সরেজমিনে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকার এ পরিবারগুলোর বাড়িতে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রায় প্রতিটা সদস্যই এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এতে তাদের কোনো অপরাধবোধ নেই। এমনকি এভাবে জীবিকা নির্বাহকে তারা ‘হালাল’ মনে করে।
দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর অসংখ্য পরিবার কেবল মাদক চোরাচালান ও ফেন্সি-গাঁজা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এদের জীবিকা নির্বাহের দ্বিতীয় কোনো অবলম্বন নেই। কারণ বাংলাদেশ সরকার এখনো পর্যন্ত প্রান্তিক জনবান্ধব কোনো কর্মসূচি ঘোষণা বা অর্থনীতি চালু করতে পারেনি। বিদ্যমান সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বজায় রেখে নিকট ভবিষ্যতে পারার সম্ভাবনাও নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকার এ পরিবারগুলোর বাড়িতে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রায় প্রতিটা সদস্যই এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এতে তাদের কোনো অপরাধবোধ নেই। এমনকি এভাবে জীবিকা নির্বাহকে তারা ‘হালাল’ মনে করে। কারণ এ ছাড়া তাদের করার আর কিছু নেই। আবার যাদের আছে, তারাও অতিলোভে কিংবা সহজ-সাধ্য পন্থা হিসেবে মাদক-চোরাচালানের কাজকেই বেছে নেয়। আবার অনেককে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ব্ল্যাকমেইল করেও মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকতে বাধ্য করা হয়। কেউ না করতে চাইলে কিংবা করার পর বেরিয়ে যেতে চাইলে উল্টো তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা অহরহ। অসংখ্য তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, কখনো কখনো সংবাদ মাধ্যমে আসা সত্ত্বেও যুগের পর যুগ ধরে পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি নেই।
বছর দুয়েক আগে সারাদেশে মাদক কারবারীদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে অনেক মাদক কারবারীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই আবার আগের অবস্থায় প্রশাসন ফিরে যায়। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকগণ বারবার একটি কথাই বলছেন যে, এর সঙ্গে মূলধারার স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতারা জড়িত। তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি ও ক্ষমতা এর উপর নির্ভ র করে। সুতরাং এদের টপকে স্বয়ং সরকারের পক্ষেও সম্ভব নয়, মাদক কারবারী বা চোরাচালান বন্ধ করা।
এদিকে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই সারাদেশে কয়েক কোটি টাকার মদ, গাঁজা, ফেন্সি আটক করা হচ্ছে। সংবাদপত্রে এগুলো আসছে। জনগণও এসব নিউজ ভালোই খায়। কিন্তু জনগণ জানে না, এমনকি মাঠপর্যায়ের অনেক সাংবাদিকও জানে না, এর অধিকাংশই সাজানো বা কাউকে ফাঁসানো। এ জাতীয় প্রায় সব নিউজই স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক প্রেস রিলিজ। যেভাবে পাঠানো হয়, ঠিক সেভাবেই ‘নিজস্ব প্রতিবেদক’ বা ‘স্টাফ রিপোর্টারের’ বরাতে সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো সাংবাদিক খবরের সত্য-মিথ্যা অনুসন্ধান করে না। করার সুযোগও নেই।
তারচেয়েও বড় প্রশ্ন, আটক করা এত এত মদ-গাঁজা অতঃপর কী হয়? কোথায় যায়? দেশ দর্শনের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, এগুলোই আবার ঘুরেফিরে বিক্রি করা হয় কিংবা অন্য কাউকে ফাঁসাতে ব্যবহার করা হয়। আর এসবের পেছনে কাজ করে স্থানীয় তিন শ্রেণির একাধিক সিন্ডিকেট। দিন, সপ্তাহ ও মাসশেষে তাদের মধ্যে দেনা-পাওনার হিসাব হয়। কোনো পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনীতিক বা সামাজিক ব্যক্তিত্ব চাইলে এসব নিয়ে স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান এবং নিউজ করতে বা পদক্ষেপ নিতে পারে না। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, বাঙালি জাতি কি শেষ পর্যন্ত মদ-গাঁজা-ইয়াবা আর টাকা-ক্ষমতার তলে পড়েই অবশেষে ধ্বংস হয়ে যাবে? এ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে, সমস্ত বাধার জাল ছিন্ন করে কেউ কোনোদিনই কি দেশ জাতিকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারবে না?
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, সারাদেশ
[sharethis-inline-buttons]