শনিবার রাত ১:০৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

চাকরিই কি শিক্ষার উদ্দেশ্য?

রাবেয়া জাহান তিন্নি

শিক্ষার উচ্চতর স্তর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পরিণত হয়েছে ‘যান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে’, যেখানে একজন শিক্ষার্থীর চিন্তাকে সম্পূর্ণভাবে ক্যারিয়ারভিত্তিক চিন্তায় পরিণত করা হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি একজন শিক্ষার্থীর উদ্ভাবনী ক্ষমতা তুলেমূলে নষ্ট করে দিতে সফলভাবে কাজ করছে।

শিক্ষার উদ্দেশ্য কি জ্ঞান অন্বেষণ, না চাকরি পাওয়া? সবাই স্বপ্ন দেখে বড় হওয়ার। এই স্বপ্ন দোষের কিছু নয়। কিন্তু নিজের মূল্যবান চিন্তা-চেতনা ও সৃজনশীলতাকে বিসর্জন দিয়ে শুধু একটা ‘চাকরিগত বা সাংসারিক গন্তব্যে’ পৌঁছার চিন্তায় ব্রত থাকা মানুষ হিসেবে নিশ্চয় মনুষ্যত্বের অবমূল্যায়ন।

শিক্ষা এমন এক শক্তি যা শুধু মানুষের বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণ চিন্তা-চেতনাকেও এমন দৃঢ়তার সাথে প্রতিষ্ঠিত করে যে পৃথিবীর যে কোনো প্রলোভন তার ব্যক্তিত্বের কাছে হার মানবে। তবে আজ সেই শিক্ষাকে শুধুমাত্র চাকরি পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের চিন্তাই শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিবাভকদের মধ্যেও এমনভাবে বদ্ধমূল যে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্য কিছু জানা বা পাঠ করাকে তারা সময়ের অপচয় হিসেবে মনে করছেন।

আজ প্রতিযোগিতার মোহে সবাই এতটা আচ্ছন্ন যে এর বাইরে নিজেকে নিয়ে ভাবার, নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ নেই। শিক্ষার উচ্চতর স্তর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পরিণত হয়েছে ‘যান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে’, যেখানে একজন শিক্ষার্থীর চিন্তাকে সম্পূর্ণভাবে ক্যারিয়ারভিত্তিক চিন্তায় পরিণত করা হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি একজন শিক্ষার্থীর উদ্ভাবনী ক্ষমতা তুলেমূলে নষ্ট করে দিতে সফলভাবে কাজ করছে।

আজ শিক্ষা মানেই পরীক্ষার ঘানি টানা, যেখানে জ্ঞান অর্জন মূল উদ্দেশ্য নয়; মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরীক্ষা পাশ করা আর চাকরি পাওয়া। তবে চাকরির দাবিদার এবং চাকরিক্ষেত্রের ব্যবধান দিন দিন শুধু বাড়ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা। বাড়ছে বেকারত্ব, অপরাধপ্রবণতা।

প্রকৃত শিক্ষা কখনো মানুষকে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হতে শেখায় না। তবে কেন আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর দেশ, জাতি ও মানবতার কথা ভাবছে না? তারা শুধু নিজের সুখের কখাই ভাবছে। দেশের বাইরে গিয়ে নিজের মূল্যবান মেধা ও চিন্তা বিক্রি করছে। বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একজন শিক্ষার্থীকে শুধু পার্থিব সফলতা অর্জনের ফর্মুলা শেখাচ্ছে। নিষ্পেষিত করে দিচ্ছে শিক্ষার্থীর মানবতা, মননশীলতা এবং চিন্তাশীল ক্ষমতাকে।

জীবনে চলার পথে কিছু প্রলোভন মানুষকে এমনভাবে আকড়ে ধরে যেখান থেকে ছোটার কোনো উপায় থাকে না। আর সেই জাগতিক মোহ-মায়া বা ঐশ্বর্য্যরে প্রলোভন যখন নিজ থেকে একজনের কাছে এসে ধরা দেয় তখন তাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার মতো সাধ্য খুব কম মানুষেরই থাকে। শুধুমাত্র শিক্ষার মহিমায় অর্জিত সত্যের সন্ধান যে মানুষ পেয়েছেন তিনি সে প্রলোভনের উর্ধ্বে উঠে নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে পারেন।

শিক্ষা যে সত্যের সন্ধান দেয় তা শুধু জানলেই হবে না, সে সত্যের গভীরে পৌঁছে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে একটি নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে বেঁধে দিয়ে থাকেন। মনে রাখতে হবে, তথ্য সরবরাহ করাই একজন শিক্ষকের দায়িত্ব নয়। একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা, শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা কী আবিষ্কার করা।

আজ শিক্ষা মানেই পরীক্ষার ঘানি টানা, যেখানে জ্ঞান অর্জন মূল উদ্দেশ্য নয়; মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরীক্ষা পাশ করা আর চাকরি পাওয়া। তবে চাকরির দাবিদার এবং চাকরিক্ষেত্রের ব্যবধান দিন দিন শুধু বাড়ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা। বাড়ছে বেকারত্ব, অপরাধপ্রবণতা।

রাবেয়া জাহান তিন্নি : ইংরেজি প্রভাষিকা ও সংবাদকর্মী

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply