শুক্রবার দুপুর ২:৫৯, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত (পর্ব-২)

খায়রুল আকরাম খান

আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি দলের উচিৎ- আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো যাতে স্বেচ্ছায় মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে এর যর্থাথ ব্যবস্থা করা । প্রয়োজনে উক্ত দল গুলোর সাথে উদার মন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে আইনের শাসনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য গত নয় বছরে তারা বেশ কিছু প্রশসংনীয় কাজ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জঙ্গী দমন, যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার কার্যকর ও ৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের রায় আংশিক কার্যকর। এসব আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সাহসী ও গঠনমুলক পদক্ষেপ বলা যায়।

বিগত ৪৭ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যেসব রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছে, সেগুলোর সুষ্ঠু বিচার হওয়া বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক হত্যা-খুন-গুম ও ভোট ডাকাতির সংস্কৃতি স্বাধীনতার পর থেকেই অব্যাহত আছে। এটা স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থী। এসব হত্যাকাণ্ড যে এখনো হচ্ছে। এটি ঠেকানোর সঠিক পথ কী?

উন্নয়ন আগে না গনতন্ত্র আগে- সেটা বলে তো সরকার পতন বা হত্যা-খুন-গুম বন্ধ করা যাবে না। তাই দেশের আপামর মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করতে হবে। অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। আইনের শাসন, বাক স্বাধীনতা, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসব নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থেকে কিছু বলছে না। কিংবা তাদের আমলে যেসব দুর্নীতি হয়েছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তা সংশোধনের জন্য নতুন কিছু অঙ্গীকার তারা দেশবাসীর নিকট করতে পারবে কি?

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আলাদা অর্থ না দিয়ে গণতন্ত্রের বিকাশের স্বার্থে তা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। সরকারী কাজের দুর্নীতি এখন সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সৎ, দক্ষ ও গুণী মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান আশানুরুপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। রফতানী নির্ভব ব্যবসা বাড়ছে না। যদি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল না থাকে তা হলে গনতন্ত্র তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই এ কাজগুলো দৃঢ় হাতে করতে হবে।

আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি দলের উচিৎ- আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো যাতে স্বেচ্ছায় মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে এর যর্থাথ ব্যবস্থা করা । প্রয়োজনে উক্ত দল গুলোর সাথে উদার মন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

‌‌‌নির্বাচনে জয়ী হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, আর পরাজিত হলে কারচুপি হয়েছে– গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে টেকসই করার জন্যে আমাদেরকে এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারো কারো কাছে নির্বাচন কমিশনের পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই অর্থহীন মনে হতে পারে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন মানেই এক ধরনের যুদ্ধ। ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, গোলাগুলি, হানাহানি , মারামারি- এক কথায় বলা যায়, সহিংসতা হচ্ছে নির্বাচনীয় সংস্কৃতির অন্যতম দিক। আর এই সহিংসতা নির্বাচনে ভোটযুদ্ধের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে ভবিষ্যতে যে কোনো নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নটি অর্থহীন বলে একটি ধারণর জন্ম ইতি মধ্যেই হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে সর্বসাধারণের মধ্যে এর বিস্তার হচ্ছে।

অবশ্য বর্তমান ক্ষমতাসীনরা এটাই বারবার চেয়ে আসেছে। বিগত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে উপজেলা, পৌরসভা, ইউপি ও সদ্য ২০১৮ সালের তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা সর্বসাধারনের মনোজগতে এমন একটি মনস্তাত্বিক ধারনার জন্ম দিতে চায় যে, ভোটের আর প্রয়োজন নেই; প্রয়োজন উন্নয়নের। তবে আমাদের দেশের সব রাজনৈতি দল গুলোর জন্য ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চরম শিক্ষা হচ্ছে- নির্বাচন বয়কট আসলে প্রতিবাদ জানানোর কোনো সঠিক পন্থা নয়। কারণ সংকটকালে পরাজিত হলেও কার্যত দলটি শক্তপোক্ত একটি ভিত্তি পায়। তবে এই ধরনের নির্বাচনী সংস্কৃতির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সময়ে তৃণমুল পর্যন্ত নির্বাচনী কারচুপি ও পরবর্তী পর্যায়ে রাজনৈতিক সাংঘর্ষিক বৈরিতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে।

এ সংস্কৃতি সমাজে অর্ন্তগত অস্থিরতা, ভারসাম্যহীনতা ও রাজনৈতিক শূন্যতাকে প্রকট এবং ভয়ংকর করে তুলবে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ এবং চরমপন্থার বিস্তার সহজতর হতে পারে। যারা সংক্ষুদ্ধ, বিক্ষুদ্ধ, বিতাড়িত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে সৃষ্ট প্রতিরোধ প্রতিহিংসার মনোবৃত্তি যে সুস্থ ও স্বাভাবিক পথে চলবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। সুস্থ রাজনৈতিক পন্থার অনুপস্থিতিই উগ্রপন্থার জন্ম দেয়। সুস্থ ও গঠনমুলক রাজনীতি উদার নৈতিক গনতন্ত্রের জন্ম দেয়, যা উন্নয়নের পথকে সুগম করে। ফলে সরকারী বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক দাতা এবং সাধারণ নাগরিকরাও একটি সুন্দর আগামীর পথে প্রগতিতে উৎসাহী হয়।

উন্নয়ন মানে মুক্তি। সে অনুযায়ী গণতন্ত্র মানেই উন্নয়ন। উন্নয়ন বিষয়টির সঙ্গে রাজনৈতিক ও মানবিক মুক্তি, সামাজিক সুযোগ, স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা ও সুরক্ষামূলক নিশ্চয়তার বিষয়গুলো যুক্ত।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের প্রতিটি লোক নিজ নিজ পেশায় কর্মদক্ষতার উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নয়ন হবে। গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী হবে। রাজনৈতিকরা যে দলেরই হোক জাতীয় ইস্যুগুলোতে বিভেদ বা পার্থক্যের দেয়াল তোলা ঠিক নয়, তাতে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে আলাদা করার কোনো প্রয়োজন নেই। সুতরাং উন্নয়ন ও গনতন্ত্র- দুটোই সম্পূরক- উভয়ের এবং দুটোই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply