নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী দুর্গাপুর শহর। এই শহরে মাদরাসা, স্কুল-কলেজ মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আছে বিশাল বাজার, নদীর কয়লা-বালুর ব্যবসা ও দর্শনীয় অনেক স্থান। বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনার থাবা বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার মত পড়েছে এই শহরেও। তাই সরকারি নির্দেশে প্রায় সবকিছুই এখন বন্ধ। ফলে নেই আগের মত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণা, বালুবাহী ট্রাকের ভ্যাঁপু শব্দ, শ্রমিকদের হাঁকডাক। কমে গেছে পর্যটকদের আনাগোনাও।
সবমিলিয়ে এক অকল্পনীয় স্থবিরতা নেমে এসেছে। দিনে কিছু মানুষের দেখা মিললেও রাত হলেই নেমে আসে ভূতুড়ে নীরবতা। এমন নিস্তব্ধ শহর সেখানকার মানুষ কবে দেখেছিলো তা তরুণরা দূরের কথা, প্রবীণরা পর্যন্তও মনে করতে পারছেন না।
করোনার সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অনেক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েও মানুষকে অযথা বাজারে ঘোরাফেরা, আড্ডা দেয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হিমিশিম খেতে হচ্ছিলো। কিন্তু গত দুদিনে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকায় সরকার নতুন বিধিনিষেধ আরেপ করেছে। তা বাস্তবায়ন করতে জোরালো নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে।
তাই এখন দুইটার দিকেই বন্ধ করতে হচ্ছে সব দোকানপাট। সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে। একটু পরপর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। কাউকে বাহিরে ঘোরাফেরা করতে দেখলেই জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। এই দুই বাহিনীর কড়া নজরদারিতে বর্তমানে দুর্গাপুরের মানুষ পুরোপুরি অঘোষিত ‘লকডাউনে’ অবস্থান করছে।
এদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট, হাটবাজার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন শহর ও গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষ। কাজকাম বন্ধ। জমানো টাকাপয়শাও শেষ। সরকারের ঘোষিত ত্রাণ এখনো পর্যন্ত সবার হাতে পৌঁছেনি বলে অভিযোগ। আর দরিদ্র মানুষ অনুপাতে সরকারি ত্রাণ যা এসেছে তাও বড়বেশি অপ্রতুল বলে জানা গেছে।
এরমধ্যে আবার জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতি করার অভিযোগও আছে। এমতাবস্থায় এসব দুস্থ, অসহায় মানুষের দাবি, সরকার যেন তাদেরকে এই দুঃসময়ে তিনবেলা খেয়েপড়ে বাঁচতে পারে- এ পরিমাণ চাল-ডালের ব্যবস্থা করে দেয়া। তা না হলে করোনায় বেঁচে গেলেও না খেয়ে মরার আশঙ্কা প্রবল।
জুনায়েদ আহমেদ : স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]