তিনি বলেন, “আমার পোলাডা অনেকদিন ধরে নতুন জামা কেনার বায়না ধরে আছে। আমি পোলাডারে অনেক আগে থেকেই বলে আসছি- বাবা, নতুন জামা-কাপড় এখন বাজারে নাই, ঈদ আসলে কিনে দেব। এখন ঘরে চাল-ডালই নেই, সেখানে ঈদের জামা! কিন্তু ঈদে নতুন জামা-কাপড় কিনে না দিতে পারলে পোলাডার কাছে কি জবাব দেব?”
একজন রিকশাওয়ালা। তার রিকশায় চড়েছিলাম গতকাল, দুপুর বারোটায়। আসছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফকিরাপুল থেকে শিমরাইলকান্দি। দেশ দর্শন এর প্রধান অফিস থেকে সম্পাদকীয় কার্যালয়ে। তার নামটা মনে নেই। অবশ্য রিকশাওয়ালার নাম মনে রাখার কোনো কারণও নেই, অবচেতনে এমনটাই সেট করা আছে।
ছবিও তুলে রাখতে পারিনি মোবাইলে চার্জ নেই বলে। থাক না, একজন রিকশাওয়ালার নাম জেনে কী হবে? ছবি দিয়েইবা কী হবে? রিকশাওয়ালাদের নাম-পরিচয়-ছবি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এদের কোনো নাম-পরিচয়-ছবি থাকতে নেই। মন্ত্রী-এমপি, মেম্বর-চেয়ারম্যান, কোনো লেখক-কবি, বুদ্ধিজীবী বা অন্তত এলাকার কোনো রাজনৈতিক ‘বড় ভাই’ হলেও একটা কথা ছিল।
যা হোক, যার কথা বলছিলাম, তার ঘরে একবেলা খাবার নেই। পুষ্টির অভাবে পরিবারের পাঁচ জনের মধ্য থেকে একজন না একজন সারাবছর কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত থাকেই। টাকার অভাবে ছোট সন্তানটার স্কুলের ফি ২-৩ মাস আটকে থাকে। শিক্ষকদের কাছে থেকে শুনতে হয় নানা ধরনের কথা। চার মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি, রিকশা চালানো বন্ধ। ত্রাণের জন্য গেলে ঘণ্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তারপর আবার কোনো কোনো সময় ত্রাণ বিতরণকারীরা বলে দেয়, আপনাকে ত্রাণ দেওয়া যাবে না। আমরা কাদেরকে ত্রাণ দেব তা আগে থেকেই নির্ধারিত।
এই নাম-পরিচয়হীন, গুরুত্বহীন মধ্যবয়েসী রিক্সাওয়ালাটি আরো জানান, “দেশর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক ছিল, তখনই চলতে অনেক সমস্যা হতো। আর এখন করোনাভাইরাসের কারণে রিকশা চালানোও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অথচ আমাদের দ্বায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। বড় বড় ব্যবসায়ীদের দোকান তিন মাস কেন, ছয় মাস বন্ধ থাকলেও কিচ্ছু হবে না। তাদের ব্যাংকে লাখ লাখ জমানো টাকা আছে। তারা মাস কি মাস চলতে পারবে। কিন্তু আমরা কীভাবে চলব, কে নেবে আমাদের দ্বায়িত্ব? আমরা যে অসহায়! কার কাছে বলব এ কথা, আর বললেওবা কে শুনবে?”
তিনি বলেন, “আমার পোলাডা অনেকদিন ধরে নতুন জামা কেনার বায়না ধরে আছে। আমি পোলাডারে অনেক আগে থেকেই বলে আসছি- বাবা, নতুন জামা-কাপড় এখন বাজারে নাই, ঈদ আসলে কিনে দেব। এখন ঘরে চাল-ডালই নেই, সেখানে ঈদের জামা! কিন্তু ঈদে নতুন জামা-কাপড় কিনে না দিতে পারলে পোলাডার কাছে কি জবাব দেব?”
হ্যাঁ, এরই নাম ‘সাম্প্রতিক বাংলাদেশ’। যেখানে মধ্যবিত্তরাই ভেঙ্গে পড়েছে, সেখানে এসব রিকশাওয়ালা টিকশাওয়ালাদের গুণার টাইম আছে? বেচারারা, তোমাদের রিকশাটা যে এখনো আছে তাই শুকরিয়া জানাও। তোমাদের এই রিকশা কে দিয়েছে? রিকশা চালানোর এই পথ কে করেছে?
আবির হোসাইন জসিম: স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, বিশেষ প্রতিবেদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]