আজ যার-তার হাতে সাংবাদিকতার কার্ড ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে কোনোদিকে যার কোনো গতি হচ্ছে না, সে সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকছে! আর যারা দুকলম লিখতে পারছে বা পারে, তারা এরই মধ্যে লক্ষ-কোটি টাকা বানিয়ে নিয়েছে এবং দেশ-বিদেশে ‘অবস্থান’ পাকাপোক্ত করেছে।
একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ জাতি-রাষ্ট্রের অন্যতম মুল ভিত্তি গণমাধ্যম। আর গণমাধ্যমের মূল উপকরণ সাংবাদিকতা। ক্ষমতার দিক থেকে বিবেচনা করলে রাষ্ট্রের প্রশাসন, সরকার ও বিচারব্যবস্থার পরই সাংবাদিকতার স্থান। আর অন্যদিক থেকে বিবেচনা করলে সাংবাদিকতার স্থান চতুর্থ বা পঞ্চম নয়, বরং প্রথম। সুতরাং সাংবাদিকতা যে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর দায়িত্ব এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতি (গণনীতি), পুলিশ প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার মতো সাংবাদিকতাও এখন পুরোমাত্রাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং সম্পূর্ণই পেশা বা ব্যবসায়ে রূপান্তরিত হয়েছে। সাংবাদিকতা এখন সম্পূর্ণই ব্যক্তি, দলীয় ও প্রতিষ্ঠান-কোম্পানির স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। দায়িত্বশীলতা, ন্যায়নীতিবোধ, মনুষত্বচর্চা, সর্বজনীনতার বিন্দু-বিসর্গ এখন আর এতে অবশিষ্ট নেই।
শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বেই সাংবাদিকতার মতো একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঠিক সংজ্ঞা, পরিধি ও সুষ্ঠু নীতিমালা নেই। বিশেষ করে কথিত শিক্ষা, ক্ষমতা, পেশা ও সংকীর্ণ মস্তিষ্ককেন্দ্রিক চিন্তা-চেতনার বাইরে গিয়ে কেউ লেখালেখি ও সাংবাদিকতার বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে পারছে না। তাই এ নিয়ে চরম বিভ্রান্তি ও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার একে দমন করার আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, আজ যার-তার হাতে সাংবাদিকতার কার্ড ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে কোনোদিকে যার কোনো গতি হচ্ছে না (যার নাই কোনো গতি), সে সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকছে! আর যারা দুকলম লিখতে পারে বা পারছে, তারা এরই মধ্যে লক্ষ-কোটি টাকা বানিয়ে নিয়েছে এবং দেশ-বিদেশে ‘অবস্থান’ পাকাপোক্ত করেছে। অন্যদিকে সরকার গণমাধ্যমের অনুমতি দিতে গিয়ে দল, ক্ষমতা ও টাকার কাছে বন্দি। সরকার এক্ষেত্রে সৎ, আদর্শিক ও নীতিবান সাংবাদিক খুঁজে বের করতে পুরাপুরি ব্যর্থ। তাই সরকার কথিত আইনের মাধ্যমে সত্যনিষ্ঠ সংবাদ ও সাংবাদিকতা দমনে উঠে পড়ে লেগেছে।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নামে যে কথিত আইনটি সংসদে পাশ হয়েছে বা চূড়ান্তভাবে প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় আছে, তা যে চরম জটিলতার সৃষ্টি করবে এবং এর যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ ঘটবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তবুও ক্রীতদাসের হাসির মতো একে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। কারণ আমাদেরও হাত-পা বাঁধা।
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম, সম্পাদকীয়, সম্পাদকের বাছাই
[sharethis-inline-buttons]