো পড়ুন> আগে নিজেদের মানসিকতার উন্নয়ন করুন
আমাদের সমাজে নিচু থেকে উঁচুশ্রেণি- সব জায়গায় কিন্তু ধর্ষক আছে। কারণ এটা একটা মানসিক বিকাগ্রস্ততা, এক কথায় বিকৃত মানসিক রোগ। সত্যি বলতে ধর্ষক তৈরি করি আমরা, বিশেষ করে নারীর প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। আমরা মেয়ে সন্তানের পায়ে যত নিয়মের বেড়ি দেই, তার একভাগও ছেলে সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেই না। আজও আমাদের দেশে ঘরের বউ পেটানোকে পুরুষত্বের গর্ব মনে করে। আর এগুলোকে জায়েজ করতে ধর্মকে অজুহাত করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধর্ম একদম এই নীতির বিপরীত। তাই আপনি যদি ভুলটা ধরিয়ে দেন, তখন বলবে ধর্ম নয়, এটাই সামাজিক রীতি।
“নিম্নশ্রেণি ও অতি উচ্চশ্রেণির মানুষের মধ্যে ধর্ষকপ্রবণতা বেশি। কারণ এরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, সুশিক্ষাহীন, হতাশায় ভোগে। এদের বিনোদনের মাধ্যমগুলোই কিন্তু কুরুচিপূর্ণ। এদের কাছে মাদকসহ যে কোনো অবৈধপণ্য সহজলভ্য, যা এদের জানোয়ারে পরিণত করে। তাই শুধুমাত্র শাস্তি দিয়ে এই ধর্ষণপ্রবনণতা ঠেকানো সম্ভব নয়।”
আমরা রাজপথের ধর্ষণগুলো দেখতে পাই, কিন্তু সমাজের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত যে কতো নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তার খোঁজ কতটুকু জানি? এই যে আমি নারী, আজ প্রতিবাদে সোচ্চার, সেই আমি তো ছেলে সন্তান এর মা। আমি আমার ছেলে সন্তানকে কী শেখাচ্ছি? আমরা যদি লক্ষ্য করি, ধর্ষক কিন্তু পরিবার থেকেই গড়ে উঠে। প্রত্যেকটি ধর্ষকের পরিবারের যদি খোঁজ নেই, দেখতে পারব এই ধর্ষকটি তার পারিবারিক পরিমণ্ডলে “নারী শুধু ভোগ্যবস্তু”- এই শিক্ষাটা নিয়েই বড় হয়েছে। সে প্রথমে তার মা-বোনকে অমর্যাদা করতে শিখেছে। তারপর সামাজিকভাবে তার চারপাশের নারীদের অশ্রদ্ধা করতে শিখেছে। তার চারপাশের পরিবেশটাই এমন যে, সেখানে একজন নারী তার কাছে শরীরসর্বস্ব জীব, যাকে শুধু ভোগ করা যায়।
লেখকের সব কলাম
আমাদের সমাজে নারীর প্রতি প্রত্যেকটি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি- একেকটা ধর্ষক তৈরির একেকটা পদক্ষেপ। একজন নারী যে একজন মানুষ- এ কথা তো ছেলেদের শেখাই না। এমনকি ছেলেটিকেও পুরুষত্বের গর্বে এতো গর্বিত করি যে- সেও যে একজন মানুষ- এটাও মনে করাই না। পুরুষলিঙ্গের পরিচয় আর মানুষ অস্তিত্বের পরিচয় এই শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমটাই আমাদের সমাজের সর্বস্তরে গড়ে তুলতে পারিনি।
নিম্নশ্রেণি ও অতি উচ্চশ্রেণির মানুষের মধ্যে ধর্ষকপ্রবণতা বেশি। কারণ এরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, সুশিক্ষাহীন, হতাশায় ভোগে। এদের বিনোদনের মাধ্যমগুলোই কিন্তু কুরুচিপূর্ণ। এদের কাছে মাদকসহ যে কোনো অবৈধপণ্য সহজলভ্য, যা এদের জানোয়ারে পরিণত করে। তাই শুধুমাত্র শাস্তি দিয়ে এই ধর্ষণপ্রবনণতা ঠেকানো সম্ভব নয়। তার সাথে সাথে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, পারিবারিক শিক্ষা ও কাঠামো আর স্বচ্ছ সুন্দর সামাজিক নৈতিকতাপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে হবে। আর একটা কথা, সমাজের সবার মনে রাখা উচিত, নারীর অবমাননা সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়- এটা শুধু বলার জন্য বলা নয় বরং ইতিহাসে প্রমাণিত।
জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি : কলামিস্ট
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]