মঙ্গলবার রাত ১১:৪৭, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

মেয়ের মা-বাবার সেবাও মেয়ের দায়িত্ব

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

“আইন যখন হবেই তখন সমান নয় কেন, উভয়ের ক্ষেত্রেই? একটা মেয়েকে যদি তার স্বামীর সাথে স্বামীর বাবা-মায়ের সেবাও বাধ্যতামূলক করতে হয়, তবে সেই মেয়েটির বাবা মায়ের প্রতিও স্বামীর একই আচরণ থাকতে হবে।”

ছেলের বাবা-মাকে সেবা করার দায়িত্ব পুত্রবধুও এড়াতে পারবে না, এর উপরে নাকি আইন আসছে। আমি নিজেও এই আইনের পক্ষে, যদিও এটা সামাজিক দায়বদ্ধতা। কিন্তু এই আইনের উপর শ্রদ্ধা রেখেই আমি আমার একটা অধিকারের দাবি জানাচ্ছি, আমার বাবা মাও আমার দায়িত্ব।

বাবা মায়ের সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব, সে ছেলেই হোক কিংবা মেয়ে। যদি ছেলের বাবা মাকে সন্মান ও সেবা করা পুত্রবধূর দায়িত্ব হয়, তবে মেয়ের বাবা মাকে সন্মান ও সেবা করা মেয়ের জামাইয়েরও দায়িত্ব। আমাদের সমাজে পুত্র ও পুত্রবধূর দ্বারা নির্যাতনের ঘটনা যতটুকু সামনে আসে, সেই তুলনায় মেয়ের বিয়ের পর মেয়ের বরের দ্বারা মেয়ের বাবা মার প্রতি দুর্ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতাগুলোর কথা ততটা সামনে আসে না। অথচ বাবা মায়ের সেবা করা শুধু ছেলের একার দায়িত্ব নয়, তার পাশাপাশি ঘরের মেয়ে সন্তানেরও দায়িত্ব। কেন বাবা মা তাঁর মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার পর তার উপার্জনের অর্থ গ্রহণ করতে পারবে না, অথবা দিলেও মেয়েকে লুকিয়ে দিতে হবে?

আরো পড়ুন> ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক আজ কোথায়?

এই উত্তর কি আমাদের রাষ্ট্রের চাওয়া উচিত নয়? আমি মনে করি অবশ্যই চাইতে হবে, আমি তো চাই। আইন যদি পুত্রবধূর উপর বর্তায় তবে তা মেয়ের স্বামীর উপর কেন নয়? আমি হলফ করে বলতে পারি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের পর একটা ছেলে তার শ্বশুরবাড়িতে যে পরিমাণ আদর ভালোবাসা, সেবা-যত্ন পায়, তাঁর এক কণাও একটা মেয়ে নিজ শ্বশুরবাড়িতে পায় না। পেলেও তা খুবই বিরল। কিন্তু তারপরও একটা মেয়েকে তাঁর স্বামীর বাবা-মায়ের অর্থাৎ শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা-যত্ন করতে হয়, সামাজিক এবং নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে।

“বাবা মায়ের সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব, সে ছেলেই হোক কিংবা মেয়ে। যদি ছেলের বাবা মাকে সন্মান ও সেবা করা পুত্রবধূর দায়িত্ব হয়, তবে মেয়ের বাবা মাকে সন্মান ও সেবা করা মেয়ের জামাইয়েরও দায়িত্ব। আমাদের সমাজে পুত্র ও পুত্রবধূর দ্বারা নির্যাতনের ঘটনা যতটুকু সামনে আসে, সেই তুলনায় মেয়ের বিয়ের পর মেয়ের বরের দ্বারা মেয়ের বাবা মার প্রতি দুর্ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতাগুলোর কথা ততটা সামনে আসে না।”

