'শ্রেষ্ঠত্বের' লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য সকল কিছুই পুঁজিতে পরিণত হচ্ছে। ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পুঁজির সাহিত্য-সংস্কৃতির বাজার। অস্তিত্বের চূড়ান্ত সংকটে ধাবিত হচ্ছে মানব সমাজ।
ভাষা ভাবের আদান-প্রদানের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এর মাধ্যমে মানুষ তার নিজের অভিব্যক্তি ও চিন্তা একে অপরের কাছে প্রকাশ করে। এছাড়াও সমাজ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষায় ভাষার ভূমিকা অপরিসীম।
ভাষা বাহ্যিক সভত্যারও বাহক। এ সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটে ভাষার উন্নতি ও মর্যাদা বৃদ্ধির দ্বারা। চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা প্রভৃতির পরিচয় বহন করে ভাষা। তাই ভাষার সুষ্ঠু ও সুন্দর চর্চা ভাষার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ভাষার প্রয়োগ মানুষে-মানুষে, জাতিতে-জাতিতে যেমন সমন্বয় সাধন করে, তেমনি বিচ্ছেদও ঘটায়। পরিবর্তনের ক্রমধারায় আমরা এমন এক পৃথিবীতে বসবাস করছি, যেখানে ‘শ্রেষ্ঠত্বের’ লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য সকল কিছুই পুঁজিতে পরিণত হচ্ছে। ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পুঁজির সাহিত্য-সংস্কৃতির বাজার। অস্তিত্বের চূড়ান্ত সংকটে ধাবিত হচ্ছে মানব সমাজ। এর থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে হলে ভাষার যথার্থ সংজ্ঞা, শক্তি, ভাষার গতিবিধি, পরিবর্তনশীলতা, বিকাশ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নিরলস অনুসন্ধান ও সাধনা করা জরুরি।
মায়ের মুখ থেকে নিঃসৃত শব্দের দ্বারা শুরু হয় মানুষের মৌখিক ভাষা শিক্ষার যাত্রা। যা আমাদের জীবনে ‘মাতৃভাষা’ নামে পরিচিত। মানব জীবনে এ ভাষা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ দখল করে থাকে।
ভাষার সুষ্ঠু চর্চার মাঝে রয়েছে মনের খোরাক, চিন্তার খোরাক, শিক্ষার খোরাক, অস্তিত্বের খোরাক, সৃষ্টিকে চিনতে পারার চিহ্ন প্রভৃতি। ভাষা পরিবতর্নশীল, তাই পরিবর্তনের ধারাতে ব্যতিক্রম ঘটলে ভাষা তার নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তৈরি হয় নানা জটিলতা। দেখা দেয় একই ভাষাভাষির মাঝে বিরোধ-বিশৃঙ্খলা। পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হয়ে নিজেদের শক্তিকে প্রতিনিয়ত দুর্বল থেকে দুর্বলতর পর্যায়ে নিয়ে যায়। ভাষা যেখানে সমন্বয় সাধনের হাতিয়ার, সেখানে তা বিচ্ছিন্নতারও জন্ম দেয়, যদি এর সঠিক ব্যবহার না হয়।
মায়ের মুখ থেকে নিঃসৃত শব্দের দ্বারা শুরু হয় মানুষের মৌখিক ভাষা শিক্ষার যাত্রা। যা আমাদের জীবনে ‘মাতৃভাষা’ নামে পরিচিত। মানব জীবনে এ ভাষা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ দখল করে থাকে। এ ভাষা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যতই নিজের মুখ নিঃসৃত ভাষার পরিবর্তন হোক না কেন, অভ্যন্তরে ঠিকই এ মাতৃভাষার প্রভাব থেকে যায়। কোনোকিছু অনুধাবন করতে হলে এ ভাষার সহিযোগিতার প্রয়োজন হয়। যে জাতি যত বেশি মায়ের মুখের ভাষা চর্চায় নিষ্ঠাবান, সে জাতি তত বেশি সমৃদ্ধ।
এ জাতির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, পরশ্রী নিয়ে বড়ায় করা। নিজের ধনকে পরের কাছে হস্তান্তর করে পরের ধনে বিক্রি হওয়া।
উন্নত মানব সমাজ গড়ে উঠার অন্যতম উপাদান ভাষা। আধুনিক বাংলা ভাষাভাষিদের নিজের মায়ের মুখের ভাষা হতে দ্বিতীয় ভাষার চর্চার দিকেই ঝোঁক বেশি। অথচ তার জন্য যে পরিমাণ শ্রম, মেধা, সময় ব্যয় করতে হয় তার এক-তৃতীয়াংশ মাতৃভাষায় ব্যয় করলে, বাংলা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এক অনন্য ভাষা হতো।
আরো পড়ুন: “আমার মাতৃভাষা বাংলা নয়”
এ জাতির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, পরশ্রী নিয়ে বড়ায় করা। নিজের ধনকে পরের কাছে হস্তান্তর করে পরের ধনে বিক্রি হওয়া। এমন মনোভাব পরিহার করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মায়ের মুখের ভাষায় জ্ঞান চর্চায় মনযোগী হওয়া অপরিহার্য।
শরীফ উদ্দীন রনি : বার্তা সম্পাদক, দেশ দর্শন
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম, সম্পাদকীয়
[sharethis-inline-buttons]