বৃহস্পতিবার রাত ৯:২৯, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ভোর আসবে মানুষেরই হাত ধরে

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

নিশ্চয় আবার ঘুরে দাঁড়াবে পৃথিবী। মানুষ ফিরে পাবে মানবিকতা, মূল্যবোধ। অন্ধকার ফেঁড়ে আলো আসবে। হয়তো আমরা সবাই এমন একটা ভোরের অপেক্ষাতেই রয়েছি, যা আবার এই মানুষের হাত ধরেই আসবে।

অত্যাচার জুলুম ক্ষমতার নয়, ধ্বংসের পূর্বাভাস! পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই কোনো কিছুর স্থায়ীত্ব থাকেনি। রাজ্য, রাজনীতি, সাম্রাজ্য, ধর্ম সবকিছুই পরিবর্তন হয়েছে যুগে যুগে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে মানব সমাজ। আজ যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে এই পৃথিবীতে তা অতীতেও বহুবার হয়েছে। ঠিক যখন সীমা ছাড়িয়েছে, তখনই প্রকৃতির নিয়মে ধ্বংস হয়েছে। নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মানবজাতি।

অত্যাচার জুলুম, অহংকার এর পরিণাম কখনোই ভালো কিছু আনেনি, ধ্বংস হয়েছে সবকিছু যুগে যুগে। তারপর মানুষ আবার ন্যায়কে হাতিয়ার করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু সেটাও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, আবারও পথভ্রষ্ট হয়েছে মানব জাতি, তারপর আবার পতন। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মানুষের শুরুটা হয়েছিল মর্যাদা দিয়ে। কিন্তু মানুষ একসময় মর্যাদা ভুলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। তখনই মানুষ হয়ে উঠেছে অহংকারী, দাম্ভিক আর সম্পদ ও ক্ষমতার দাস। ধ্বংস করেছে মানব আত্মার মর্যাদা। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে যে মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে, মানুষ তা ভুলে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছে। আর তখনই মানুষ একে অন্যের উপরে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াই শুরু করেছে। সেই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই একসময় ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ম, গোত্র আর জাতিগত ক্ষেত্রে। কার ধর্ম কার থেকে বেশি শ্রেষ্ঠ, এক গোত্র আরেক গোত্রের চেয়ে কতটা শক্তিশালী, এক জাতি আরেক জাতির থেকে কতটা ক্ষমতাবান- এই লড়াইয়ে জড়িয়েছে মানবজাতি। অথচ কারোরই একটার বেশি দুটো মাথা নেই।

আরো পড়ুন> মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ: মুক্তি পাক নিকৃষ্ট ভাষা থেকে

মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে সৃষ্টিকর্তা বহুবার পৃথিবীতে ধর্ম আর মহামানব পাঠিয়েছেন। তাঁরা এসে মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, ধর্মের আলোতে তাদের অন্তরে আলো জ্বালিয়েছেন। কয়েক যুগ পরে দেখা গেল, মানুষ সেই ধর্মকেও তার অপকর্মের হাতিয়ার বানিয়েছে। প্রত্যেক ধর্মের মূল কথা হচ্ছে, বিশ্বমানবতা ও ন্যায় বিচার। কিন্তু মানুষ একসময় ধর্মের মূল পাল্টে ফেলেছে। ন্যায়বিচারকে পাঠিয়েছে নির্বাসনে আর মানবতাকে করেছে দলিত। ধর্মকে বানিয়েছে আচার অনুষ্ঠান। আস্তে আস্তে নিজের অস্তিত্বের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে যেয়ে একসময় কুসংস্কার আর মিথ্যা দিয়ে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে পরিবার, সমাজ ও জাতিকে। ঠিক সেরকমই এক অন্ধকার সময়ে আমরা এগিয়ে চলছি।

ইতিহাস কখনোই পাল্টায় না, শুধু নতুন মোড়কে রুপ নেয়। হয় মানুষ আবার মানবিকতা ও ন্যায়ের পথে ঘুরে দাঁড়াবে, নয়তো আবার ধ্বংস হবে। সর্বত্র আজ যে অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, তার পরিণতিতে মানুষ যতই হতাশ হোক আর অত্যাচারী নিজেকে যতই অবিনশ্বর ভাবুক, কিন্তু শেষটা হবে ন্যায় আর সত্যের। মেঘ যত ঘন হয়, সূর্যের উদয় ততই ঘনিয়ে আসে। শুধু মাঝখানে একটা ঝড় বয়ে যায়।

সারা পৃথিবী আজ অশান্ত, ন্যায় অন্যায় মানুষ গুলিয়ে ফেলেছে। বিবেক, মনুষ্যত্ব আজ নির্বাসনে। রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে কে কার থেকে শ্রেষ্ঠ সেই লড়াই চলছে। অকারণে মানুষ মরছে, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। মানুষ আজ জানেই না সে কেন এতো অত্যাচারিত হচ্ছে! নারীর সন্মান আজ লুন্ঠিত হচ্ছে, একটা ছোট শিশু কন্যাও রেহাই পাচ্ছে না বিকৃত কর্মকাণ্ড থেকে। ধনী গরিবের ভেদাভেদ আজ চরমে। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা আজ হাস্যরসে পরিণত। জ্ঞানী-গুণীদের জ্ঞান যাচাই করছে মূর্খরা। মানুষ মানুষের কষ্টগুলোকে মজা হিসেবে দেখছে।খাদ্য আজ মানুষের ক্ষুধা নিবারণের চেয়ে মজাদানের বিষয় হয়েছে।

রাষ্ট্র চালাতে যারাই ক্ষমতায় যাচ্ছে, তাঁরা রাষ্ট্রকে জনগণের আমানত না ভেবে নিজের সম্পত্তি ভাবছে। সাধারণ মানুষ যেন তাদের কাছে একটা গিনিপিক। চুরি, দুর্নীতি আজকে যেন সহজ সাধারণ বিষয়। বিচারের নামে চলে প্রহসন। হ্যাঁ, আমরা সেই নিয়তির চরম সময়ে আজ উপস্থিত। মানব সমাজের এই উন্মাদনা নতুন ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে। ঝড়টা কী? কীভাবে আসবে আমরা কেউ নিশ্চিত নই। কিন্তু আসবে এটা নিশ্চিত। কারণ ইতিহাস সেটাই বলে।

লেখকের সব কলাম

ইতিহাস কখনোই পাল্টায় না, শুধু নতুন মোড়কে রুপ নেয়। হয় মানুষ আবার মানবিকতা ও ন্যায়ের পথে ঘুরে দাঁড়াবে, নয়তো আবার ধ্বংস হবে। সর্বত্র আজ যে অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, তার পরিণতিতে মানুষ যতই হতাশ হোক আর অত্যাচারী নিজেকে যতই অবিনশ্বর ভাবুক, কিন্তু শেষটা হবে ন্যায় আর সত্যের। মেঘ যত ঘন হয়, সূর্যের উদয় ততই ঘনিয়ে আসে। শুধু মাঝখানে একটা ঝড় বয়ে যায়।

সেই ঝড়ে উলটপালট হয় প্রকৃতি। আবার নতুনভাবে যাত্রা শুরু হয় মানবজীবনের। হয়তো তেমনি এক আলোর আশায় আমরা। ইনশাআল্লাহ নিশ্চয় আবার ঘুরে দাঁড়াবে পৃথিবী। মানুষ ফিরে পাবে মানবিকতা, মূল্যবোধ। অন্ধকার ফেঁড়ে আলো আসবে। হয়তো আমরা সবাই এমন একটা ভোরের অপেক্ষাতেই রয়েছি, যা আবার এই মানুষের হাত ধরেই আসবে।

লেখকের ব্লগ

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি : কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম

ট্যাগ: জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

[sharethis-inline-buttons]

One response to “ভোর আসবে মানুষেরই হাত ধরে”

  1. মনিরুল ইসলাম রাজু says:

    আপু, আপনার এই (মেঘ যত ঘন হয়, সূর্যের উদয় ততই ঘনিয়ে আসে। শুধু মাঝখানে একটা ঝড় বয়ে যায়।) কপি করে, পোস্ট করলাম । কোনো সমস্যা হলে বলবেন, আমি লাগিলে পোস্ট টি ডিলেট করে ফেলবো।

Leave a Reply