ছেলের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিও থাকতে হয় সদয়। কিন্তু একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে একটি পরিবার থেকে নিয়ে আসে, তখন কি তার দায়িত্ব নয় সেই পরিবারের মানুষগুলোর প্রতি সন্মান ও সেবামূলক আচরণ করা? একটা মেয়ে বউ হয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসার পর বাজার থেকে সেরা মাছটা কেউ এনে রেঁধে খাওয়ায় না, শশুরবাড়ির কেউ বলে না- মা, রান্নাটা ভালো লেগেছে। কিন্তু সেই আদরটা একটা ছেলে তাঁর শশুর বাড়িতে অনেক বেশি পায়।

আমাদের সমাজে জামাই আদরের যতটা ঘটা, ততোটা বউ আদরের ক্ষেত্রে হয় কি? বলতে গেলে একেবারে না। যা হোক, তর্কে যেতে চাই না। কিন্তু আইন যখন হবেই তখন সমান নয় কেন, উভয়ের ক্ষেত্রেই? একটা মেয়েকে যদি তার স্বামীর সাথে স্বামীর বাবা-মায়ের সেবাও বাধ্যতামূলক করতে হয়, তবে সেই মেয়েটির বাবা মায়ের প্রতিও স্বামীর একই আচরণ থাকতে হবে। একটি ছেলে যদি তার উপার্জনের অর্থ তার বাবা-মার জন্য খরচ করতে বাধ্য হয় তবে একটি মেয়েও বাধ্য তার উপার্জনের অর্থ তার বাবা-মায়ের প্রতি খরচ করতে। পুত্রবধূ যদি দায় না এড়াতে পারে, তবে মেয়ের বরও তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

“আমি আমার বাবা-মাকে যদি সত্যি ভালোবেসে থাকি তবে আমি অবশ্যই আরেক জনের বাবা-মাকে অশ্রদ্ধা করতে পারি না। একটি ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই শুধু নিজেদের ক্ষেত্রেই নয়, নিজেদের পরিবারের ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতা ও দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আর এই দায়বদ্ধতাগুলো আমাদের সামাজিক অবক্ষয় থেকেও রক্ষা করবে।”

কেন আজ বাবা-মায়েরা শুধু ছেলে সন্তানকে প্রশ্ন করবে, বাবা তুই আমাদের দেখবি তো? মেয়েকে কেন এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হবে না? আমি মনে করি, সকল সন্তান সে ছেলেই হোক কিংবা মেয়ে, উভয়ের ক্ষেত্রেই একই প্রশ্ন ও দায়িত্ব বর্তায়। বাবা-মায়ের দায়িত্বের চিন্তা শুধু ছেলে নয়, মেয়েকেও নিতে হবে। আমি যদি আমার স্বামীর বাবা-মায়ের অধিকারের প্রতি দায়বদ্ধ হই, তবে আমার স্বামীও আমার বাবা মায়ের প্রতি দায়বদ্ধ। আর একটি মেয়ে যখন নিজের বাবা মার দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ থাকবে, তখন সে স্বামীর বাবা-মায়ের অবস্থানটার ক্ষেত্রেও শ্রদ্ধাশীল হবে। নিজের বাবা মায়ের অবস্থান উভয়কে অন্যের বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে।

লেখকের সব লেখা

আইনের সাথে সাথে আমাদের এই সামাজিক পরিবর্তনটাও আনতে হবে। আমি আমার বাবা-মাকে যদি সত্যি ভালোবেসে থাকি তবে আমি অবশ্যই আরেক জনের বাবা-মাকে অশ্রদ্ধা করতে পারি না। একটি ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই শুধু নিজেদের ক্ষেত্রেই নয়, নিজেদের পরিবারের ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতা ও দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আর এই দায়বদ্ধতাগুলো আমাদের সামাজিক অবক্ষয় থেকেও রক্ষা করবে। আমাদের সমাজে হারিয়ে যাওয়া নৈতিকতাগুলোও আবার ফিরে আসবে। ঘৃণা, হিংসা, প্রতিশোধমূলক কার্যকলাপ থেকে আমরা অনেকটাই বেরুতে পারব বলে আশা করি।

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি : কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: নারী,  প্রধান কলাম,  সম্পাদকের বাছাই

ট্যাগ: জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply