প্রকল্প নির্মাণ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই পরিবেশ বিশেষজ্ঞসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমালোচনার ঝড় উঠে। এর বিরুদ্ধে কিছু আন্দোলনও হচ্ছে, বিশ্লেষকগণ যা যৌক্তিক মনে করছেন।
চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও আত্মঘাতী ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে শনিবার (১৮ আগস্ট) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কোর ক্যাচার’ বা ‘মেল্ট ট্র্যাপ’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। রিয়্যাক্টরের তলদেশে স্থাপিত এই ডিভাইসটি আধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিষ্ক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্বের সার্বাধুনিক কোর ক্যাচারের পদ্ধতি অবলম্বন করে এই বিদ্যুৎ প্রজেক্ট নিমার্ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যদিও প্রকল্প নির্মাণ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই পরিবেশ বিশেষজ্ঞসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমালোচনার ঝড় উঠে। এর বিরুদ্ধে কিছু আন্দোলনও হচ্ছে, বিশ্লেষকগণ যা যৌক্তিক মনে করছেন।
প্রকল্প নিমার্ণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল আজ থেকে ৫৭ বছর পূর্বে। রসাটমের দায়িত্বে ২০১৩ সালে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। মূল স্থাপনার কাজ শুরুর ৬৮ মাসের মধ্যেই এখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হয়। ২০১৭ সালে এই প্রজেক্টের নিমার্ণ কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করে। দীর্ঘ নয় থেকে দশমাস পর প্রথম ইউনিটের কোর ক্যাচার স্থাপন শুরু হলো।
এই প্রকল্পের মেয়াদ ৬০ বছর। যার জন্য সরকারকে রাশিয়া নিকট হতে বিশাল অঙ্কের টাকা ঋণ নিতে হয়। প্রাক্কলিত নির্মাণব্যয় ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ঋণ হিসেবে দেবে রাশিয়া, বাকি ১৫০ কোটি ডলার বাংলাদেশ ব্যয় করে। রাশিয়ার ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশ, যা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৮ বছরে বাংলাদেশকে সুদাসলে পরিশোধ করতে হবে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এক বছর রোসাটম প্ল্যান্টটি পরিচালনা করবে। প্ল্যান্টটি দু’ইউনিটে বিভক্ত। ইউনিট দুটো থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার যখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট প্রকল্প গ্রহণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০০ কোটি ডলার থেকে ৪০০ কোটি ডলার। জনমনে প্রশ্ন জাগে, কি করে এধরণের পরিকল্পক নিয়ে সরকার দেশের গুরত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ সমাধান করবে? বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন হলো, এত বিশাল অঙ্কের ঋণ সহযোগিতা রাশিয়া সরকার কেন বাংলাদেশকে সরবরাহ করছে? পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য নাকি বাংলাদেশকে বশে নেওয়ার জন্য?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী গত ৭০ বছরে সংঘটিত পারমাণবিক প্রকল্পের ভয়াবহ কয়েকটি দুর্ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের থ্রি মাইলস আইল্যান্ড, ইউক্রেনের চেরনোবিল ও জাপানের ফুকুশিমার খবর অজানা নয় আমাদের। চেরনোবিল ইউক্রেনের বিরল বসতি অঞ্চলে অবস্থিত না হতো যদি বাংলাদেশের রূপপুরে অবস্থিত, তাহলে ওই নিউক্লিয়ার মেল্টডাউনের ফলে চেরনোবিলের চারপাশের আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের নানাবিধ ক্ষতির পরিবর্তে বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে ক্ষতি হতো এর চেয়ে অনেক বেশি! পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়ে বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে রাশিয়া সরকার। তারা তাদের দেশের যে অঞ্চলে নির্মাণ করেছিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তা ছিল সমুদ্র তীরবর্তী ।
পরিবেশ বিষজ্ঞদের মতে, সে অঞ্চলের বরফ দিন কি দিন গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এছাড়া বিস্ফোরণের কারণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তাদের পরিত্যাক্ত প্রজেক্ট তাদের সহযোগিতায় নিমার্ণ করার উদ্যেগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। নিজের দেশের নয় পুরো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের পাশেই নিমার্ণ করছে পরিকল্পকরা এই প্ল্যান্ট। যে দেশের প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পড়াশুনার জন্য জনগণের কোটি কোটি খরচ হচ্ছে। তবে কী তাদের পেছনে রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য অর্থ ব্যয় না হয়ে হচ্ছে রাষ্ট্রকে ধ্বংসের পেছনে?
ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি, প্রধান খবর, সারাদেশ
[sharethis-inline-buttons]