রবিবার বিকাল ৩:৫৯, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

করোনা খুলে দিলো ‘তাহাদের’ মুখোশ

তোফায়েল আহমদ

এ কেমন ধোঁকাবাজি, ত্রাণসামগ্রী আনা হলো, গরীব লাইনে দাঁড়ালো, মন্ত্রী সাহেব উদ্বোধন করলেন ত্রাণ বিতরণ। সাংবাদিক ভিডিও নিউজ করলো। মন্ত্রী সাহেব চলে গেলেন। একটু পরই ত্রাণ বিতরণ বন্ধ হয়ে গেলো। এমন চিত্রও গরীবদের দেখতে হয়েছে। হায় আফসোস!

শুধু ক‌রোনা নয়, যে কো‌নো ভাইরাস‌কেই আমা‌দের অ‌ন্যের ত‌থ্যের ভি‌ত্তি‌তে দেখতে হয়। এ ধরনের ভাইরাস আগেও বহুবার বহু নামে ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। আমরা এসব নিয়ে ভা‌বিও না। আবার আমা‌দের এ‌ক্ষে‌ত্রে কাজ করারও তেমন কোনো সুযোগ নেই বা আমরা এসব নিয়ে কাজ করতে অনাগ্রহী। এ জন্য সুযোগও অর্জন করি না। যার ফলে এসব ভাইরাসের শক্তি কেমন এবং ক্ষতির পরিমাণ কোথায় শেষ হবে তা সম্প‌র্কে আমা‌দেন জানা নেই। তাও জানা নেই, এসব ভাইরাসকে কীভাবে ধ্বংস করতে হয়। তাই আমরা তা বিশ্বাস করতে বাধ্য, যা আমাদেরকে বলা হয়। একেবারে অন্ধবিশ্বাস। সে যাই হোক, পরিস্থিতি খারাপ এবং অচলাবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়কে হাতছানি দিচ্ছে। করোনা ভাইরাসের নামে যে গৃহবন্দীদশা মানুষকে মেনে নিতে হচ্ছে, তা অসম্ভব একটি বিষয়, এ‌টিও বাস্তবসম্মত নয়।

দিনমজুর এবং দিনমজুরের চেয়েও নিম্নআয়ের যারা মাসমজুর, তারা পড়ে গিয়েছে বিপাকে। উদার এবং জনদরদী সরকার এই শ্রেণির জন্য ‘সরকারি উপহার’ বরাদ্দ করেছেন। যেন ভুখাফাঁকা এবং হাভাতে হয়ে মানুষ মারা না যায়। করোনা থেকে বাঁচাতে মানুষকে কর্মবিরতি দিয়ে ঘরে বন্দী হয়ে পড়া মানুষ‌কে যেন ক্ষুধার্ত হয়ে মৃত্যুর সম্মুখীন হ‌তে না হয়। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ বা মুক্তির এবং বেঁচে থাকার মতো খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ করেছেন। এসব বিতরণের জন্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে মেম্বার পর্যন্ত সরকারি লোকদের দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই করোনাকালীন করুণ পরিস্থিতিতে দুঃস্থ,অসুস্থ, অসহায়, নিরুপায়, গরীব- যাদের জমানো খাদ্য নেই, তাদের খাদ্যগুলো গ্রাস করে ফেলছে বণ্টনকারীরা।

“শুধু পঞ্চাশ লাখ পরিবারই কি গরীব? বাংলাদেশে আর কোনো পরিবার নেই যারা এসব অনুদানের উপযুক্ত? তারা কী করবে? তাদের কে অনুদান দেবে? তাদের ঈদ বাজার কীভাবে হবে? আর যারা পাবে, তারা এই টাকা খরচের পর কী করবে? কীভাবে প্রতিদিনকার খাদ্যের যোগান দিবে? হাজারো প্রশ্ন মনে বাসা বাঁধে।”

সামান্য কিছু দেওয়ার না‌মে নাম কামা‌নোই হ‌চ্ছে লক্ষ্য। শুধু কি তাই? কতো নাটক আর উপহাস সাজাচ্ছে গরীবকে নিয়ে। এ নাটক বন্ধ করা চাই এখনই। একটি শিক্ষিত জাতির স্বভাব ‘নাম কামানো’ হতে পারে না। ধোঁকাবাজি শোভনীয় নয় জাতির। ছিঃ! এ কেমন ধোঁকাবাজি, ত্রাণসামগ্রী আনা হলো, গরীব লাইনে দাঁড়ালো, মন্ত্রী সাহেব উদ্বোধন করলেন ত্রাণ বিতরণ। সাংবাদিক ভিডিও নিউজ করলো। মন্ত্রী সাহেব চলে গেলেন। একটু পরই ত্রাণ বিতরণ বন্ধ হয়ে গেলো। এমন চিত্রও গরীবদের দেখতে হয়েছে। হায় আফসোস!

