শনিবার সকাল ৯:১৬, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

আমাদের পরিবর্তনই সমাজ পরিবর্তন

সমাপ্তি চক্রবর্তী

সামাজিক পরিবর্তন যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হয় না- এটি এখন প্রমাণিত। সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সেই মানুষের পরিবর্তন, যাদের নিয়ে সমাজ গঠিত।

মানুষ ভালো উদ্দেশে মন্দ কর্মকে সমর্থন করে। গতানুগতিক ধারণা- ‘অবশ্যই কর্মের ফলাফল উদ্দেশের উপর নির্ভর করে’। আসলে কি তাই? মহৎ উদ্দেশে হত্যা কি কল্যাণকর? কীভাবে নির্ণয় করবো যে, উদ্দেশ্য মহৎ? পৃথিবীর ইতিহাসে যত রক্তপাত হয়েছে তা তো মহৎ উদ্দেশেই হয়েছে!

মহৎ উদ্দেশেই পৃথিবীতে যুগে যুগে ধর্মযুদ্ধ হয়েছে! হিটলারের উদ্দেশ্য ছিল, মহত্ত্বম ব্যক্তিরা বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। তাই জার্মান জাতি এবং অযুত বুদ্ধিজীবী তাকে সমর্থন করেছিল। ইহুদীদের অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছিল তথাকথিত মহৎ উদ্দেশেই। তথাকথিত মহৎ উদ্দেশেই আমেরিকা আগ্রাসন চালিয়েছে ভিয়েতনাম, ইরাক, লিবিয়ায়। তথাকথিত মহৎ উদ্দেশেই আইএস জঙ্গিরা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেন, পকিস্তানসহ পৃথিবীর অনেক দেশে।

সূচির মহৎ উদ্দেশে (!) রোহিঙ্গারা এখন উদ্বাস্তু। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মহৎ উদ্দেশে নিহত হয়েছে প্রায় ২কোটি মানুষ। স্তালিনের যুক্তি ছিল সাম্যবাদ মানবজাতিকে মুক্তি দেবে। সুতরাং কয়েক কোটি মানুষ মারা গেলেও কিছু যায় আসে না। কোথায় গেল স্তালিনের সাম্যবাদ? হিটলারের আর্যরা?

ধর্ম বিপন্ন হলে ক্রুসেড কিংবা জিহাদ ফরজ হয়ে যায়। কে নির্ধারণ করে যে ধর্ম বিপদে পড়েছে? তারাই, যারা ‘মহৎ উদ্দেশ্য’ দ্বারা তাড়িত হয়। তারাই, যারা দাসত্বের মধ্যে মানবতার মুক্তি দেখে। যুগযুগান্তে জগতে যে-সব অমঙ্গল সাধিত হয়েছে, একটিরও উদ্দেশ্য মন্দ ছিল না। স্বর্গের উদ্দেশেই উৎপন্ন হয়েছে সব নরক।

সূচির মহৎ উদ্দেশে (!) রোহিঙ্গারা এখন উদ্বাস্তু। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মহৎ উদ্দেশে নিহত হয়েছে প্রায় ২কোটি মানুষ। স্তালিনের যুক্তি ছিল সাম্যবাদ মানবজাতিকে মুক্তি দেবে। সুতরাং কয়েক কোটি মানুষ মারা গেলেও কিছু যায় আসে না। কোথায় গেল স্তালিনের সাম্যবাদ? হিটলারের আর্যরা?

কিছু কর্ম স্বয়ং মন্দ। যেমন চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যা। উদ্দেশ্য ভালো হলেও এই কর্মগুলো ভালো হয় না। মন্দ চিরকালই মন্দ- উদ্দেশ্য মন্দকে ভালো করে না।

ভালো উদ্দেশ্য থাকা ভালো, কিন্তু ভালো উদ্দেশেও মিথ্যা, হত্যা, চুরি, ব্যভিচার মন্দ। হত্যা করা মন্দ, কিন্তু হত্যার বদলে হত্যাও মন্দ। রাষ্ট্রও যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয় (ক্রসফায়ার) তবে তা সমর্থনযোগ্য নয়- এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেই তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যায় না।

মন্দ কাজের উদ্দেশ্যও মন্দ। ভালো কাজের উদ্দেশ্যও ভালো। সুতরাং যদি মন্দ কিছু করে থাকি তবে নিজেকে প্রবোধ দেয়া থেকে বিরত থাকি যে, উদ্দেশ্য ভালো ছিল। সৎ উদ্দেশেও অসৎ পরিহার করি। সামাজিক পরিবর্তন যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হয় না- এটি এখন প্রমাণিত। সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সেই মানুষের পরিবর্তন, যাদের নিয়ে সমাজ গঠিত।

সমাপ্তি চক্রবর্তী : কবি, কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply