জনগণ যে তাদের কখনোই বিশ্বাস করেনি তা নয়। বহুবার বিশ্বাস করেছে আর ঠকেছে। অন্যদের যে বিশ্বাস করে খুব একটা লাভবান হয়েছে বা হচ্ছে তা নয়। ধর্মের মুখোশ পরা, মানবতার মুখোশ পরা, আইনের বা ‘বিচারকের’ মুখোশ পড়া- নিজের স্বার্থের বেলায় সব শালা একই, কোনো পার্থক্য নেই।
সাধারণ মানুষের সেবা এখন তলানিতে। ভিআইপি ও ভিভিআইপি ছাড়া সেবা দূরের কথা, যথার্থ মূল্য দিয়েও প্রয়োজনীয় বস্তু জুটে না। প্রতিটি সেক্টরে সেবার নামে চলছে চরম প্রতারণা ও নগ্ন লুটপাট। একটি সরকার পাঁচ বছর যে জুলুম-অত্যাচার ও দুর্নীতি করে, পরবর্তী সরকার তা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। এরপর আবার সেই সরকার এসে চারগুণ করে। স্বাধীনতার পর থেকে এভাবেই চলে আসছে বাংলাদেশ। আর এসবের পেছনে রয়েছেন রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সম্পাদক ও সুশীলের মুখোশ পরা একদল মানুষ।
তারা মিডিয়ায় প্রচারণা পাওয়ার ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভাগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সবসময়ই প্রথম সারিতে থাকেন। তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ-সম্পত্তি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ার সাথে সাথেই জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ে। ভ্যাট বাড়ে, জ্যাম বাড়ে, সুদ-ঘোষ-দুর্নীতি বাড়ে, ছিনতাই-ধর্ষণসহ সর্বপ্রকার আকাম-কুকাম বাড়ে। কথিত ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের অবস্থা যত ভালো হয়, যত ‘উন্নত’ হয়, জনসাধারণের অবস্থা তত তেজপাতা হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটার সাথে ওটার এক ‘নিবিড় সম্পর্ক’ আছে।
এই দীর্ঘ দীর্ঘ বছর রাজনীতি করে, বিদেশি গোলামী করে, বিদেশি শিক্ষাি/উপশিক্ষা/ডক্টরেট অর্জন করে, সর্বোচ্চ প্রচারণা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েও যারা এই ‘নিবিড় সম্পর্কটা’ নিয়ে কথা বলে না, বলতে পারে না অথবা অতিরিক্ত দালালী করতে গিয়ে চিহ্নিতই করতে পারে না, শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছে তাদের আর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা বা আবেদন থাকে না। জনগণ যে তাদের কখনোই বিশ্বাস করেনি তা নয়। বহুবার বিশ্বাস করেছে আর ঠকেছে। অন্যদের যে বিশ্বাস করে খুব একটা লাভবান হয়েছে বা হচ্ছে তা নয়। ধর্মের মুখোশ পরা, মানবতার মুখোশ পরা, আইনের বা ‘বিচারকের’ মুখোশ পড়া- নিজের স্বার্থের বেলায় সব শালা একই, কোনো পার্থক্য নেই।
কিছুদিন ধরে ‘বাংলার আকাশে বাতাসে’ একটা আজব খবর শোনা যাচ্ছে। কিছু চরম ধান্ধাবাজ, মূর্খ, প্রতারক ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ চালাচ্ছে। যারা সারাজীবন চাকরি, গোলামি ও দালালী করে কাটিয়েছে, বাইরের প্রভুদের ‘শিক্ষায়’ শিক্ষিত হয়েছে, তারা নাকি বাংলাদেশে পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের মানুষকে দুমুঠো ভাত দেবে। অথচ তাদের অঢেল প্রাপ্তির ভেতরেও তারা সামান্য পদ-পদবী ও পয়সার লোভ সামলাতে পারে না। তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারির অন্ত নেই।
এখন কেন? পাঁচ বছর আগেই কেন তারা এক কাতারে আসতে পারেনি? দশ বছর আগেই কেন পারেনি? কেন তারা তাদের এই দশ-বিশ-ত্রিশ বছরের রাজনীতিতে বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি? যারা নিজেদের সর্বোচ্চ শিক্ষা, দীক্ষা, প্রচারণা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েও নিজেদের বাকস্বাধীনতাই প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, তারা কী করে জনগণের বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করবে? যাদের নিজেদের মস্তিষ্ক বিদেশি প্রভুদের শিক্ষাব্যবস্থা, ধ্যান-ধারণার কাছে বহু আগেই বিক্রি হয়ে আছে, তারা কীভাবে গণমানুষের ‘চিন্তার স্বাধীনতা’ প্রতিষ্ঠিত করবে?
আপনি কি মনে করেছেন তারা মানুষের জন্য আজ ঐক্যবদ্ধ হতে চাচ্ছে? কক্ষনো নয়, তারা এই শেষ বয়সে, মৃত্যুর আগে একটু ক্ষমতা চায়। একটু পদ ও সম্মান চায়। নিজেদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পাঠিয়ে, সুইস ব্যাংকে তাদের জন্য কিছু টাকা জমা রেখে, আর যারা দেশে থাকতে চায় তাদের জন্য সামনের পথটুকু পরিষ্কার করে নিশ্চিন্তে একটু ঘুমোতে চায়। ব্যস, এতটুকুই তাদের চাওয়া। তাদের চাওয়া খুব সামান্যই। কিন্তু ‘শালার জনগণ’ বুঝলো না! বুঝবে কী করে? জনগণ তো সব মূর্খ, অশিক্ষিত, অপদার্থ, নিমক হারাম, অকৃতজ্ঞ। এদের শিক্ষার জন্য আমেরিকা-ব্রিটেন থেকে প্রভু ভাড়া করে আনা উচিত। আমেরিকা-ব্রিটেন কত উন্নত! কত শিক্ষিত! কত সভ্য ও ক্রিয়েটিভ!
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম, সম্পাদকের কলাম
[sharethis-inline-buttons]
অসাধারণ লিখেছেন বড় ভাই।
গোলাম কোন দিনই প্রভুত্ব অর্জন করতে পারে না। তাই তারা কখনো বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
গোলাম কোন দিনই প্রভুত্ব অর্জন করতে পারে না। তাই তারা কখনো বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। ভাল থেকো।