অস্থির এক প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে মানুষ। অবিরাম ছুটে চলেছে প্রতিটি মুহূর্তে। অথচ জানে না তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। শুধু জানে- ‘টিকে’ থাকতে হলে প্রয়োজন প্রতিযোগিতা। অসম এ প্রতিযোগিতা আর প্রাচুর্যের মোহে সর্বদাই থাকে সংশয়, ভীতি ও আস্থাহীনতা। সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করছে নিজের একটি কল্পনার ধূসর দৃশ্য তৈরিতে। যেখানে তার সবকিছুই মরিচিকার মতো। ধরতে গেলে বালি ব্যতীত সে অন্যকিছু খুঁজে পায় না। যতই সে মুক্ত হতে চায়, ততই সে পরাধীনতার শেকলে আটকা পড়ে।
এসব করে নিজের অস্তিত্বকে ফেলছে হুমকির মুখে। সম্মুখে অগ্রসর হয়ে আর পিছপা হওয়ার সুযোগটিকে পর্যন্ত থাকছে না। একবার যে পথে পা বাড়িয়েছে, সে পথের পেছনে ফেরার সমস্ত দরজা বন্ধ করে একটি বৃত্তবদ্ধ জীবনে নিজেকে আবদ্ধ করে নিচ্ছে। ভুলে যাচ্ছে মানুষের অপার শক্তি ও ক্ষমতার কথা। এমনকি নিজের অস্তিত্বের কথাও!
মানুষ সমন্বিত এক অনন্য ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সে নিজেকে যে কোনো মুহূর্তে পরিবর্তনের ধারায় আনতে সক্ষম। সে সবর্দাই তার অস্তিত্বের পানে ফিরে চলে স্বেচ্ছায় কিংবা নিজের অজান্তে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সংগ্রামে নিজেকে সমর্পন করতে দ্বিধা করে না। অস্তিত্ব স্মরণ করিয়ে দেয় তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা। অস্তিত্ব তাকে নতুন করে গড়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। তাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। নতুন এক জীবনের সন্ধান দেয়, নতুন ঠিকানা গড়ার লক্ষ্যে।
আরো পড়ুন> জ্ঞান: আবেগ-বিবেকের সমন্বয়
ফিরে আসে মানুষ হিসেবে মানুষের জীবনে স্থিতিশীলতার এক মহাবার্তা। প্রকৃতি ও তার মাঝে গড়ে তুলে এক মহা মিলনের সেতুবন্ধন। মানুষ তাঁর অস্তিত্বজ্ঞানে গড়ে উঠে এক অনন্য সৃষ্টি হিসেবে। নিজেকে যেমন অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে চায় না, তেমনি অন্যের অস্তিত্ব রক্ষায়ও সে নিজেকে নিয়োজিত করে। উৎসর্গ করে নিজেকে মঙ্গল সাধনায়।
একবার যে পথে পা বাড়িয়েছে, সে পথের পেছনে ফেরার সমস্ত দরজা বন্ধ করে একটি বৃত্তবদ্ধ জীবনে নিজেকে আবদ্ধ করে নিচ্ছে। ভুলে যাচ্ছে মানুষের অপার শক্তি ও ক্ষমতার কথা। এমনকি নিজের অস্তিত্বের কথাও!
আজকের সভ্যতার উন্নয়নের যে জোয়ার আমরা দেখছি তা শুধুই বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণভাবে তা অন্তঃসারশূন্য। তাই পৃথিবী ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের পথে হেঁটে চলেছে। এমনকি মানুষ নিজেই নিজেকে অস্তিত্বসংকটে ফেলছে। আধুনিক সভ্যতার বাস্তবতা আমাদের ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলছে। বলছে- এ গ্রহে মানুষের অস্তিত্ব টিকেয়ে রাখা অসম্ভব। তাই চেষ্টা চলছে ভিনগ্রহে অনুসন্ধান, বসবাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মানুষ যখন তার অস্তিত্বজ্ঞান বর্জন করে, তখনই তাকে অস্থির হয়ে পড়তে হয়। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়।
এমনকি তার আপনালয়টি পর্যন্ত তার কাছে নিজ অস্তিত্বের জন্য হুমকীস্বরূপ মনে হয়। অথচ প্রকৃত অস্তিত্বজ্ঞান এতটাই শক্তিশালী যে তা ধ্বংসশীল ও ভঙ্গুর একটা বালিকণাকে পর্যন্ত পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে সচেষ্ট করে তোলে। তাই অস্তিত্বের এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে মানুষকে পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও বসবাসের কথা ভাবতে হবে না। পৃথিবীই হবে মানব সভ্যতার ধারক ও বাহক।
শরীফ উদ্দীন রনি: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সহযোগী সম্পাদক: দেশ দর্শন
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]