একটি দেশ, একটি জাতি কতটুকু নির্বোধ হলে, রাষ্ট্র ও প্রশাসন কী পরিমাণ নিস্তেজ হলে, সম্পাদকগণ কতটুকু বোধ-বুদ্ধি-আত্মমর্যাদাহীন হলে সংবাদ ও সাংবাদিকতার নামে মিডিয়া এ ধরনের প্রহসন চালাতে পারে তা আন্দাজ করার শক্তি আমাদের নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে সুস্থধারার কোনো গণমাধ্যম আছে বলে আমাদের জানা নেই।
যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া-পরশীর ঘুম নেই। সুদূর আমেরিকায় নির্বাচন, এদিকে বাংলাদেশের মিডিয়াজগতে ঘুম হারাম। দৈনিক পত্রিকায় দিনের পর দিন প্রধান শিরোনাম, তথাকথিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, কলামবাজী, ভোটাভুটি, চুলচেরা বিশ্লেষণ ইত্যাদি। টিভি চ্যানেলগুলোতেও একের পর এক লিড নিউজ, টকশো, নানা হিসাব-নিকাশ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-উত্তেজনা। সুতরাং জনগণ এর বাইরে থাকে কী করে। মনে হয় মার্কিন নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশে দুয়েক সপ্তাহ জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা উচিত ছিল। তাহলে দেশজাতি নির্বাচনটাকে মোটামুটি ‘উপভোগ’ করতে পারত। আর চটি মিডিয়া, চটি সাংবাদিক-কলামবাজ-বুদ্ধিজীবীরা মন ভরে তাদের নিত্যনতুন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ-আইডিয়া হাজির করতে পারত।
এমনিতেও কম যায়নি। একটি কথিত নির্বাচন ‘উপভোগ’ করাতেই জাতির অন্তত আগামী দশ বছরের মেধা-মনন শুষে নেয়া হয়েছে। একটি দেশ, একটি জাতি কতটুকু নির্বোধ হলে, রাষ্ট্র ও প্রশাসন কী পরিমাণ নিস্তেজ হলে, সম্পাদকগণ কতটুকু বোধ-বুদ্ধি-আত্মমর্যাদাহীন হলে সংবাদ-সাংবাদিকতার নামে মিডিয়া এ ধরনের প্রহসন চালাতে পারে তা আন্দাজ করার শক্তি আমাদের নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে সুস্থধারার কোনো গণমাধ্যম আছে বলে আমাদের জানা নেই।
এসব কথা বলারও জায়গা নেই। কারণ শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে সংসারজীবনের সমাপ্তি পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি নাগরিকই কেবল ব্যক্তিগত-পারিবারিক আর্থিক চাহিদা-বিলাসিতা পূরণেই দৌড়ের ওপর থাকে। ‘শেখানো-বলানো-বুলি আওড়ানো’ ছাড়া কিছু ভাববার তাদের সুযোগ নেই। এসব বলাবলি লেখালেখি করাটাও লজ্জার। কারণ জাতিটা আমাদেরই, বা আমরা এ জাতিরই। একটি জাতির কি খেয়েদেয়ে নিজস্ব কোনো কাজ নেই? নিজেদের কোনো সমস্যা-সম্ভাবনা নেই? স্বয়ং আমেরিকানরাও তাদের নির্বাচন নিয়ে এতটা আবেগ-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় গা ভাসায়নি। তারা প্রতিদিন অফিসে যাচ্ছে, আসছে, খাচ্ছে, ঘুমুচ্ছে। এর ভেতরে কোনোমতে দশ মিনিট সময় বের করে ভোট দিয়ে আসছে। তারা জানে, যা লাউ তাই কদু। নীতি-আইন সব ঠিক করা আছে। আমেরিকার প্রয়োজনে যুদ্ধ, তৃতীয় বিশ্বকে শোষণ, গুপ্তচরবৃত্তি চলবেই। অবশ্য দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। অনিশ্চয়তা বাড়ছে। সেটা সারা বিশ্বেই।
শিক্ষিত তরুণরা ‘অনলাইন ইনকাম’ জ্বরে আক্রান্ত। ফেসবুক-ইউটিউবে পর্নো, চটি, হাস্যকর, পাগলামিপূর্ণ ভিডিও তৈরি ও আপলোড করছে একের পর এক। ইনকামের জন্য। বাড়ি-ঘর জায়গা-জমি বিক্রি করে ইউটিউবে ‘বিনিয়োগ’ করছে, ‘অনলাইনে’ বিনিয়োগ করছে, গুগল থেকে ‘ইনকাম’ করবে। শুধু তারা কেন, সম্ভবত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর আগামী তিন প্রজন্মের বোধ-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা সব কিনে নেয়া হয়েছে।
