ভিসি-প্রক্টররা শিক্ষার্থীদেরকে ‘মাল’ মনে করেন। তাই শাটলে মালবাহী বগিও ঢুকিয়ে দেন। এরকম হরহামেশা ঘটলেও রেলওয়েকে কিছু বলেন না তারা। তাদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই। অথচ শাটলের জন্য প্রতিবছর যাতায়াত ভাড়া হিসেবে প্রতিটা স্টুডেন্ট থেকে হাজারেরও উপরে টাকা নেয়া হয়।
ষোলশহরে শাটলের নিচে পড়ে চাকার সাথে গড়াতে গড়াতে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছিল এক বাপের এক ছেলের। সে ঘটনা এখনকার চবি স্টুডেন্টদের জানার কথা না। ২০০৯ বা ১০ দিকে হয়ত এক্সেটলি মনে পড়তেছে না। আমরা তখন ভার্সিটিতে নবীন। ষোলশহরের ওপরের ব্রিজ থেকে ট্রেনের ছাদে লাফ দিবে সে। কিন্তু লাফ দিতে গিয়ে পড়ল দুই বগির মাঝখানে। তখন ট্রেন মাত্র চলা শুরু করছে। যার কারণে থামাতে সময় লাগছিল। আর এদিকে ছেলেটার শরীর গুড়িয়ে মুচড়িয়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে একাকার অবস্থা।
কী লোমহর্ষক ব্যাপার না? গালি দিতে ইচ্ছা করতেছে? কেন উপর থেকে লাফ দিতে গেল সে? কেন বা রবিউল ছেলেটা বেখবর হয়ে ট্রেন থামার আগমুহূর্তে পার হতে গেল রেল লাইন? হ্যা, আমরাও ছেলেটাকে গালাগালি করছিলাম। তার জন্য ছাদে চড়ার কথা বাসাতে বলতেই পারতাম না। বাসাতেও ট্রেনে চড়ার সতর্কতা নিয়ে প্যানপ্যান করত আম্মা। কিন্তু বাস্তবতা আসলে কী? কেন ছেলেরা ছাদে চড়ার জন্য ভিড় জমায়, কলা কৌশল করে? ট্রেন প্ল্যাটফর্মে থামার আগেই কেন ছেলেমেয়েরা হুড়োহুড়ি শুরু করে দেয়? কেন দরজা বা ইঞ্জিনের সাথে বসে-ঝুলে থাকে? কেন সিট ধরাধরি নিয়ে মারামারি হয়, যেটা অনেক সময় কোপাকুপিতেও গড়ায়?
এসব প্রশ্নের উত্তর আশা করি সবার অজানা নয় অজানা নয় ভিসি-প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সিন্ডিকেট মেম্বার, শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষকদের। তারা প্রতি বছর বাজেট থেকে ঠিকই নিজেদের স্বার্থটুকু আদায় করে নেয়। তাদের ঝুলিতে যুক্ত হয় রুমে এসি ও এসি বাস। তবে এসব বাস্তবতা কত বীভৎস, সেটা তাদের জানার কথা নয়। কারণ প্রচণ্ড গরমে উনুনের মত বগির ভেতরে ৫০ জনের জায়গায় ২০০-৩০০ শিক্ষার্থী যখন ঘামে দুর্গন্ধে যাতায়াত করে, সেটা তাদের করতে হয় না। যারা হলে থেকে ডালের পানি আর ছাড়পোকার কামড় খেয়ে মাস্টার হয়েছে তারা তো আরও বুঝার কথা না।
এ পর্যন্ত ৩ জন ভিসি পেলাম ক্যাম্পাসে থাকাকালীন। কাউকে দেখলাম না, প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রী বা রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে নিজে গিয়ে কথা বলতে, সমস্যা সমাধান নিয়ে প্রেসার দিতে বা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে। কিন্তু একজন পূর্ণমন্ত্রীর চেয়ে সুযোগ সুবিধা ভোগে কম যান না তারা। কিন্তু শুধু ভুলে যান শিক্ষার্থীদের কথা।
ভুলে তো যাবেনই। শিক্ষার্থীদের তো তারা মালই মনে করেন। মনে করেন বলেই শাটলে মালবাহী বগিও ঢুকিয়ে দেন। এরকম হরহামেশা ঘটলেও রেলওয়েকে কিছু বলেন না তারা। তাদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই। অথচ শাটলের জন্য প্রতিবছর যাতায়াত ভাড়া হিসেবে প্রতিটা স্টুডেন্ট থেকে হাজারেরও উপরে টাকা নেয়া হয়। এত দুর্ঘটনা ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে এ প্রশ্ন কি অমূলক যে, এই বিপুল পরিমান টাকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে কোন বিশেষ কারচুপি আছে?
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]