রবিবার রাত ৪:৫৪, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

বেদে নারীদের উৎপাতে অতিষ্ঠ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারীরা

জুনায়েদ আহমেদ

এরা হিজড়াদের চাইতেও বেশি অত্যাচারী। হিজড়ারা নারীদের কাছ থেকে টাকা নিতো না। আর এরা বেছে বেছে নারীদেরকে আটকায়, টাকা না দিলে পথ ছাড়ে না।

কথিত আছে, বেদে সম্প্রদায়ের পুরুষরা কোনো কাজ করে না, শুধু বসে বসে খায়। সংসারের ভরণপোষণের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব থাকে নারীদের উপর। বেদে নারীরা আগে একেক সময় একেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজের মাধ্যতে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সমাজের মানুষ দিন দিন সচেতন হওয়ায় এসবের প্রতি এখন তাদের আস্থা নেই বললেই চলে। ফলে প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন বেদে নারীরা।

তাই জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে একরকম জোরজবরদস্তি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলছেন তারা। বিশেষ করে তারা এক্ষেত্রে টার্গেট করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নারীদেরকে। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে এদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শহরের নারীরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও রহস্যজনকভাবে তারা এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগী নারীসহ অন্যান্যরা।

এদেরকে বেশির ভাগ সময় কলেজ পাড়া, কালীবাড়ি মোড়, ফকিরাপুলসহ এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দলবেঁধে চলাচল করতে দেখা যায়। এদের জামাকাপড়, নাক-কানের অলঙ্কার সাধারণ নারীদের চেয়ে ভিন্ন। হাঁটা এবং কথা বলার স্টাইল অনেকটা হিজড়াদের মত । বেশিরভাগ নারীই এদেরকে দেখে ভয় পান। টাকা চায়লে কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে দেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাজার শেষে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মোসাম্মৎ সালমা খাতুন। পৌরমঞ্চের সামনে আসতেই তার পথ আটকে দাঁড়ায় কয়েকজন বেদে নারী। টাকা নেই বলেও এদের কাছ থেকে রেহাই পাননি তিনি। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এরা হিজড়াদের চাইতেও বেশি অত্যাচারী। হিজড়ারা নারীদের কাছ থেকে টাকা নিতো না। আর এরা বেছে বেছে নারীদেরকে আটকায়, টাকা না দিলে পথ ছাড়ে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফাহমিদা খাতুন জানান, প্রতিদিন কলেজে আসা-যাওয়ার পথে এদেরকে টাকা দিতে হয়। টাকা দিতে না চাইলে উড়না, জামা ধরে টানতে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিতেই হয়। টাকা দেওয়া ছাড়া এদের কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে শহরে আসা-যাওয়া করা নারীদের জন্য এরা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন আরো জানান, অনেকদিন ধরেই শহরের নারীরা এদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি মনে করেন, প্রশাসনের কিছু অসাধু, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করেই এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এই বেদে নারীরা।

এই প্রতিবেদক বেদে নারীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেনো তারা এভাবে জোর করে নারীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। এ সময় তাদের একজন রাগত সুরে প্রতিবেদকে মামলার হুমকি দিয়ে বলেন, এ্যাই, তুমি কে, চুপ থাকো, এক্কেবারে মামলা কইরা দিমু!

প্রতিবেদক : জুনায়েদ আহমেদ

 

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply