শনিবার রাত ১২:২৮, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ছাত্রদের কাজ ধান কাটা নয়

ফকরুল আলম রুবেল

কামলার দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে কৃষক ধান কাটতে পারছে না, এ জন্য আমরা চাচ্ছি ছাত্ররা ধান কেটে দিক। এই আত্মঘাতী চিন্তাগুলোর পরিহার জরুরি। ছাত্রদের কাজ ধান কাটা নয়। তার নিজস্ব কাজ আছে।

ছাত্রদের কৃষি কাজে লাগিয়ে দেয়া কিছুটা অযৌক্তিক। ধানের দাম আর চালের দামের পার্থক্যও প্রায় দ্বিগুণ। খুব সহজে বললে, এক মন ধান ভেঙ্গে যে চাল পাওয়া যাবে, তা বেচে দুই মন ধান কেনা যাবে। এটা অযৌক্তিক। এখানে একটা সিন্ডিকেট আছে। তারা বাজারে যোগান বেশি দেখিয়ে হাইপ তোলে, এরপর কম দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে। সেই ধান নিজস্ব রাইস মিলে প্রসেস করে। বাজার দখল করে সেই চাল তারা আমাদেরকে চড়া দামে কিনতে বাধ্য করে।

আমরা যখন বোরো ফসল লাগানো শুরু করি, উচ্চমূল্যে বীজ কিনি। হাইব্রিড ধানের বীজ, ফলন ভালো, দামও বেশি। এরপর একটা ছোটখাটো বর্ষণে বীজতলা তলিয়ে যায়। আবার বীজতলা বানাতে হয়। ধানের চারা রোপন করা হয়। বোরো ধানে প্রচুর পানি লাগে, যেহেতু শীতে মাটি ফেঁটে যায়। সেই পানির ব্যবস্থা করা লাগে ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে। যার জ্বালানি হচ্ছে ডিজেল অথবা ইলেকট্রিসিটি। বাণিজ্যিক সেই ডিজেল বা ইলেকট্রিসিটির দাম মাত্রাতিরিক্ত বেশি। হাইব্রীড ধানে পোকা বেশি ধরে। তাছাড়া বৈরি আবহাওয়াও এজন্য দায়ী। দিতে হয় সার। সারে আগে সরকার ভর্তুকি দিত। এখন কৃষক বেশ উচ্চমূল্যে সেই সার কিনে।

এই ঘাম কিংবা রক্তের দামই তো দিতে পারছি না আমরা। আবার এমন না যে চালের দাম কমে গেছে অনেক। দাম প্রায় আগের মতই। মাঝে লাভের মজা লুটে নিচ্ছে কিছু সিন্ডিকেট। অসাধু আমলা৷ অসাধু ব্যবসায়ী। গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত বেড়ে গেছে কামলার দাম।

মাঝে আগাছা জন্মায় প্রচুর। নিরানী দিতে বাড়তি কামলা লাগে। আবার পানি, আবার সার, আবার নিরানী। চক্রাকারে এসব চলে। বোরো ধানের খরচও বাড়ে। সেই ১০০০ টাকা খরচের ধান বেচতে হয় ৫৫০ টাকায়। আমরা খুশী! শহরে আমরা চাই ধানের দাম কম হোক। চালের দাম কমে যাক। দ্রব্যমূল্য কমে যাক। আমরা কৃষকের রক্তের উপর দিয়ে চাই আমাদের প্রাপ্য চালের দাম কমে যাক। যদি কৃষক বীজে, জ্বালানিতে, সার-এ ভর্তুকি পেতো, আমিও বলতাম, চালের দাম কম থাকুক৷ কিন্তু এ তো সম্পূর্ণই অমানবিক! বলা যায় জঘন্য!

এই ঘাম কিংবা রক্তের দামই তো দিতে পারছি না আমরা। আবার এমন না যে চালের দাম কমে গেছে অনেক। দাম প্রায় আগের মতই। মাঝে লাভের মজা লুটে নিচ্ছে কিছু সিন্ডিকেট। অসাধু আমলা৷ অসাধু ব্যবসায়ী। গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত বেড়ে গেছে কামলার দাম। স্মরণকালের সর্বোচ্চ, আমার এলাকায় কামলার দাম ছিল ১৩৫০ টাকা দৈনিক। যেটাকে অমানবিক বলবো না, শুধু ধানের দাম ১০০০+ হলেই হতো।

মাঝে আগাছা জন্মায় প্রচুর। নিরানী দিতে বাড়তি কামলা লাগে। আবার পানি, আবার সার, আবার নিরানী। চক্রাকারে এসব চলে। বোরো ধানের খরচও বাড়ে। সেই ১০০০ টাকা খরচের ধান বেচতে হয় ৫৫০ টাকায়। আমরা খুশী!

এদিকে কামলার দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে কৃষক ধান কাটতে পারছে না, এ জন্য আমরা চাচ্ছি ছাত্ররা ধান কেটে দিক। এই আত্মঘাতী চিন্তাগুলোর পরিহার জরুরি। ছাত্রদের কাজ ধান কাটা নয়। তার নিজস্ব কাজ আছে। আর ধান কেটে আমি যে দিনমজুরের পেটে লাথি মারছি, সে যদি এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৫০০ টাকায় আবার কাজ করে, আর সেই চড়া দামেই চাল কিনতে হয় তার, সে না খেয়ে মরবে।

যে কোনো উন্নয়নকে স্বাগতম। তবে সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত জরুরি। সমস্যাটা ধান কাটায় নয়, তার বহু আগে, কিংবা পরে। ছাত্রদের এখানে ইনভলভমেন্ট নয়, দরকার ল’ এনফোর্সমেন্ট।

ফকরুল আলম রুবেল : অনলাইন এক্টিভিস্ট

 

[বিশেষ দ্রষ্টব্য : লেখাটি লেখক আমাদের পাঠিয়েছিলেন ধান কাটার সময়েই, কিন্তু সাইট উন্নয়নের কাজ চলায় তখনই দেয়া যায়নি। তাই এখন দেয়া হল। তাছাড়া সমস্যাটার কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। আগামী বছরও এটি দেখা দেবে। তাই এ জাতীয় লেখা সারা বছরই প্রাসঙ্গিক। -সম্পাদক]

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply