তার নেতৃত্বে শতকোটি টাকা খরচ করে যে লক্ষাধিক আলেমের ফতো ও সাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা কতটুকু। গত পরশু শ্রীলঙ্কায় ধর্মীয় উপসনালয়ে বোমা হামলায় এ পর্যন্ত নিহত তিনশত।
একটি কাজ ও পদক্ষেপ কতটা সময়োপযোগী এবং কার্যকর তা কেউ কেউ তাৎক্ষণিক ঠাহর করতে পারলেও সময়ের অপেক্ষা না করে তা প্রমাণ করতে পারেন না। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ‘আলেমে দ্বীন’, শোলাকিয়া ঈদগাহর ইমাম, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট লেখক ও সাহিত্যিক মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ গত কয়েক বছর আগে ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন জঙ্গীবাদবিরোধী লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া সংগ্রহ করে। এতে তার ‘ব্যক্তিগত সাফল্য’ ঈর্ষণীয়। কেননা এর দ্বারা তিনি বিভিন্ন দেশ-বিদেশই নয় শুধু, জাতিসংঘ পর্যন্ত চান্স পেয়েছেন। সরকারি প্রচুর বাহবা, সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন। কিন্তু জঙ্গীবাদ যেখানে ছিল, ঠিক সেখানেই আছে। বরং বলা যায় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অন্তত এখন প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, তার নেতৃত্বে শতকোটি টাকা খরচ করে যে লক্ষাধিক আলেমের ফতো ও সাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা কতটুকু। গত পরশু শ্রীলঙ্কায় ধর্মীয় উপসনালয়ে বোমা হামলায় এ পর্যন্ত নিহত তিনশত।
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ অনেক বছর ধরেই সময়ে সময়ে আলোচিত, সমালোচিত এবং শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত। তিনি কওমি অঙ্গনে ও প্রচলিত ‘আলেম সমাজে’ বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখলেও কিছু নীতিগত প্রচলিত আলেমসমাজে তিনি গ্রহণযোগ্য নন। আবার অন্যদিকে আর দশজন আলেমের মতোই ধর্মীয় একটা শ্রেণিগত ও কোণঠাসা দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য-লেখনী পেশ করায় শিক্ষিত সমাজেও তার চিন্তাধারার কোনো চর্চা বা মূল্য নেই। তবে জামায়াতবিরোধী অবস্থানের কারণে এবং এবং আওয়ামী সরকারের সঙ্গে একটা লিয়াঁজো রক্ষার কারণে দেশ বিদেশে তিনি অনেকটা আলোচিত এবং সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত। যা হোক, পরে সময় নিয়ে তার সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে। আপাতত, গত বছর তাকে নিয়ে একটা বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে যে স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম, সেটাই পাঠকদের সামনে পেশ করছি।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ অনেক বছর ধরেই সময়ে সময়ে আলোচিত, সমালোচিত এবং শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত। তিনি কওমি অঙ্গনে ও প্রচলিত ‘আলেম সমাজে’ বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখলেও কিছু নীতিগত প্রচলিত আলেমসমাজে তিনি গ্রহণযোগ্য নন। আবার অন্যদিকে আর দশজন আলেমের মতোই ধর্মীয় একটা শ্রেণিগত ও কোণঠাসা দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য-লেখনী পেশ করায় শিক্ষিত সমাজেও তার চিন্তাধারার কোনো চর্চা বা মূল্য নেই।
“প্রথমে ভেবেছিলাম, ফরীদ মাসউদের কাজটা অনিচ্ছাকৃত হলেও তার দিন মোটামুটি শেষ। ধর্মীয় অঙ্গনে আর কোনো ঠাঁই হবে না। কিন্তু না, তিনি এত বোকা না। মনে হচ্ছে আঁটঘাট বেধেই কাজটি করেছেন। তার অন্ধভক্ত ও একশ্রেণির পেইড এজেন্টদের লাফালাফি দেখে সহজেই ঠাহর করা যায়।
আশ্চর্য, সারা জীবন ধর্মের নাম বেঁচে খাওয়া, ধর্মের নাম বেঁচে চলা, ধর্মের ডিগ্রি দিয়ে পরিচয় দেওয়া, কোরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে দিয়ে ইসলামের কথা বলা ও লেখা মানুষটি প্রকাশ্য জনসভা বা অনুষ্ঠানে নারীদের সঙ্গে ওপেন মেলামেশা করবেন, ‘এক বিছানায়’ বসবেন, হাসি-মজাক করবেন, এরপরও তার এ কাজের সমর্থনে পোলাপাইন ফেসবুক গরম রাখবে, তবে ছাত্রলীগ, শিবির আর ‘ফরীদ মাসউদ গং’ এর পার্থক্য রইল কোথায়?
আরেকটি কথা, দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধান ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে জাতীয় বিষয় নিয়ে বৈঠক করা আর যেখানে সেখানে নারীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে ‘মিলিত’ হওয়া এক কথা না। এটা ফরীদ মাসউদ গং এর বুঝতে হবে। তবে কথা আরো আছে। লাখ লাখ ‘আলেম’ ধর্মের নাম বেঁচে খেতে পারলে, চলতে পারলে, পরিচয় দিতে পারলে, শেষ পর্যন্ত ‘খতমে বোখারী’ (এই বেদআতের শেষ কোথায়?) আর ‘খতমে মুসলিম শরিফের’ নামে আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে পারলে ওটা আর তেমন কী?
যা হোক, এসব ‘ইসলামি পোলাপাইনের’ বাৎচিতের বিষয়, আমার না। আমি ধর্মের নাম বেঁচে খাই না, ধর্মের ড্রিগ্রি-যোগ্যতা দিয়ে পরিচয় দেই না। আমি কোনো ‘ইসলামি লেখক’ বা ‘ইসলামি বক্তা’ও না। প্রচলিত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতি নেই। তাই আপাতত নিজের চরকায় তেল দেই।”
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]