কফি সাহেব তো কাঠের পুতুল। শান্ত থেকে থেকে সম্ভবত তিনি শান্তিতে নোবেলই জিতবেন। ইরাক যুদ্ধের সময় কফি সাহেব জাতি সংঘের মহাসচিব ছিলেন। ইঙ্গ-মার্কিনদের জোট ভেটো পাওয়ার অধিবেশনের মাধ্যমে অভিযানের অনুমতি পায়। সেই আক্রমণের উত্থাপিত বিল ভেটো সম্মতিতে পাশ হয়েছিল। ইরাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাসায়নিক মারণাস্ত্র সমৃদ্ধিকরণের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনপুষ্ট জাতিসংঙ্ঘের প্রতিনিধি দল ইরাকে পাঠানো এবং সেই তদন্ত ও পর্যবক্ষেণ দলের মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে পরিষদের পক্ষ-বিপক্ষ ভেটো পাওয়ার সদস্যের মধ্যে পাঁচ রাষ্ট্র- রাশিয়া, চীন বিরোধিতা করলেও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ও আমেরিকার ভেটো সম্মতিতে ইরাক আক্রমণের দাপ্তরিকভাবে রাসায়নিক সমৃদ্ধিকরণ মোকাবিলার বিল পাশ করা হয়।
পরবর্তী জঘন্য ইতিহাস আমরা জানি একটা স্বাধীন তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্রে দখলদারিত্ব কায়েম করে, অন্যায়ভাবে সাদ্দাম হোসেনের মতো একজন দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্টকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। অথচ ইরাক দখল ও ধ্বংস প্রতিষ্ঠা করেও কোনো রাসায়নিক মারণাস্ত্র সমৃদ্ধির সন্ধান পায়নি। বিশ্বের কাছে মামুলি এক দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘের পরিদর্শক দলের ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত থাকার তথ্য ভুল ছিল।
হয়তোবা আমেরিকার ধারাবাহিক পরিকল্পিত যুদ্ধভাব ও অন্যায় আগ্রাসন ঠেকাতে পারতো না। এই না পারার ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত করতে পদত্যাগ করলে হয়তো ইরাকযুদ্ধ বন্ধ হতো না, কিন্তু বিশ্ববাসী তাকে মনে রাখতো একজন মহান মানুষ হিসেবে।
প্রমাণহীন ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমেরিকা তার মিত্র-দোসরদের নিয়ে সাদ্দাম উৎখাতের নীল নকশার খসড়া তৈরি করছিল। মধ্যেপ্রাচ্যের তেলের উপর আধিপত্য বিস্তারই ছিল ইঙ্গ-মার্কিনদের ষড়যন্ত্র নীল নকশা। কফি আনান সেই অভিসন্ধির প্রেক্ষাপট অবশ্যই উপলব্ধি করেছিলেন। দুনিয়ার যে কোনো রাজনৈতিক সচেতন মানুষেরাও বুঝে ফেলেছিলেন।
কিন্তু বিশ্বমোড়লদের পা চেটে কালো বুট আরো চকচকা করে কিছু লোক সবসময় নিয়োজিত থাকে সব জাতি-রাষ্ট্রে। হ্যাঁ, হয়তোবা আমেরিকার ধারাবাহিক পরিকল্পিত যুদ্ধভাব ও অন্যায় আগ্রাসন ঠেকাতে পারতো না। এই না পারার ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত করতে পদত্যাগ করলে হয়তো ইরাকযুদ্ধ বন্ধ হতো না, কিন্তু বিশ্ববাসী তাকে মনে রাখতো একজন মহান মানুষ হিসেবে।
আজ তার প্রয়ানে আমরাও বলতে পারতাম, সিরিয়াযুদ্ধের শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতায় মহান প্রচেষ্টা এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধন সংকটে জাতিসঙ্ঘের অধীনে আনান কমিশনের নেতৃত্ব দেয়ায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করতে পারতাম। কিন্তু আজ তার বিদায়দিনে ‘মহান’ বলার আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও লক্ষ লক্ষ নিরাপদ মানুষকে অবৈধ যুদ্ধের মাধ্যমে হত্যা, নিপীড়ন, গৃহহীন, লুটের চিত্র পরাধীন ইরাকের দীর্ঘ রক্তস্রোত আমাকে ঠেকিয়ে দেয়!
সজিব মজিদ : কবি ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]