মানবতা বিসর্জন দিয়ে লাভের পেছনে ছুটতে ছুটতে পৃথিবীকে আজ অশান্ত করে তুলেছি। এক জীবনে চলতে যত টাকা লাগে, তার দশগুণ টাকা সঞ্চয় করেও আমাদের মন তৃপ্ত হয় না। আমাদের আরো চাই এবং আরো আরো চাই। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত টাকা চাই। টাকা লোকসানের দুঃসংবাদ শুনে অনেক ধণী লোক হার্ট এ্যাটাক করেও মারা যান।
একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে। যখন পৃথিবী তৈরি হয়, তখন শান্ত ছিল। হানাহানি, মারামারি, লোক ঠকানো ছিল না। অর্থাৎ এখন যা চলছে, তখন তা ছিল না। তখন একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা ছিল। বেশিদিন আগের কথা নয় এইতো সেদিন, যখন আমার বয়স ১০/১২ ছিল। তখনও পাশের গ্রামের কারো ঘরে গিয়ে অনায়াসে বসে থাকতে পারতাম। তারাও আমাকে চিনতো, এটা-সেটা খাওয়াতো। আবার আমাদের ঘরেও পাড়ার বড় ভায়েরা চৈত্র মাসের রুদ্রের তাপে হেঁটে এসে বিশ্রাম নিতো। মাঝে মধ্যে আমাদের খাটে দুপুরবেলা ঘুমাতোও তারা। মনে পড়ে আলাল ভাই, দুলাল ভাই, জহির ভায়েরা যখন মাঝ-দুপুরে ঘুমাতো, তখন গরমে তাদের শরীর থেকে ঘাম বেয়ে বেয়ে পড়তো। তাদেরকে আপন ভায়ের মতোই মন হতো। এসব ছিল সাধারণ ব্যাপার। কিন্ত এখন এসব কল্পনাও করা যায় না।
আজ এমনই এক সময় আমরা পার করছি, যেখানে শুধুই নিষ্ঠুরতা ও স্বার্থের হিসাব। পদে পদে আমরা স্বার্থ খুঁজি। কারো উপকার করে যদি নিজের কোন লাভ না হয় তাহলে আমরা তা করি না। কাউকে টাকা দিলে যদি প্রতি মাসে আমাকে লাভ না দেয় তাহলে আমরা তা করি না। সবক্ষেত্রেই আমরা নিজের লাভ খুঁজি। আমরা এখন কথায় কথায় বলি, ‘এটা করে দিলে আমার লাভ কী’?
মানবতা বিসর্জন দিয়ে লাভের পেছনে ছুটতে ছুটতে পৃথিবীকে আজ অশান্ত করে তুলেছি। এক জীবনে চলতে যত টাকা লাগে, তার দশগুণ টাকা সঞ্চয় করেও আমাদের মন তৃপ্ত হয় না। আমাদের আরো চাই এবং আরো আরো চাই। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত টাকা চাই। টাকা লোকসানের দুঃসংবাদ শুনে অনেক ধণী লোক হার্ট এ্যাটাক করেও মারা যান।
পৃথিবী ধ্বংসের ব্যাপারে কোরআনের বাণী যে ইতোমধ্যেই ফলতে শুরু করেছে, তা আমরা আমাদের চার দিকে তাকালেই প্রমাণ পেয়ে যেই। চারদিকে ঝড় শুরু হয়েছে, অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। সামান্য স্বার্থের জন্য রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে। রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভাই-বোনে হানাহানি মারামারি। স্ত্রী স্বামীকে মারতে যায়, স্বামী ভয়ে মুখ লুকায়। অপর দিকে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে শরীরে আগুন দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। ধর্মের জন্য দেশে দেশে যুদ্ধ। মানুষ হয়ে মানুষ মারার প্রতিযোগিতা। কে কত ভয়ঙ্কর অস্ত্র বানাতে পারে সেই চেষ্টা।
আমাদের বাসস্থান, আমাদের সবুজ পৃথিবীকে আমরা মানুষরা এভাবেই ধ্বংস করছি। নিজের ঘরে নিজেই আগুন লাগাচ্ছি। অন্য গ্রহের বাসিন্দা এলিয়েনরা এসব দেখে নিশ্চয় আমাদের তিরস্কার করে। তারা একে অপরের সাথে বলাবলি করে, আচ্ছা, মহাকাশে এত এত সুন্দর গ্রহ কিন্তু পৃথিবী নামক ওই গ্রহটা এত বিশ্রী কেন? ওটা থেকে কালো ধোয়া উঠছে কেন? তখন অন্য এলিয়েন উত্তর দেয়, কারণ ওই পৃথিবী নামক গ্রহটিতে মানুষ থাকে এবং এই মানুষ জাতি খুব খারাপ। তারা আমাদের মতো উদার না। তারা সামান্য স্বার্থের জন্য মারামারি করে পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলছে। ওটা ধ্বংস হতে আর বেশি বাকি নেই, তাই ওটা থেকে কালো ধোয়া উঠছে। তখন অন্য এলিয়েন বলে, এটা হচ্ছে ধ্বংসের ঝড়। একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে।
সীমান্ত খোকন : ০৩, ০৯, ২০১৮
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]