রবিবার রাত ১:১৪, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ক‌রোনার ভয়াল থাবায় বাংলা‌দে‌শের সব‌চে‌য়ে ক্ষমতাধর ব্য‌ক্তির মৃত্যু

হাসনাইন হাওলাদার

তিনি ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। একাধিকবারের ও একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী।

কোভিট (১৯) মহামারি করোনার আঘাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম মারা গিয়েছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশে তিনিই এ যাবৎকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

তার সুস্থতার জন্য সরকারি বেসরকারি সর্বোচ্চ পর্যায়ের ও সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ নতুন করে নড়েচড়ে বসে। যদিও গত কিছুদিন ধরেই তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সবার মুখে মুখে ছিল।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। অর্থাৎ এই সময়ে তার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। মোহাম্মদ নাসিমের একান্ত সহকারী সচিব মীর মোশারফ হোসেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

 

হাসপাতাল, করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত ১ জুন রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই দিন নমুনা পরীক্ষা করা হলে তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। ৫ জুন তাঁকে কেবিনে স্থানান্তরের পরিকল্পনা থাকলেও ওই দিন তিনি স্ট্রোক করেন। জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর। এরপর তিনি ডীপ কোমায় চলে যান, লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাঁকে। গঠন করা হয় ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। এর মধ্যে ৮, ৯ ও ১০ জুন তাঁর নমুনা পরীক্ষা করা হলে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়। তখন বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে পরিবার। কিন্তু ১১ জুন অবস্থার অবনতি হলে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সবাই। ১২ জুন অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে জটিলতা দেখা দেয়। পরদিন ১৩ জুন বেলা ১১টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু ঘোষণা দেয়া হয়।

১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারেই নিহত হন তিনি। নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত।

১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। একাধিকবারের ও একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। আগামীকাল রোববার সকালে বনানী কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে সমাহিত হবেন মোহাম্মদ নাসিম।

হাসনাইন হাওলাদার: বিশেষ প্রতিনিধি

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ: টক অব দ্য কান্ট্রি

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply