আনুশকার মত কত তরুণী গ্রুটস্ট্যাডি, মুফতে বন্ধু হয়ে উঠা, অবাধে ঘোরাফেরার নামে ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তীব্র রক্তক্ষরণে নিঃশব্দে মারা গেছেন তার কোনো হিসাব আছে কারো কাছে? যারা ছেলেদেরকে ধর্ষণ আর মেয়েদেরকে ধর্ষিতা হতে উৎসাহ দিচ্ছে, যাদের কারণে সোনার বাংলা আজ ধর্ষণের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে তারা কি অপরাধী নয়? তারা কি দেশ-রাষ্ট্র সমাজদ্রোহী নয়?
বাংলাদেশের একটি টেলিকম কোম্পানির নিয়মিত প্রচারিত বিজ্ঞাপন- ‘বন্ধু ছাড়া জীবন অসম্ভব’। বন্ধু মানে মেয়ে মেয়ে ও ছেলে ছেলে নয়। মেয়ের জন্য ছেলে এবং ছেলের জন্য মেয়ে। আবার একজন হলে হবে না, একাধিক লাগবে। তাহলেই জীবন সম্ভব, না হলে অসম্ভব!
ডিসেম্বরের শেষদিকে ইশতিয়াক রেজা নামের একজন কথিত প্রগতিশীল সাংবাদিক দু্ইহাজার বিশকে বিদায় এবং একুশকে স্বাগত জানিয়ে একটি নিউজ পোর্টালে কলাম লেখেছিলেন। সে কলামে একুশ সালে তিনি কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান তার একটি চিত্র তোলে ধরেছিলেন এভাবে- একজন তরুণী আরেকজন তরুণের খুব সহজে বন্ধু হয়ে উঠবে। তারা হাতে হাত রেখে গ্রাম বাংলার অলিগলিতে নির্বিঘ্নে ছুটে বেড়াবে। তাদেরকে কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। এমন বাংলাদেশ তিনি চান, এটা তার স্বপ্ন।
টেলিকম কোম্পানি আর ইশতিয়াক রেজার মত জাফর ইকবাল, সেলিনা হোসেন, পীর হাবীব, মুন্নি সাহা এবং নারীবাদীরা এমন বাংলাদেশের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই লেখালেখি, বলাবলি করে আসছে। এ সম্পর্কে তাদের লেখা এবং বক্তব্য মিডিয়াও ফলাও করে প্রচার করছে। তাদের অবদান এবং উৎসাহে আজ বাংলাদেশে ছেলে মেয়েরা খুব সহজে একজন আরেকজনের বন্ধু হয়ে উঠছে। যেখানে সেখানে, যখন তখন ঘোরতে যাচ্ছে, এক বিছানায় রাত কাটাচ্ছে অনায়াসে। একজনের বাসায় আরেকজন থাকছে, সবাই মিলে ধুমছে গ্রুপস্ট্যাডির নামে ‘সম্মতিধর্ষণে’ লিপ্ত হচ্ছে।
আরো পড়ুন> এই অমানবিকতার শেষ কোথায়?
যেখানে গবেষকগণ বলছেন, একজন তরুণ এবং তরুণীর মধ্যে কামহীন কোনো সম্পর্ক হতে পারে না এবং হওয়া উচিতও নয়। হলে যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারে। সেখানে তারা তরুণ সমাজকে সহজে বন্ধু হয়ে উঠার এবং হাত ধরে চিপাচাপায় ঘোরার সবক দিচ্ছেন। এতেই বুঝা যায়, এই সমস্ত বিকৃত মনস্ক ও পশ্চিমা লেংটা সংস্কৃতির ধারকরা আমাদের তরুণ সমাজকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়। অথচ দেশে যে সমস্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তার সিংহভাগ এই কথিত বন্ধুত্বের আড়ালেই হচ্ছে। তবে প্রথমে সেটার নাম থাকে প্রেম। প্রেম প্রেম খেলার একপর্যায়ে তা ধর্ষণে রূপ নেয়। এসব ঘটনা ঘটার মূল কারণ যে কথিত বন্ধুত্ব, এটা হয়তো অনেকেই জানে না।
এ ছাড়া অষ্টম শ্রেণীর ক্লাসে ‘নিজেকে জানি’ নামের একটি অতিরিক্ত বই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। যাতে ছেলে মেয়েদের একজন আরেকজনের প্রতি বন্ধু হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। একসাথে থাকা, ঘোরাফেরা করা, যৌনতা প্রকাশ করা কোনো দূষণীয় বিষয় নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর যৌনতা প্রকাশ করতে গিয়ে যেনো কেউ গর্ভবতী না হয়, সেজন্য কনডম ব্যবহারের দীক্ষাও তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। আর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টিকে একেবারে হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে।
যেখানে গবেষকগণ বলছেন, একজন তরুণ এবং তরুণীর মধ্যে কামহীন কোনো সম্পর্ক হতে পারে না এবং হওয়া উচিতও নয়। হলে যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারে। সেখানে তারা তরুণ সমাজকে সহজে বন্ধু হয়ে উঠার এবং হাত ধরে চিপাচাপায় ঘোরার সবক দিচ্ছেন।
এখন দোষ কাদের- ছেলে মেয়েদের, নাকি বন্ধু হয়ে ধর্ষক-ধর্ষীতা হওয়ার প্রেরণাদাতাদের? আনুশকা, দিহান এবং অন্যরা তো শুধুমাত্র এদের চক্রান্তের শিকার। এই যে এখন প্রতিদিন ধর্ষণ, গণধর্ষণ, গ্রুপধর্ষণ এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যাওয়ার মত জঘন্য ঘটনা ঘটছে- এগুলো তো ছেলে মেয়ে খুব সহজে বন্ধু হয়ে উঠা, একসাথে থাকা, পার্কে যাওয়া, গ্রুপস্ট্যাডি করা ইত্যাদির প্রতিক্রিয়া। এ প্রতিক্রিয়া বর্তমানে করোনা মহামারির রূপ ধারণ করেছে। সম্প্রতি গত বুধবারে রাজধানীর কলবাগানে বন্ধুদের আহ্বানে গ্রুপস্ট্যাডি করতে গিয়ে বিকৃত সম্মতি ধর্ষণের শিকার হোন আনুশকা নামের এক ফুটফটে তরুণী। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
আনুশকার মত কত তরুণী গ্রুটস্ট্যাডি, মুফতে বন্ধু হয়ে উঠা, অবাধে ঘোরাফেরার নামে ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তীব্র রক্তক্ষরণে নিঃশব্দে মারা গেছেন তার কোনো হিসাব আছে কারো কাছে? যারা ছেলেদেরকে ধর্ষণ আর মেয়েদেরকে ধর্ষিতা হতে উৎসাহ দিচ্ছে, যাদের কারণে সোনার বাংলা আজ ধর্ষণের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে তারা কি অপরাধী নয়? তারা কি দেশ-রাষ্ট্র সমাজদ্রোহী নয়? দেশে ধর্ষক-ধর্ষিতার মাতা-পীতা মোটামাথা জাফর, সেলিনা, মুন্নি সাহা, ইসতিয়াক, নারীবাদী নামের পতিতা এবং মিতিলা ফারজানারা।
আপনি কার বিচার চাইবেন, ধর্ষক-ধর্ষীতার না তাদের মাতা-পীতাদের অর্থাৎ যারা এদের তৈরি করছে তাদের? যাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উস্কানিতে তরুণ সমাজ আজ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়েছে তাদের? যেসব মিডিয়া এদের বস্তাপচা যুক্তি দেদারসে প্রচার করছে তাদের? ধর্ষক-ধর্ষীতার বিচার নয়, আগে বিচার হওয়া আবশ্যক যারা অপরাধ করার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছে এবং তরুণ সমাজকে এসব করতে উদ্বুদ্ধ করেছে তাদের। সেটা লেখার মাধ্যমে, বলার মাধ্যমে বা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যেভাবেই হোক।
জুনায়েদ আহমেদ: সংবাদকর্মী ও কলাম লেখক
দেশ দর্শনের স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]