শনিবার দুপুর ১:৫০, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

আত্মকেন্দ্রিকতা ভোগবাদে বিশ্বাসী

মনির আবু মাহাথির

যারা মনে করে সমাজ তাদের দুঃখ-কষ্টে সহায়তার হাত বাড়াবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। সমাজ একটা বিমূর্ত ধারণা। এর মূলে রয়েছে মানুষ। বর্তমান মানুষের আচরণ আত্মকেন্দ্রিক। আত্মকেন্দ্রিক মানুষ ভোগবাদে বিশ্বাস করে, ত্যাগে নয়। আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের কত নিষ্ঠুর বানিয়েছে, এর মুখোশ উন্মোচন করেছে করোনা ভাইরাস। নিজের মাকে করোনায় আক্রান্ত ভেবে হাসপাতালের দরজায় ফেলে যাচ্ছে। কিছু কিছু ডাক্তার ঘা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ সরকারের প্রণোদনা পাওয়ার আশায় করোনায় আক্রান্ত মিথ্যা সার্টিফিকেট ক্রয় করে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিন পালন করছেন। আবার সমাজের কিছু কর্তাব্যক্তি নিঃস্ব-অভুক্ত মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সরকার প্রদত্ত ত্রাণ চুরি করে নিজের ভাগে নিয়ে যাচ্ছেন।

সবকিছুতে নিজের স্বার্থ খোঁজা স্বার্থপরদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিজের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে খুঁজেন। দুনিয়ার সকল সুযোগ-সুবিধা তাদের চায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের রয়েছে সরব উপস্থিতি। তাদের লেখায় দেশ ও দশের কথা পাবেন না। অসহায় মানুষের দুঃখ দূর করার উপায় বিশ্লেষণপূর্বক কোনো রচনা তারা লিখতেও জা‌নে না। কিংবা দরিদ্রতা দূরীকরণে দূর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের কোনো শক্ত অবস্থান নেই। তবে তাদের দ্বারাও কিছু সহযোগিতা হয় যা পুকুর চুরি করে মাছ বিতরণের মতো।

আরো পড়ুন- চিন্তার ঐক্য চিরসত্যের সন্ধান দেয়

আজকাল সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে কারো কোনো বক্তব্য নেই। চিন্তাশীল কোনো মতামতও প্রকাশ নেই। সমাজ নিয়ে গবেষণা নেই। অন্যায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অবস্থান নেই। যদি কেউ কষ্ট পায়! পাছে না কেউ বিরক্তবোধ করে! সস্তা জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে তারা এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন। ফলে অন্যায় অপকর্মকারীরা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের সুশীল সমাজের কেউ কেউ তো তাদের সেই কাজের মধ্যেও সমাজ উন্নয়নের উপকরণ খোঁজে বের করার চেষ্টা করে বেড়া‌চ্ছে।

প্রতিবাদ ছাড়া যে অসুন্দর দূর হয় না, তা আর পড়ানো হয় না। প্রতিবাদী হোন। মনে রাখবেন প্রশংসা করার জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। সমালোচনার জন্য সাহস ও যোগ্যতা দুটোই লাগে। আচ্ছা, এই যে অস্বস্তিকর ভঙ্গুর সমাজে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের রেখে যাচ্ছি, তারা কি এজন্য আমাদের দায়ী করবে না? আমাদের সমালোচনায় মুখর হবে না? তারা কি এজন্য আমাদের অভিশাপ দিবে না? অস্থিতিশীল সমাজে অর্থ বিত্তের কি কোনো মূল্য আছে? বিশুদ্ধ পরিবেশ, মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ, সমৃদ্ধ দেশ এবং সুশৃঙ্খল নিরাপদ রাষ্ট্রব্যবস্থা কি অর্থসম্পদের চেয়ে উত্তম নয়?

লেখকের সব লেখা

সবকিছুতে সরকারের দোষ খোঁজা বোকামি। একটি জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক আচরণই সরকারের চরিত্র নির্ধারণ করে। মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজের সরকার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সদাচারী হয়ে থাকেন। পাগল দেশের রাজা পাগল হওয়াই স্বাভাবিক। তাই সরকার বা এর সিস্টেমের সমালোচনা না করে সমাজ বা সমাজের মানুষের আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। সামগ্রিকভাবে সমাজ এখনো ভেঙ্গে পড়েনি। নিজ পরিবার ও প্রতিবেশির উপকারের মাধ্যমে পূনর্গঠনের কাজ শুরু করা যেতে পারে। সুন্দর একটি পরামর্শও অন্যের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম- তা বিশ্বাস করতে হবে। পাশাপাশি অন্যায়কে ঘৃণা এবং অন্যায় বলার সৎসাহস সৃষ্টি করতে হবে।

মনির আবু মাহাথির: শিক্ষক, কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: মনির আবু মাহাথির

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply