রবিবার রাত ৮:২৫, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষা নাকি ব্যবসা?

দেলোয়ার হুসাইন

প্রায় সমস্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদেরই শিক্ষার চেয়ে ব্যবসায়ে মনোযোগ বেশি। আর সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এ জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দিন দিন ভয়াবহভাবে অবনতি ঘটছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক দুর্বলদের জন্য থাকছে না বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। যা আছে তা মূলত প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।

ইউনির্ভাসিটি অব সাউথ আফ্রিকার প্রবেশদ্বারে লেখা রয়েছে- “কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রয়োজন নেই। বরং সে জাতির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় প্রতারণার সুযোগ দিলেই হবে। কারণ এভাবে পরীক্ষা দিয়ে তৈরি হওয়া ডাক্তারদের হাতে রোগীর মৃত্যু হবে। ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা নির্মিত দালান-কোঠা-ইমারত ধ্বংস হবে এবং অর্থনীতিবিদদের দ্বারা দেশের আর্থিক খাত দ্রুত দেউলিয়া হয়ে যাবে। এ ছাড়া বিচারকদের হাতে বিচারব্যবস্থার কবর রচনা হবে। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মানে হলো, একটি জাতির অবলুপ্তি।”

অথচ আমরা আজ এমন একটি দেশে এবং এমন একটি সংকটময় সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রায় সমস্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদেরই শিক্ষার চেয়ে ব্যবসায়ে মনোযোগ বেশি। আর সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এ জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিন দিন ভয়াবহভাবে অবনতি ঘটছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক দুর্বলদের জন্য থাকছে না বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। যা আছে তা মূলত প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। তাই সুন্দর একটি সমাজ ও জাতির বিনির্মাণের জন্য প্রথমেই সুশিক্ষা নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। আর সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

গত কিছুদিন আগে সুবিধাবঞ্চিতদেরকে সুযোগ করে দিতে ফ্রিল্যান্সিং ও আইসিটিতে দক্ষ জনবল তৈরি করার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অপটিমাম আইটি ‘গ্রাফিক্স ডিজাইন উইথ ফ্রিল্যান্সিং’ এ ১০০% স্কলারশিপ প্রদান করে। আমাদের এই স্কলারশিপের বিষয়টি অনেক আইটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদেরই হয়তো পছন্দ হয়নি। তাই আমার পরিচিত একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- “তাছাড়া এখন তো আবার ফ্রি স্কলারশিপও শুরু হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, শুধু বড় বড় অফার দিয়েই যে স্টুডেন্ট পাওয়া যায় তা নয়। স্টুডেন্ট পাওয়ার বা অফার দেওয়ার বিভিন্ন টেকনিক আছে, আমরা সেগুলো ফলো করতে পারি।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। তাই সুন্দর একটি সমাজ ও জাতির বিনির্মাণের জন্য প্রথমেই সুশিক্ষা নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। আর সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

ডিয়ার ফ্রেন্ড, স্কলারশিপ দেওয়া হয় যারা অর্থনৈতিক কারণে আগ্রহ থাকা সত্বেও শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাদেরকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ, যার যার অবস্থান থেকে সমাজের জন্য কিছু করা। আর সে চিন্তা থেকেই স্কলারশিপ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে ‘অপটিমাম আইটি’ কর্তৃপক্ষ। তাই স্কলারশিপকে হেয় করে কোনো কথা বলার অধিকার কারো আছে বলে আমি মনে করি না।

সর্বোপরি আমি একটি কথাই বলব, আসুন আমরা সবাই মিলে ব্যবসার জন্য নয় বরং মানসম্মত ও উন্নত শিক্ষার জন্য একাত্মতা ঘোষণা করি। একটি সুস্থ-সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করি। একমাত্র মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থাই পারে একটি সুন্দর সমাজ ও জাতি গড়ে তুলতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আধুনিক বিশ্বে কম্পিউটার শিক্ষাও মৌলিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। আর এ সুযোগে অনেকেই এ সেক্টরেও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। প্রতিটি জেলাশহরে রাতারাতি গড়ে উঠছে অনেকগুলো কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার।

এসব কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ওয়েব ডেভেলপার নেই। প্রচুর পয়সা খরচ করে এগুলোকে রাতারাতি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে ফেলা হয়েছে অথবা শুরুই হয়েছে বিশাল ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে। তারা ভুলে যান যে এটিও একটি শিক্ষা সেক্টর।

এসব ক্ষেত্রে ব্যবসা মূল উদ্দেশ্য নয় বরং জাতির সেবা ও দক্ষ জনবল তৈরিই প্রধান লক্ষ্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘অপটিমাম আইটি’ দীর্ঘদিন ধরেই এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং সঙ্কীর্ণ স্বার্থে কারো সঙ্গে শত্রুতা বা হিংসা নয়, আসুন বৃহত্তর স্বার্থে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করি। আমাদের স্বপ্নের ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে কিছু স্বপ্নবান ও দক্ষ জনবল সরবরাহ করি।

 

লেখক: দেলোয়ার হুসাইন

চেয়ারম্যান: অপটিমাম আইটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

 

ক্যাটাগরি: পাঠকের মত,  প্রধান কলাম,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ: দেলোয়ার হুসাইন

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply