যার হাতে ক্ষমতা থাকে তার লোকলজ্জা থাকা খুবই জরুরি। গুপ্ত অঙ্গ তার যত নিখুঁত আবরণী দিয়েই ঢাকা থাক, কোনো কাজে আসবে না। পোশাকহীন চক্ষুলজ্জাধারী মানুষকে সহ্য করা গেলেও, পোশাক পরা চক্ষুলজ্জাহীন বেহায়া মানুষগুলো একেবারেই অসহ্য। এদেশের মাটি এক সময় ধুসর ছিল, এদের কারণে এখন সেটা তামার রঙ ধারণ করেছে।
চোখের পর্দা না থাকাটা এক ধরনের ইচ্ছা-অন্ধত্ব। মানুষের লজ্জা দুই রকমের। এক. গুপ্ত অঙ্গ বিষয়ক লজ্জা, দুই. লোকলজ্জা বা চক্ষুলজ্জা। লজ্জাস্থান ঢাকার সুশিক্ষা ও তাড়না মানুষ পেয়েছে সৃষ্টিগত ও প্রাকৃতিকভাবেই। এবং মানুষের জন্য এটাই যথার্থ। এর ফলে মানুষের শিক্ষা, সভ্যতা ও রুচির প্রমাণ পাওয়া যায়। এর ফলে অন্যান্য পশু-প্রাণী থেকে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বে আর কোনো সন্দেহ থাকে না। এর ফলে যৌন জীবনেও একটা শৃঙ্খলা ও সর্বোন্নত সংস্কৃতি মানুষ পেয়েছে। এর ফলেই মানুষ নিজেকে শুধু সভ্য নয়, সুসভ্য ও সুশিক্ষিত দাবি করার বলতে যোগ্যতা লাভ করেছে।
লজ্জা নিবারণের এই সুশিক্ষা ও সুস্থ মানসিক তাড়না মানুষের সমাজে বেশ শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত। কোনো কোনো সময় বা অধিকাংশ সময় কিছু মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ লজ্জাস্থান ঢাকার বিরোধিতা করলেও এটা কখনোই কারো পক্ষে উল্টানো সম্ভব নয়। এর পর যে লজ্জাটি মানবসমাজে গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে লোকলজ্জা বা চক্ষুলজ্জা। এটা হচ্ছে বিবেক। কখনো কখনো ইগোও হতে পারে। যা গড়ে উঠে মানুষ কী বলবে, কী ভাববে ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে।
তা যাই হোক, এ সুশিক্ষা ও সুস্থ মানসিক তাড়না থাকার ফলে সমাজে মানুষ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। লোকে কী বলবে এই ভেবে সে নিজেকে সংযত করে। তবে লোক লজ্জারও বহু রূপ আছে, যা দেখে সেটাকে অনেকের চক্ষুলজ্জা বলে ভুল হতে পারে। এ ব্যাপারে অনেক আগের পুরোনো একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ছোট বেলার কথা, আমাদের পাশের গ্রামে হঠাৎ করেইএকজন অদ্ভুত মানুষের আগমন ঘটে। যে তার গুপ্ত অঙ্গকে গোপন রাখার কোন তাড়া বোধ করতো না। দিগম্বর হয়ে চলাফেরা করতো৷ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হবার কারণে সে এটা করতো।
প্রথম লজ্জাটা না থাকলেও তার দ্বিতীয় লজ্জাটা ছিল টনটনে। কারো কাছে কিছুই চাইতো না সে। কারো সাথে কথাও বলতো না। নিজে নিজে বিড় বিড় করে কী যেন বলতো৷ অতি নিরীহ মানুষ ছিল সে। সম্ভবত এ কারণেই এলাকার মানুষ ধীরে ধীরে তাকে একটু একটু করে পছন্দ করতে শুরু করে। কয়েকদিন পর দিগম্বরের ছোট-খাট ‘কামালিয়াতের’ কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। জলজ্যান্ত ল্যাংটা মানুষটা হয়ে গেল লেংটা বাবা। এলাকার সব থেকে বদমাইশ প্রকৃতির লোকটা এই সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করলো। রাতারাতি নিজের ভোল পাল্টে, দাড়ি রেখে, জুব্বা-পাগড়ি পড়ে লেংটা বাবার অভিভাবক ও খাদেম বনে গেল।
তারপরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সেই ‘নেকবান খাদেমকে’। ধনে মানে অনেক বড় হয়ে গেলেন তিনি । আরো কয়েকটা টাউটকে নিয়ে ‘দরবার শরীফের’ নামে একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেটেড আত্মপ্রকাশ করে ৷ এলাকারও অনেক অগ্রগতি হলো। রাতারাতি অনেক দোকানপার্ট গজালো৷ অসহায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দিগম্বর লোকটার কর্মকাণ্ডকে ও তার নির্বিরোধী স্বভাবকে পুঁজি করে চক্ষুলজ্জাহীন দুপেয়ে সরীসৃপেরা অতঃপর ধান্দাবাজির ছাতার নিচে এসে জড়ো হয়ে বিপুল উৎসাহে দরবার শরীফে ওরস মোবারক আরম্ভ করলো।
তারপর নেককার খাদেমগন প্রচার করলেন৷ বাবা বললেন : বনের ফুল যেমন লোকের চোখের আড়ালে ফোটে, আড়ালেই ঝরে যায়; অনেক ‘মুক্তমানব’ বা ‘ওলি’ তেমনি নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন, তাদের চেনাই যায় না।
যা হোক, চক্ষুলজ্জা নিয়ে কথা হচ্ছিল, তাই নিয়েই বলি। যার হাতে ক্ষমতা থাকে তার লোকলজ্জা থাকা খুবই জরুরি। গুপ্ত অঙ্গ তার যত নিখুঁত আবরণী দিয়েই ঢাকা থাক, কোনো কাজে আসবে না। পোশাকহীন চক্ষুলজ্জাধারী মানুষকে সহ্য করা গেলেও, পোশাক পরা চক্ষুলজ্জাহীন বেহায়া মানুষগুলো একেবারেই অসহ্য। এদেশের মাটি এক সময় ধুসর ছিল, এদের কারণে এখন সেটা তামার রঙ ধারণ করেছে।
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম, সম্পাদকের বাছাই
[sharethis-inline-buttons]
Dаddy you didn?t say whɑt the best factoг about God
is. You have to play too.