ঈদ উপলক্ষে পঞ্চাশ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রদান করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তা নিয়েও কতো দুর্নীতি আর চালবাজি। কথা হলো, এই পঞ্চাশ লাখ পরিবারই কি গরীব? বাংলাদেশে আর কোনো পরিবার নেই যারা এসব অনুদানের উপযুক্ত? তারা কী করবে? তাদের কে অনুদান দেবে? তাদের ঈদ বাজার কীভাবে হবে? আর যারা পাবে, তারা এই টাকা খরচের পর কী করবে? কীভাবে প্রতিদিনকার খাদ্যের যোগান দিবে? হাজারো প্রশ্ন মনে বাসা বাঁধে। প্রধানমন্ত্রী পঞ্চাশ লাখ পরিবারকে সহায়তা দিবেন। উনার সমস্ত নেতাকর্মীরা মিলে যদি আরো পঞ্চাশ লাখ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার সাহস করতো, তাহলে বুঝা যেত দেশে একটি সুন্দর সরকার নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আঁচলতলে কিছু ‘মানুষ’ আছে, যারা চায় তাকে ‘এগিয়ে’ নিতে।

“কার টাকা দিতো, আমাদের টাকাই তো আমাদেরকে দিতো। মেরে মেরে নিয়েই তো জমিয়েছে। আবার জমাতো মেরে মেরে। কিন্তু এখন দুঃসময় দেশের। মানুষ বাঁচলে ওদের টাকা আবার ওদের পকেটেই ঢুকবে। কিন্তু লোভের পর্দা বিবেকের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছে। শুভ বুদ্ধির উদয় হবে কীভাবে?”

এসব লোভীদের কাড়াকাড়ির আচরণটা এটাই প্রমাণ করে, তার ‘আঁচলতল’ নিরাপদ নয়। লোভ মানুষকে সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে ফেলে। এই কু-আত্মারা যদি আজ ত্রাণ মেরে না দিয়ে বরং ত্রাণ প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে হাতে হাত মিলাতো, এটা হতো সুন্দর উপমা। বেনজির মানবতা। কার টাকা দিতো, আমাদের টাকাই তো আমাদেরকে দিতো। মেরে মেরে নিয়েই তো জমিয়েছে। আবার জমাতো মেরে মেরে। কিন্তু এখন দুঃসময় দেশের। মানুষ বাঁচলে ওদের টাকা আবার ওদের পকেটেই ঢুকবে। কিন্তু লোভের পর্দা বিবেকের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছে। শুভ বুদ্ধির উদয় হবে কীভাবে? একসময় মানুষ বলতো ‘পাঁচবছর পর পর সরকার পরিবর্তন হয়। নেতাকর্মীদের পেটপুরার আগেই ক্ষমতার সময় ফুরিয়ে যায়, দেশের উন্নতি কখন করবে?’ একটা সরকার একটানা দশ বছর থাকতে পারলে পাঁচ বছর খেয়ে পাঁচ বছর কাজ করবে।’

কিন্তু এখন প্রমাণিত হলো, এক সরকার পঞ্চাশ বছর টানা রাজত্ব করলেও বাংদেশের কু-আত্মা নেতাদের পেট ভরবে না। তুমি নেতা, কার নেতা? কীসের জন্য নেতা? একটা পেটের জন্য নেতা হওয়ার প্রয়োজন নেই এতো কষ্ট করে। যদি প্রধানমন্ত্রী এসবের বিরুদ্ধে যান, উল্টো নাটক মঞ্চায়িত হবে তার আঁচলতলেই। চোর নিয়ে বসবাস করাটা বড়ো বিপদ। করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে অন্য সব দেশ যখন অকাতরে অনুদান অর্পণ করছে, তখন আমার দেশে অনুদান চুরির হিড়িক পড়েছে। আর মানুষ খাদ্যের যোগান দিতে ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে। তারপর করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর এ দায় কার?

তোফায়েল আহমদ: শিক্ষক ও কবি

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম

ট্যাগ: তোফায়েল আহমদ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply