রবিবার সকাল ৬:৩০, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

গত দশ বছরে বাংলাদেশ পিছিয়েছে একশো বছর

দেশ দর্শন প্রতিবেদক

দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিষয়ে যেসব কথিত জরিপ, তথ্য-উপাত্ত ও হিসাব উপস্থাপন করেছে তা ভুলে ভরা। বিশেষ করে জনসংখ্যা, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান প্রভৃতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কোনো নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণিত জরিপ কিংবা তথ্য-উপাত্ত নেই। এর কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, মিডিয়ার মতোই দেশি-বিদেশি বিভিণ্ন প্রতিষ্ঠান ও এনজিও সংস্থাগুলোও প্রচুর টাকা বাণিজ্য করতেই এসব জরিপ করে থাকে।

বিশেষ প্রতিবেদন : বিশ-ত্রিশ বছর আগের এক আদম শুমারির হিসাবে (মোটামুটি গ্রহণযোগ্য) বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। কিন্তু বর্তমানে আসলে কত কোটি তা কারো জানা নেই। কেউ বলেন একুশ কোটি, কেউ বলেন পঁচিশ কোটি। গত কয়েকটি আদম শুমারিতে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার অভাব, ব্যাপক তথ্য চুরি, ভুল তথ্য উপস্থাপন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং দুর্নীতির কারণে জনগণের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। তাছাড়া জনসংখ্যা কম দেখিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর সামনে ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে গত দুই মেয়াদের সরকার সব ধরনের ‘ব্যবস্থা’ গ্রহণ করায় সর্বশেষ আদম শুমারির ভুল তথ্য (১৪ কোটি) কারো কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

প্রকৃতপক্ষে গত ত্রিশ বছরে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্রুত গতিতে। গত দশ বছরে সেই গতিতে যোগ হয়েছে আরো নতুন মাত্রা। বাংলাদেশের পথ-ঘাট এখন লোকে লোকারণ্য। সমাজতত্ত্ববিদগণ মনে করছেন, বর্তমানে এ দেশের জনসংখ্যা ২১ কোটি। গত দুই মেয়াদে আওয়ামী সরকার জনসংখ্যারোধে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কিংবা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখায় ব্যস্ত থাকতে গিয়ে এদিকে মনোযোগ দিতে পারেনি। আর নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ ক্ষেত্রে সরকারি যে কাজগুলো করা হয়েছে তা জনসংখ্যারোধে পুরোপুরি ব্যর্থ। অবশ্য তারচেয়েও বড় সমস্যা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাত্রানুযায়ী সরকারি-বেসরকারি সেবা ও উন্নয়ন বিন্দুমাত্র এগোয়নি, বরং কমপক্ষে একশো বছর পিছিয়েছে।

যেহেতু কোনো সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানই স্বাধীন নয়, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা রাখে না, তাছাড়া মানব সমাজের মূল সমস্যা বিষয়ক প্রয়োজনীয় জ্ঞান তথা প্রশিক্ষণ এদের নেই, সেহেতু এদের কোনো জরিপ কিংবা তথ্য-উপাত্ত আশিভাগই ভুল হতে বাধ্য। বিশেষ করে অর্থনীতি ও উন্নয়ন সংক্রান্ত যত জরিপ ও তথ্য-উপাত্ত আছে তা পুরোপুরিই ভুয়া এবং অগ্রহণযোগ্য। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, সাংঘর্ষিকতা।

গত বিশ বছরে দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিষয়ে যেসব কথিত জরিপ, তথ্য-উপাত্ত ও হিসাব উপস্থাপন করেছে তা ভুলে ভরা। বিশেষ করে জনসংখ্যা, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান প্রভৃতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কোনো নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণিত জরিপ কিংবা তথ্য-উপাত্ত নেই। এর কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, মিডিয়ার মতোই দেশি-বিদেশি বিভিণ্ন প্রতিষ্ঠান ও এনজিও সংস্থাগুলোও প্রচুর টাকা বাণিজ্য করতেই এসব জরিপ করে থাকে। এরা সরকারের পক্ষে তথ্য হাজির করার শর্তে সরকারের কাছ থেকে প্রচুর টাকা পায়।

আরো পড়ুন- বিয়ে ও সন্তান জন্মদানে বাংলাদেশ শীর্ষে

অন্যদিকে বিভিন্ন শক্তিশালী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য টাকা নয়, বরং সরকারকে নিয়ন্ত্রণ এবং এর দ্বারা নিজেদের ব্যবসায়িক ও অন্যান্য স্বার্থ হাসিল করে থাকে। তারা বলছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রকৃত তথ্য বের করার যোগ্যতাও এসব প্রতিষ্ঠান ও এনজিও সংস্থাগুলোর নেই। যতটুকওবা আছে, তা প্রয়োগ করার আন্তরিকতা নেই। তাছাড়া এসব সংস্থাগুলোর কোনোটাই স্বাধীন নয়, অন্যের টাকায় ও নির্দেশনায় চলে। এগুলোর প্রত্যেকটাই কারো না কারো কাছে জিম্মি। আর মাঠ পর্যায়ের কর্মীগণ এক ধরনের গাধা।

সমাজবিশ্লেষকগণ দাবি করছেন, বর্তমানে যেহেতু কোনো সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানই স্বাধীন নয়, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা রাখে না, তাছাড়া মানব সমাজের মূল সমস্যা বিষয়ক প্রয়োজনীয় জ্ঞান তথা প্রশিক্ষণ এদের নেই, সেহেতু এদের কোনো জরিপ কিংবা তথ্য-উপাত্ত আশিভাগই ভুল হতে বাধ্য। বিশেষ করে অর্থনীতি ও উন্নয়ন সংক্রান্ত যত জরিপ ও তথ্য-উপাত্ত আছে তা পুরোপুরিই ভুয়া এবং অগ্রহণযোগ্য। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, সাংঘর্ষিকতা। কাগজে কলমে, বিভিন্ন হিসাবে এবং বাস্তবেও তারা যেসব তথ্য ও দৃশ্য হাজির করে, প্রকৃত চিত্র থাকে তার বিপরীত। এর কোনো সদুত্তর তারা দিতে পারে না।

সামগ্রিক বিবেচনায় গত দশ বছরে দেশ ও জাতি প্রায় একশত বছর পিছিয়ে গিয়েছে। বৈষয়িক উন্নয়নের পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ হয়ে পড়েছে এখন যন্ত্র। মনুষ্যত্ব বিক্রি করেও অনেকেই জীবনযুদ্ধে টিকতে পারছে না। মানুষের মানসিক স্থিরতা, উদারতা, সহনশীলতা, চিন্তাশীলতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের গত দুই মেয়াদে আমরা রাস্তা-ঘাট ব্রিজ-কালভার্টের যে উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করি তা আরো বিশ বছর আগে হলে যথেষ্ট হতো। কিন্তু বর্তমানে এতটুকু উন্নয়ন প্রয়োজনীয় জনসংখ্যার তুলনায় উল্লেখযোগ্য নয়। আবার এতটুকু উন্নয়নও করা হচ্ছে কয়েক কোটি মানুষের শারীরিক মৌলিক অধিকার হরণ করে। আর চিন্তাগত ও মানসিক মৌলিক চাহিদা এবং অধিকার সম্পূর্ণরূপেই মেরে ফেলা হচ্ছে। তাই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে আমরা ব্যাপক সাংঘর্ষিকতা দেখতে পাচ্ছি যা পক্ষপাতদুষ্ট ও মোটাবুদ্ধির লোকদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিচ্ছে। আমরা দেখছি, একদিকে ব্যাপক উন্নয়ন, অন্যদিকে এর মাত্রানুপাতে বা তারচেয়েও বেশি বৈষম্য। একদিকে প্রচুর অপচয়, আমোদ-ফুর্তি, অন্যদিকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য, বেকারত্ব, নেশা, খুন, পারিবারিক ও সামাজিক চরম বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি। এর মূল কারণ, রাষ্ট্রের সমস্ত মৌলিক উপকরণগুলোর (শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, মিডিয়া, গণনীতি, গণঅধিকার প্রভৃতি) ভেঙ্গে পড়া।

এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সমাজতত্ত্ববিদগণ বলছেন, সামগ্রিক বিবেচনায় গত দশ বছরে দেশ ও জাতি প্রায় একশত বছর পিছিয়ে গিয়েছে। বৈষয়িক উন্নয়নের পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ হয়ে পড়েছে এখন যন্ত্র। মনুষ্যত্ব বিক্রি করেও অনেকেই জীবনযুদ্ধে টিকতে পারছে না। মানুষের মানসিক স্থিরতা, উদারতা, সহনশীলতা, চিন্তাশীলতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পারিবারিক-সামাজিক ন্যায়বোধ ও শান্তি-শৃঙ্খলা ধ্বসে পড়েছে যার ক্ষতিপূরণ যা আগামী একশো বছরেও সম্ভব নয়।

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  বিশেষ প্রতিবেদন,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply