দলের দুর্দিনে এরা কেউ পাশে থাহে না। দলের ত্যাগী নেতারা কিন্তু দলের কোনো ক্ষতি করে না। আর এরা দলের ক্ষতি করে। কারণ এরা তো দলের লাইগা রাজনীতিতে আয়ে না, আয়ে দান্দা করার লাইগা।”
গতকাল ছিল মুজিব জন্মশতবার্ষিকী। সকাল সাড়ে ছয়টা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মুক্তমঞ্চে মানুষ আসতে শুরু করেছে। মঞ্চে উপস্থিত আছেন স্থানীয় এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরি, প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা দলে দলে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে। মঞ্চের চারপাশ কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। মঞ্চের সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে একদল নেতা উচ্চ আওয়াজে স্লোগান দিচ্ছেন, “আমার নেতা শেখ মুজিব, আমার নেতা শেখ মুজিব। আজকের এই দিনে, মুজিব তোমায় পড়ে মনে; আজকের এই দিনে, মুজিব তোমায় পড়ে মনে।”
নেতাদের সমস্বরে দেওয়া এই স্লোগান শোনে একজন বয়স্ক লোক রীতিমত রেগে উঠলেন। লোকটা হাল্কা গড়নের। পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি। আমি পরিচয় না দিয়ে তার রেগে উঠার কারণ জানতে চাইলাম। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সরলভাবে বলতে শুরু করলেন, “এই যে ছেলেপুলেরা স্লোগান দিতাছে, আজকের এইদিনে মুজিব তোমায় পড়ে মনে। আমার কথা হইলো, মুজিবরে তারার শুধু একদিন মনে পড়বো ক্যা, আর সারা বছর মনে পড়তো না কেল্যাইগা? তিনি আরো বলতে থাকলেন, এরা আসলে সত্যিকার অর্থেই শেখ মুজিবকে ভালা পায় না। আজকে হয়তো কিছু টেহামেহা পাইছে, এরলাইগ্যা দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া স্লোগান দিতাছে। মূলত এরা স্লোগান দিয়া উপরে উপরে থাইকা আকাম-কুকাম কইরা শেখ মুজিব, শেখ হাসিনার নাম বেইচ্যা বেইচ্যা খায়।”
কিছুক্ষণ পর রেকটোর (পত্রিকাস্টল) সামনে দাঁড়িয়ে মুজিব জন্মশতবার্র্ষিকী নিয়ে কথা হলো আরেক প্রবীণের সাথে। তিনিও মুজিব জন্মশতবর্ষে অতি লাফালাফি করা নেতাদের ‘আগাছা’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। বললেন, “আজকে কত নেতাপেতা, শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী নিয়া তাদের কত নাছানাছি। এহন নেতার কোনো অভাব নাই। যেদিন শেখ মুজিবরে মাইরা ফালায়া রাখছে, সেদিন কেউ যায় নাই। তহনো এমন নেতার অভাব আছিলো না। আজকে আওয়ামী দলে দেখবেন, ত্যাগী নেতাদের বেশি মূ্ল্যায়ন নাই। নতুন আগাছারাই বেশি লাফালাফি করতাছে। দলের দুর্দিনে এরা কেউ পাশে থাহে না। শোনেন, দলের ত্যাগী নেতারা কিন্তু দলের কোনো ক্ষতি করে না। আর এরা দলের ক্ষতি করে। কারণ এরা তো দলের লাইগা রাজনীতিতে আয়ে না, আয়ে দান্দা করার লাইগা।”
এদিকে খবরে প্রকাশ, গতকাল রাতে ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশই আতশবাজির বিকট শব্দে কেঁপে উঠে। এটাকে কেউ কেউ সিরিজ জঙ্গি হামলা বলেও মনে করেছিলেন। অন্যদিকে রংপুরে এ অতিউৎসবের আতশবাজির আওয়াজ থেকে আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন লেগেছে বলেও জানা যায়।
এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের বিরক্তি ও প্রতিবাদের শেষ নেই। চিন্তাদিগণ বিস্ময় প্রকাশ করে বলছেন, জাতির এমন ভয়াবহ সংকট ও ক্রান্তিকালে কীভাবে ‘জাতীয় উৎসব’ করা যায়? এর তো প্রশ্নই আসে না। একদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পরীক্ষার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও ‘কিট’ নেই, অন্যদিকে একটি উৎসবে শত শত কোটি টাকা খরচ! এটা কোনো স্বাভাবিকতা নয়।
সমাজবিশ্লেষকগণ বলছেন, বাংলাদেশ এক ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি। কোনো বিপর্যয় ঠেকানোর ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার ন্যূনতম সামর্থ্যও সরকারের নেই। ব্যাংক খালি, সরকারও দেশে বিদেশে প্রচুর পরিমাণে ঋণগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এ ধরণের কার্যকলাপের কোনো অর্থ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। এদিকে সরকারের মন্ত্রীগণও একে একে সব হাস্যকর বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। যা দেশ ও জাতিকে নিয়ে মশকরার নামান্তর।
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, শীর্ষ তিন, সারাদেশ
[sharethis-inline-buttons]