আমেরিকায় একটু দেরিতে হচ্ছে এই যা। নইলে বাংলাদেশ যা, পাকিস্তান যা, আমেরিকাও তা। হিলারির জায়গায় শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া হলে তারাও হিলারির মতোই প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘ভদ্র আচরণ’ (করমর্দন, মেনে নেয়া কিংবা প্রতিপক্ষকে স্বাগত জানানো) করতেন। আবার হাসিনা-খালেদার জায়গায় হিলারি হলেও সেই একই কাণ্ড- মানে চুল ছেঁড়াছেড়ি ঘটত। রাস্তায়-হাঁট-বাজারে জ্বালাও-পোড়াও চলত। হিসাবটা একটু জটিল, তবে বোঝাটা অসম্ভব নয়। মূর্খবিশ্ব ইউরোপ-আমেরিকার যে চাটুকারিতা, প্রভুভক্তি-অন্ধভক্তি দেখিয়ে অভ্যস্ত তার মুখোশ খুলে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ওদের অনুসরণ এবং গুণগান গাওয়া দূরের কথা, ওদের সমালোচনা করাটাও আমাদের মতো একটি ত্যাগী, সাহসী ও সংগ্রামী জাতির সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। অথচ ধর্ষকাম মিডিয়াগুলো কেবল মাতামাতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, একের পর এক কীসব কাণ্ড-কারখানাই না করে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। বলার কেউ নেই। শোনার কেউ নেই। এভাবেই কি চলতে থাকবে বাংলাদেশে চটি মিডিয়ার প্রহসন? ইদানিং অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো সম্ভাবনার পরিবর্তে নতুন নতুন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আরো পড়ুন> এভাবেই যাবে আমাদের দিনকাল?
এদিকে শিক্ষিত তরুণরা ‘অনলাইন ইনকাম’ জ্বরে আক্রান্ত। ফেসবুক-ইউটিউবে পর্নো, চটি, হাস্যকর, পাগলামিপূর্ণ ভিডিও তৈরি ও আপলোড করছে একের পর এক। ইনকামের জন্য। বাড়ি-ঘর জায়গা-জমি বিক্রি করে ইউটিউবে ‘বিনিয়োগ’ করছে, ‘অনলাইনে’ বিনিয়োগ করছে, গুগল থেকে ‘ইনকাম’ করবে। শুধু তারা কেন, সম্ভবত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর আগামী তিন প্রজন্মের বোধ-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা সব কিনে নেয়া হয়েছে। এরা বাঁকাটা দেখে, সোজাটা না। এদের কাছে সোজাটা বাঁকা, আর বাঁকাটা সোজা। নইলে কোন্ কারণে মাটির জমি বিক্রি করে অনলাইনের জমি কেনে? মেধা-শ্রম সব ধুয়ে-মুছে দিয়ে তথাকথিত ডিজিটালে মেতে উঠে? অনলাইন-ইউটিউবে আয় আর মৌলিক উৎপাদনশীলতায় সম্পৃক্ত হওয়া এবং এগুলো যেন রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পলিসি শোষণ করতে না পারে সেদিকে নজর দেয়ার পার্থক্য বোঝার মতো কোনো চিন্তা চেতনা কি এদেশে অবশিষ্ট নেই? আজ যারা গুগল থেকে ইনকাম করছে, তারা কি ভাবতে পারছে যে অতিশীঘ্র তাদের জাতিকে আবার সেই দীর্ঘমেয়াদি গোলামীর শেকল পরতে তৈরি থাকতে হবে?
জানি, এসব লিখে কোনো লাভ নেই। অরণ্যে রোদন। এ লেখাটাও লেখা নামের আবর্জনা এবং আক্রমণাত্মক পাগলামির বাইরে নয়। তবু একজন নগণ্য লেখক-চিন্তকের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ ও হতাশাবোধ থেকে দু’কলম লিখতে হয়। তাছাড়া মাঝে মধ্যে কিছুটা পাগলামি করা ছাড়া পাগলের সমাজে টেকা দায়। নতুবা মৌলিক কিংবা প্রাসঙ্গিক চিন্তা-চেতনার গভীরে না গিয়ে এসব হাল্কা-পাতলা বিষয়ে কলম ধরার রুচি নেই।
এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী একটি জাতি শোষিত বঞ্চিত হবার পর সে জাতি আরো অনেক আগেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবার কথা ছিল। অথচ তারা কি না ভিনদেশি নারী-পুরুষ-নির্বাচন-ধর্ষণ ইত্যাদি নিয়ে মত্ত থাকে দিনের পর দিন! জাতীয় প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ধারাবাহিক লিড…!
শিক্ষা অসাড়, রাজনীতি অসাড়, ধর্মীয় প্রচলিত ওয়াজ-নসীহত-বক্তব্যগুলো বড় অসাড়; পাগলামী, হাস্যকর। সুতরাং মিডিয়াকে দোষ দিয়ে লাভ কি? আমাদের ভাবা দরকার, মিডিয়ার ক্ষেত্রে কেন প্রিন্ট থেকে অনলাইন দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে? কেন ফেসবুক ইউটিউব জনপ্রিয়? কারণ শিক্ষা, রাজনীতি ও চিন্তাক্ষেত্রে দিন দিন আবর্জনার পরিমাণ বাড়ছে। জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে সংবাদ, চিন্তা ও মতামত বৃদ্ধিও এর অন্যতম কারণ। এত আবর্জনা, চিন্তা ও মতামত প্রিন্টের পক্ষে ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই চিন্তা ও একটিভিটির স্রোত ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে স্থানান্তরিত হচ্ছে। যে প্রিন্টগুলো এখনো টিকে আছে, আমার মনে হয় সেগুলোর সংবাদ, প্রতিবেদন, কলামের মানও যেহেতু একই, তাই সেগুলোও অনলাইনে চলে যাওয়া উচিত। শুধু শুধু কাগজ-কালির অপচয় করে লাভ নেই। বিশেষ মান ধরে রাখতে না পারলে বা বিশেষ মানে উন্নীত হতে না পারলে প্রিন্ট-প্রকাশের প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে জাতীয় বেকারত্বের হার কমাতে না পারলে, জাতীয় অর্থনৈতিক পলিসি পরিবর্তন করতে না পারলে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা ও ক্ষুদ্র পুঁজি টিকিয়ে রাখতে না পারলে শুধু মিডিয়া ও সাংবাদিকতা নয়, প্রতিটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রই ধ্বংসের মুখ দেখবে। চটি ও ধর্ষকামে পরিণত হবে।
এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী একটি জাতি শোষিত বঞ্চিত হবার পর সে জাতি আরো অনেক আগেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবার কথা ছিল। অথচ তারা কি না ভিনদেশি নারী-পুরুষ-নির্বাচন-ধর্ষণ ইত্যাদি নিয়ে মত্ত থাকে দিনের পর দিন! জাতীয় প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ধারাবাহিক লিড…! সেই তথাকথিত নির্বাচন মাস কয়েক আগে শেষ হয়ে গেলেও আমাদের আগ্রহ এখনো খুব একটা কমেনি। এরচেয়ে লজ্জার, অপমানের, হতাশার আর কী হতে পারে?
একটি সামগ্রিক চিন্তাগত জাগরণ ও বিপ্লব অপরিহার্য। এর জন্য যে মাল-মসলা দরকার তা সংগ্রহে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে দক্ষদের কিছুটা ত্যাগ, বিলাসিতা পরিহার, আর্থিক ক্ষতি স্বীকার, গতানুগতিকতাকে পাশ কাটানো, সস্তা জনপ্রিয়তাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানো তো লাগবেই। বিশেষ করে মিডিয়াকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেটা কিভাবে সম্ভব তা নিয়েও আমাদের পথ খোঁজা ও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।
একটি পুরনো লেখা
জাকির মাহদিন : সমাজ-গবেষক, কলামিস্ট
zakirmahdin@yahoo.com
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম, শিক্ষা-গণমাধ্যম, সম্পাদকের কলাম
[sharethis-inline-buttons]
আসলে দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা চেতনা বোধশক্তি একেক জনের এক এক রকম। আপনি অনেক দুরের দেশ আমেরিকার রাষ্ট্রপতি র্নিবাচন নিয়ে আমাদের দেশের ইলিকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত আগ্রহ আপনার নিকট অনাবশ্যক বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়েছে। অবশ্য আমেরিকা অনেক দুরের দেশ হলে কি হবে
পৃথিবীর প্রায় দুইশত দেশের মধ্যে আমেরিকা এক নম্বর দেশ। আর পৃথিবীর বাকী সব দেশ ক্রমান্য়য়ে সর্ব বিষয়েই আমেরিকার নীচে। যেমন আমেরিকার টাকা অর্থাৎ ডলার পৃথিবীর সব দেশে সমানভাবে চলে। অথচ আর কোন দেশের টাকা পৃথিবীর সব দেশে চলে না। সামরিক শক্তি আমেরিকা পৃথিবীর সব দেশকে জলে,স্থলে,অন্তরীক্ষে সমান ভাবে আঘাত হানার শক্তি রাখে,পৃথিবীর সমগ্র জলভাগ এবং পৃথিবীর উপরিউস্ত সমগ্র আকাশ আমেরিকার রাডার এবং স্যটেলাইটের আওতাধীন। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে মানুষ মনে মনে সারা পৃথিবীর প্রেসিডেন্ট মনে করে। বাস্তবে হয়ত এর কোন সামান্যতম অস্ত্বিতও নেই।কথার কথা, তেমনিই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশের মিডিয়ার অতিরিক্ত বারাবাড়ি ও উচ্ছাস অনেকটা এরকমই। আসলে সাধারন নাগরিক/ভোটার হিসাবে একজন মানুষ তার নিজস্ব এলাকার স্থানীয় ও নিজ দেশের জাতীয় র্নিবাচনে অংশগ্রহন করাই যথেস্ঠ।
KK DC hop kg ch mcf ch BBC
Kg duo on CD dell kg fail if shi