“‘বিয়ে’ আর ‘যৌনমিলন’ বা যৌনতা এক কথা নয়। বিয়ে ছাড়াও যৌনমিলন বা যৌনতা সম্ভব, কিন্তু তা মানুষ ও পশুতে কোনো পার্থক্য নির্দেশ করে না। কুকুর-শূকরের সাথে কোনো পার্থক্য থাকে না। বরং এক্ষেত্রে কুকুর-শূকর ও অন্যান্য পশু- মানবসমাজ থেকে সবসময় এগিয়ে।”
মানুষের ক্ষেত্রে ‘বিয়ের বন্ধন’ ছাড়া কোনো সুষ্ঠু-সভ্য-শিক্ষিত জাতি-সমাজ টিকে থাকবে দূরের কথা, গড়ে উঠারই প্রশ্ন নেই। পশু ও প্রাণীজগতের সঙ্গে মানুষের একটি মৌলিক পার্থক্য- বিয়ে। বিয়ে মানবজাতির জন্ম, বিকাশ এবং টিকে থাকার মূল ভিত্তি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ বিশেষ কারণে বিয়ে না করলেও বা দেরি করলেও সামগ্রিকভাবে বিয়েকে অস্বীকারের কোনোই পথ নেই। বরং কোনো কোনো বা অধিকাংশ সমাজ ও দেশে অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত এবং পরিস্থিতিগত কারণে বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি কারাটা অপরিহার্য। সঠিক বোধ, চিন্তা-চেতনার সুষ্ঠু বিকাশ এবং সুশিক্ষা নিশ্চিত করার আগে বিয়ের মতো একটি স্পর্শকাতর ও কঠিন দায়িত্বে ছেলে-মেয়েদের জড়িয়ে পড়া বা ফেলা কখনোই উচিত নয়।
হ্যাঁ, পর্যাপ্ত সুশিক্ষা, দায়িত্বজ্ঞান, সমন্বয়জ্ঞান বিকশিত হবার পর প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে মানবজীবনের একটি মৌলিক ও পবিত্র বন্ধন। এটা ছাড়া কোনো নারী ‘মাতৃত্ব’ এবং কোনো পুরুষ ‘পিতৃত্ব’ লাভ করতে পারে না। এমনকি নারীর ‘নারিত্ব’ এবং পুরুষের ‘পুরুষত্বও’ অপূর্ণ থেকে যায়। সুশিক্ষা ও সঠিক জ্ঞান-বোধ বিকশিত হবার পর বিয়ে মানুষকে একদিকে দায়িত্ব গ্রহণের দিকে উৎসাহিত করে, অন্যদিকে মানুষকে গড়ে তুলে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হিসেবে। তখন এর সীমাহীন উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
“সামগ্রিকভাবে ‘বিয়ের’ উপকারিতা কখনোই বলে শেষ করা যাবে না। তবে আমরা কেবল সামান্য কয়েকটা দিকে ইঙ্গিত করতে পারি। বিয়ে মানবসমাজের মৌলিক একক এবং একমাত্র উপাদান। পরিবার গঠনের মূল ভিত্তি। যে সমাজ, যে জাতি মানবসমাজের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ও মৌলিক সংগঠন ‘পরিবার’ বা ‘পরিবারব্যবস্থাকে’ টিকিয়ে রাখতে পারে না, অস্বীকার করে, ভেঙ্গে দেয়, দিতে হয়, সে সমাজ ও জাতিকে ‘মনুষ্য সমাজ’ ও ‘মনুষ্য জাতি’ বলা চলে না।”
‘বিয়ে’ আর ‘যৌনমিলন’ বা যৌনতা এক কথা নয়। বিয়ে ছাড়াও যৌনমিলন বা যৌনতা সম্ভব, কিন্তু তা মানুষ ও পশুতে কোনো পার্থক্য নির্দেশ করে না। কুকুর-শূকরের সাথে কোনো পার্থক্য থাকে না। বরং এক্ষেত্রে কুকুর-শূকর ও অন্যান্য পশু- মানবসমাজ থেকে সবসময় এগিয়ে। সীমাহীন চাহিদার অনুপস্থিতি ও অন্যান্য কয়েকটি মৌলিক কারণে পশুদের মধ্যে তালাক নেই, হিংসা নেই, অতিরিক্ত যৌনজ্বালা নেই, সব ঋতুতেই উত্তেজনা নেই এবং ঘন ঘন মিলনের পরও ‘অতৃপ্তি’ নেই।
সামগ্রিকভাবে ‘বিয়ের’ উপকারিতা কখনোই বলে শেষ করা যাবে না। তবে আমরা কেবল সামান্য কয়েকটা দিকে ইঙ্গিত করতে পারি। বিয়ে মানবসমাজের মৌলিক একক এবং একমাত্র উপাদান। পরিবার গঠনের মূল ভিত্তি। যে সমাজ, যে জাতি মানবসমাজের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ও মৌলিক সংগঠন ‘পরিবার’ বা ‘পরিবারব্যবস্থাকে’ টিকিয়ে রাখতে পারে না, অস্বীকার করে, ভেঙ্গে দেয়, দিতে হয়, সে সমাজ ও জাতিকে ‘মনুষ্য সমাজ’ ও ‘মনুষ্য জাতি’ বলা চলে না। পরিবারব্যবস্থাহীন সেসব সমাজ ও জাতিকে ‘পশুসমাজ’ ও ‘পশুজাতিরই’ আরেকটা সদস্য বা ‘প্রজাতি’ বলা চলে, যা বিবর্তনবাদ-সমর্থিত। না, এদের ‘পশুসমাজ’ ও ‘পশুপ্রজাতি’ বললেও পশুদের অপমানিত করা হবে। কারণ পশুরা এ জাতীয় সমাজ-জাতি থেকে অনেক উৎকৃষ্ট এবং উন্নততর।
আরো পড়ুন> ধর্ম ও শিক্ষার প্রধান লক্ষ্যই মানবতা
আজকের বিশ্বের মানুষ নামের নিকৃষ্ট পশুগুলো বিয়েকে মনে করে শারীরিক ভোগের মাধ্যম। শুধুমাত্র শারীরিক ভোগই মানুষকে তৃপ্তি, সুখ, শান্তি এনে দিতে পারে না। যারা বিয়েকে শুধুমাত্র যৌন-ভোগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে, তারা পশুর চেয়ে আরো নীচের স্তরে নেমে যেতে বাধ্য। কারণ পশুর অস্তিত্ব তার দেহেই সীমাবদ্ধ। মানুষ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয় জ্ঞানের পূর্ণতা ও মানবিক গুণাবলি বিকাশের দ্বারা তার মানসিক সীমাহীন চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে।
দেহ চায় যেকোনো মূল্যে সীমিত শারীরিক ভোগ। আর তাকে ফিরিয়ে রাখে জ্ঞান ও মানবিক গুণাবলিসমূহ, মানসিক সীমাহীন চাহিদা পূরণের স্বার্থে। মানুষের সীমিত জীবন নানা অপূর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ। সে বেড়াজাল হতে মুক্ত হতে মানুষকে পূর্ণতার দিকে ধাবিত হতে হয়। অপূর্ণ জীবনকে পূর্ণতার দিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় ‘বিয়ে’। বিয়ে ছাড়া ‘সমন্বয়’, ‘সমঝোতা’ ও ‘সর্বোচ্চ ছাড়ের’ কোনো প্র্যাক্টিস মানুষ করতে পারে না। কেননা বিয়ে সৃষ্টির দুটি চূড়ান্ত ‘বিপরীত সত্তার’ সমন্বয় ও মীমাংসা।
লেখকের সব কলাম
বর্তমান বিশ্বে তথাকথিত বিয়ের ধ্যান-ধারণা ও ধরন প্রায় একই। এসবের মৌলিক কোনো ভেদাভেদ নেই। খুব উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই বিয়েগুলো অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকদিকে কিছুদিন সংসারজীবন ভালোভাবে কাটলেও। অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তালাক হয়ে যায়। এর সঠিক কারণ বিশ্লেষণ করে দেখার মতো লোক বা সংস্থার সংখ্যা অতি নগণ্য। তবে ‘জরিপ’ চালানোর মতো লোক-সংস্থার সংখ্যা অগণিত।
প্রতিটি ছেলেমেয়েই সাংসারিক জীবন নিয়ে রঙ্গিন স্বপ্ন বুনে মনের ডায়েরিতে। কিন্তু সেই স্বপ্ন সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হয় না। কারণ বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ সংসারই এখন ভাঙ্গণের পথে। সাংসারিক জীবনে পদার্পনের পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে চলে আসে সমস্যা। যা বাস্তবতা থেকেই উৎপন্ন হয়। ‘রঙিন স্বপ্নে’ বিভোর থাকার কারণে কখনো এসব সমস্যা নিয়ে ভাবা হয় না ছেলে-মেয়েদের। তাই সহজ সমাধান মনে করে একে অপরকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়, যা খুবই হৃদয়বিদারক। দিন দিন তালাকের হার বেড়ে চলেছে। এতে বর্তমান ছেলেমেয়েদের মনে বিয়ের প্রতি একটা ক্ষোভ-ভীতি কাজ করে। সমাজ ও চিন্তা পুনর্গঠিত না হলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বিয়ে নামটাই মানুষের মুখে শোনা যাবে না।
চলবে…
শরীফ উদ্দীন রনি : বার্তা সম্পাদক, দেশ দর্শন
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]