আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংখ্যায় বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনাই প্রবল। উন্নতবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। মানুষ মারা যাচ্ছে সকল আধুনিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও।
থমকে গিয়েছে জীবনযাত্রা, থেমে গিয়েছে কোলাহল। গ্রামগুলোতেও নেই কলরব। আমরা এক প্রকার আতঙ্কিত হয়ে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী আছি। বিশ্বের অনেক ধনী দেশের সরকার জনগণের সব দায়িত্ব নিয়েছে বলেই আগামীর জন্য তাদের তেমন ভাবতে হচ্ছে না। বাংলাদেশে বড় বড় ঋণ খেলাপীদের পাশে এই সরকার সব সময় আছে। তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার বোঝা কাঁধে নেওয়ার ক্ষমতা এই সরকারের রয়েছে। সেই মোতাবেক ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে। আমি ভাবছি, সেই সব আদম সন্তানের কথা, যারা সমাজে সবসময় অবহেলিত। জীবিকার তাগিদে যারা প্রতিদিন বাধ্য হয়ে কলকারখানায়, ইটভাটায় কিংবা কোনো দোকানে অথবা বাস আর রেল স্টেশনে শ্রম বিক্রি করে নামমাত্র মূল্যে। আবার কেউ কেউ আছে, যারা জন্মলগ্ন থেকেই ভিক্ষের ঝুলি পেতে রাস্তায় বসে ভিক্ষে করে পেটের ক্ষুধা নিবৃত্তি করে ।
আত্মরক্ষা করে শহরের অলিগলিতে কিংবা রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে। বংশানুক্রমেই তারা যাযাবর শ্রেণীর, ভিটেমাটি কোনোকালেই ছিল না৷ যারা ঠিকানাহীন, আশ্রয়হীন, স্বজনহীন, সম্বলহীন। যারা বেঁচে থাকে ওভারব্রিজের নিচে, রাস্তার ধারে, রেললাইনের পাশে, বাসস্টেশনে কিংবা বস্তির কোনো ঘুপচি ঘরে। তাদের জন্য সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? জানি না। তারা কি পরিমাণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত চলাফেরা করে যাচ্ছে। যে কোনো সময় তারা আক্রান্ত হতে পারে। এমতাবস্থায় তাদের পাশে না থাকলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। তাদেরকে বাঁচাতে হলে এখনি সরকারকে বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।
সময় কিন্তু পার হয়ে গেছে । বাংলাদেশ সরকার এখন বেশ ধনী। যাযাবর শ্রেণী, ভিক্ষুক, ভিটেমাটি হীন, ভবঘুরে, শ্রমজীবী মানুষদেরকে বাঁচাতে হবে এই দুর্যোগের সময়ে। এই মুহূর্তে বাঁচা-মরার সংগ্রামে তাদের রাষ্ট্রীয় সাহায্য দরকার। স্বাধীন দেশে তাদেরকে এভাবে মরতে দেওয়া যায় না। এসব খেটে খাওয়া মানুষের চাহিদা খুব বেশি না। তাদের জন্য সরকারের কি তহবিল রয়েছে?
আমরা ঔদ্ধত্য দেখিয়েছি এবংএখনো দেখিয়েই চলেছি। যখন প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, তখন আমরা আতশবাজির উৎসব করেছি। এমন একটা উৎসবই একটা দেশকে সংকটে ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
করোনাভাইরাস যদি আমাদের প্রতি আল্লাহ পরীক্ষা হয়েও থাকে, তাহলে ইতিমধ্যেই সেই পরীক্ষায় আমরা ফেল করেছি। অন্য অনেক জাতির চেয়ে প্রস্তুতির জন্য আমাদের অনেক বেশি সময় দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু আমরা প্রস্তুতি নেইনি। আমরা ঔদ্ধত্য দেখিয়েছি এবংএখনো দেখিয়েই চলেছি। যখন প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, তখন আমরা আতশবাজির উৎসব করেছি। এমন একটা উৎসবই একটা দেশকে সংকটে ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কোভিড-১৯-এ বাংলাদেশ এখনো প্রথম দুটি বিন্দুর মধ্যে রয়েছে, তবে খুব অনন্যসাধারণ কিছু না ঘটলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংখ্যায় বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনাই প্রবল। উন্নতবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। মানুষ মারা যাচ্ছে সকল আধুনিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও। এর আগে পৃথিবীতে আরও অনেক কঠিন সময় গিয়েছে। এখন মানুষ অনেক বেশি বুদ্ধিমান ও সংগঠিত। দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি, এই কঠিন সময়কে পরাভূত করার সক্ষমতা মানুষের রয়েছে। করোনা ভাইরাস থেকে সবাই মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। মহান আল্লাহর দরবারে সবার সুস্থ্যতা কামনা করছি।
জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]