'করোনা প্রতিরোধের যেসব ব্যবস্থা এ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে, সবই কোনো না কোনো বহুজাতিক পণ্য কোম্পানির সহায়তা ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব কোম্পানি মানুষের সবকিছুকে অর্থ বা পুঁজিতে রূপান্তর করে। তাদের কাছে পুঁজিই জীবন, পুঁজিই মরণ।
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খেলাটা বড় অদ্ভূত, খুব সহজে মেনে নেওয়া যায় না। ‘প্রতিক্রিয়া’ এক রূঢ় বস্তবতা। প্রায় প্রত্যেকেই জেনে-না-জেনে আত্মঘাতী অনেক কিছুই করছি প্রতিনিয়ত। অনেকে ভেবেচিন্তে করে, অনেকে সামনে যখন যা পায় তাই করে। অথচ সবকিছু যাচাই করা হয় তার ফল অনুযায়ী। গোলাপ ফুল গাছ যতই সুন্দর হোক, ফুল না ধরলে তার সে সৌন্দর্য্যের কোনো মূল্য নেই। সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ফুলের দ্বারা। মাইক্রোবায়োলজি কতটা হুমকিজনক তা ‘করোনা’ প্রমাণ করে দিচ্ছে। কথিত ‘উন্নয়ন গবেষণার’ ফল এটি।
মাইক্রোবাইয়োলজির উন্নয়ন বলছে- পৃথিবী এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। অথচ সে পৃথিবী এখন মাইক্রোর করালগ্রাসে ধ্বংসের পথে। করোনা মাইক্রোবায়োলজিরই তৈরি। অচল পুরো বিশ্ব। বায়োলজিস্টরা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে পুঁজির কাছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলো খুব সহজে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসে না, সমাধান নির্ণয়ও খুব সময়সাপেক্ষ। বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। কথিত জ্ঞানের জগতটাও অর্থের কাছে বিক্রি হয়েছে বহু আগেই। গবেষকরা গবেষণার বিনিময়ে পরিবারে বিত্তের বন্যা বহায়। স্পেনের গবেষক অর্থকে ‘পার্থ্যকের মানদণ্ড’ হিসেবে ধরেছেন।
আরো পড়ুন- জীবিকার তাগিদে শিক্ষকদের চিন্তা-গবেষণায় মনে নেই
করোনা প্রতিরোধের যেসব ব্যবস্থা এ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে, সবই কোনো না কোনো বহুজাতিক পণ্য কোম্পানির সহায়তা ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব কোম্পানি মানুষের সবকিছুকে অর্থ বা পুঁজিতে রূপান্তর করে। তাদের কাছে পুঁজিই জীবন, পুঁজিই মরণ। তারা গড়ে উঠে পুঁজিবাদী শিক্ষায়, যেখানে নেই কোনো মনুষ্যত্ব। আছে শুধু ভোগ আর ভোগ। অথচ এ শিক্ষাকে আজ ভাবা হচ্ছে মুক্তির একমাত্র ও কেবলমাত্র পথ। ভাবছে এ নীলগ্রহে বসবাসকারী মানুষগুলো। অথচ মনুষ্যত্বের শিক্ষার জন্য প্রয়োজন নেই কোনো বৈষয়িক সিলেবাস, প্রতিষ্ঠান, পাঠ্যপুস্তক, অর্থবিত্ত। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা, মনুষ্যত্বের শিক্ষা, জীবন ও সৃষ্টির প্রকৃত অবস্থা নিয়ে চিন্তা ও জ্ঞান।
মাইক্রোবাইয়োলজির উন্নয়ন বলছে- পৃথিবী এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। অথচ সে পৃথিবী এখন মাইক্রোর করালগ্রাসে ধ্বংসের পথে। করোনা মাইক্রোবায়োলজিরই তৈরি। অচল পুরো বিশ্ব। বায়োলজিস্টরা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে পুঁজির কাছে।
বিশ্ববাসীর জন্য করোনা এখন যতটা আতঙ্কের, তারচেয়ে হাজারগুণ বেশি অতঙ্কের কারণ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ভয়ানক থাবা। পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের দোহাই দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কেউই এ বিপদে কারো পাশে নেই। শুধু ‘নিজেকে রক্ষা’ করার বাসনায় ব্যস্ত। অথচ এ ভাইরাসের থাবা থেকে কেউই মুক্ত নয়। এটি পুঁজিবাদের অর্থকে উলট-পালট করার নতুন কোনো খেলা নয়তো? যদি তাই হয়, তবে জীবন রক্ষা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হবে। তাই শুধু করোনা নয়, পৃথিবীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবার এখনই উৎকৃষ্ট সময়। ভবিষ্যতের অস্তিত্ব তো বহুদূর, বর্তমানের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করাই এখন আমাদের কর্তব্য।
লেখকের সব কলাম
করোনা’র চেয়ে অদৃশ্য অসংখ্য ভাইরাস আমাদের ঘিরে রেখেছে। হতাশা, ক্রোধ, অনাস্থা, অবিশ্বাস, হিংসা, দ্বন্দ্ব উৎপন্ন করার মন-মানসিকতার মতো বহু ভাইরাস বিদ্যমান রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কে, মনে, পুরো অস্তিত্বে। এসব উৎপন্ন হওয়ার উৎস হলো- অনিয়ন্ত্রিত তথ্য-প্রযুক্তি ও শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট প্রদান।
আইন দ্বারা কালে কালে মানুষকে খুব কমই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। মানুষকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে গঠনমূলক চিন্তা ও জ্ঞানের বিকাশ। যখনই এখানে অভাব তৈরি হয়েছে, তখনই পৃথিবী পতিত হয়েছে ধ্বংসের মুখে। নেমে এসেছে মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, অশান্তির মতো ভয়াবহ ভাইরাস। যাকে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ করতে জীবনবাজী রেখে এগিয়ে এসেছেন বহু মহৎ হৃদয়ের জ্ঞানবান মানুষ। এখনই সিদ্ধান্ত নেবার সময়, জ্ঞান না ভোগ হবে জীবনের পাথেয়?
আধুনিক সমাজের মানুষগুলোর চেনা এক চরিত্র হলো, যখন সে যা চাইবে তা পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে। সে একটি মুহূর্তের জন্য এর ভাল-মন্দ দিকগুলো যাচাই না করেই পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে। অপর আরেক শ্রেণির লোক আছে, যারা জাগতিক বিষয় নিয়েই খুব বেশি ভাবুক। তারা ভাবতে ভাবতে এমন এক জায়গায় পৌঁছায়, যেখানে কোনো মীমাংসা নেই। অথচ তাদের মাথায় এটা খেলে না, জীবন হলো এক ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। যার হিসাবে চুল পরিমাণ এদিক সেদিক হলে বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়া অনিবার্য।
একেবারে ভাবনা ছাড়া কাজ করাটা যেমন অনুচিত, তেমনি অতিরিক্ত ভেবে অলসের মত জীবনযাপন করাটা অনুচিত। ‘ভাবনা’ ও ‘চিন্তা’ এক কথা নয়। করোনা নয় শুধু, এর চেয়ে শক্তিশালী ভাইরাসও মুহূর্তে মনুষ্যত্বের কাছে হার মানতে বাধ্য। মনুষ্যত্বের শিক্ষাই পারে করোনার মতো ভয়াবহ ভাইরাসকে নির্মূল করতে।
শরীফ উদ্দীন রনি : শিক্ষক, কলামিস্ট
sharifuddin420953@gmail.com
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]