দেশে ফিরে আসার ইচ্ছে থাকলেও তারা ফিরতে পারছেন না বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে। তারা সবচে বেশি আতঙ্কিত হচ্ছেন এই ভেবে যে এই অবস্থায় যদি তাদের মৃত্যুও হয়, তাহলে তাদের লাশটাও স্বজনদের কাছে পাঠানো হবে না! সে দেশেই রীতি অনুযায়ী দাফন করা হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলা হবে। যা কারো কাম্য নয়।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করছে সরকার। প্রথমে নির্বিকার থাকলেও পরবর্তীতে বাস, ট্রেন, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, একে একে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এতে বেশ বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষরা। এদিকে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অংশ দেশের বাইরে থাকেন। যাদের আমরা প্রবাসী বলি। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত দেশে যারা আছেন, তাদের নিয়ে স্বজনদের উদ্বিগ্নতার শেষ নেই। তারা কি আবার সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন স্বজনদের কাছে? সর্বদা স্বজনদের মাঝে এখন এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বে সবচে বেশি করোনা আক্রান্ত দেশ হচ্ছে ইতালি, আমেরিকা, জার্মান, ফ্রান্স, স্পেন, ইরান। এর মধ্যে ইতালি, আমেরিকাতেই সবচে বেশি বাংলাদেশি থাকেন বলে জানা যায়। এসব দেশে প্রতিদিন শত’ শত’ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। ফলে এসব দেশে অবস্থান করা প্রবাসীরা ভীষণ উৎকণ্ঠিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। দেশে ফিরে আসার ইচ্ছে থাকলেও তারা ফিরতে পারছেন না বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে। তারা সবচে বেশি আতঙ্কিত হচ্ছেন এই ভেবে যে এই অবস্থায় যদি তাদের মৃত্যুও হয়, তাহলে তাদের লাশটাও স্বজনদের কাছে পাঠানো হবে না! সে দেশেই রীতি অনুযায়ী দাফন করা হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলা হবে, যা কারো কাম্য নয়।
এমন কঠিন, আতঙ্কগ্রস্ত সময়ে প্রবাসীদের নিয়ে চিন্তিত এদেশের স্বজনরাও। তারা রাতে চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত তারা তাদের নিয়েই ভাবছেন। তাদের নামে দান-সদকা করছেন, নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করে দোয়া করছেন। আবার অনেকে মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবেও দোয়া করাচ্ছেন। নামাজ শেষে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলছেন, আমার আব্বা আমেরিকা থাকে, আবার কেউ বলছেন, আমার ছেলে- মেয়ে ইতালি থাকে, কেউ বলছেন আমার ভাই-বোন জার্মান থাকে তাদের জন্য আপনারা দোয়া করুন, তারা যেন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে পারে এবং সুস্থাবস্থায় আবারও দেশে ফিরতে পারে।
ইমাম সাহেবও দু’ হাত তুলে কায়মনোবাক্যে দোয়া করছেন, আল্লাহ তুমি প্রবাসী ভাই-বোনদেরকে করোনাভাইরাস থেকে হেফাযত কর, তাদের সহিহ্ সালামতে দেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করে দাও। সাথে সাথে মুসল্লিরা সমস্বরে বলছেন, আমিন, আমিন। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা মসজিদেই প্রবাসীদের জন্য এভাবে কান্নাকাটি করে আমিন আমিন ধ্বনিতে দোয়া করা হচ্ছে। সবার একটাই চাওয়া- যারা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে দেশ, পরিবার-পরিজনের সুখ, সমৃদ্ধির জন্য ভিনদেশি হয়েছিলেন, তারা যেন এই বিপর্যয়, দুঃসময় কাটিয়ে সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারেন।
জুনায়েদ আহমেদ: স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]