দেরিতে বিয়ে করা কোনোই সমস্যা নয়, বরং সীমাহীন উপকারী। যদি ছেলে-মেয়েদের যৌনতা নিয়ন্ত্রণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পথ-পদ্ধতি, প্রশিক্ষণ কেউ দিতে পারে। আর এর অভাবে বিয়ে করে বহুরকম সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা থেকে মুক্তি নেই, এটাই বাস্তব কথা।
বিয়ে নিয়ে আমাদের যুবসমাজে এবং অভিভাবক মহলে দুশ্চিন্তা ও কুসংস্কার সীমাহীন। সাধারণ ও ধর্মীয়- দুক্ষেত্রেই দুরকম দুশ্চিন্তা ও কুসংস্কার। উভয়ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এক্ষেত্রে মূর্খতা চর্চার চূড়ান্ত সীমানায়। সমস্যা সমাধানে ন্যূনতম বাস্তবধর্মী জ্ঞান অন্বেষণ হচ্ছে না। তাই এ নিয়ে টু শব্দটি করলেও প্রায় সবাই, বিশেষ করে কথিত ধার্মিকরা হামলে পড়বে। তাছাড়া বিষয়টাও এত জটিল যে লেখনীতে নিয়ে আসা একটু কষ্টকর। তাই লিখব লিখব করেও লেখা হচ্ছে না। চেষ্টা করছি যত শীঘ্র সম্ভব কোনো একটি কলামে একটু বড় পরিসরে পর্যালোচনা করার।
সংক্ষেপে একটু বলে রাখি। প্রথমত ইসলামের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সমসাময়িক সমস্যার সর্বোচ্চ সমাধান হিসেবেও এটি কাজ করবে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের আটাশ-ত্রিশের আগে বিয়ে করা খুবই অনুচিত। এই বয়স পর্যন্ত জ্ঞানচর্চা, অর্থনৈতিক ভিত্তি ইত্যাদি মজবুত হবে। অধিক বয়স পর্যন্ত যৌবন থাকবে, জন্মহার কমবে, অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতা ও পরিস্থিতি সীমিত হবে ইত্যাদি। ধর্ম অল্প বয়সে বিয়ের অনুমতি দিয়েছে বিয়ের নামে যৌনলালসা পূরণ করতে নয়, বরং সমসাময়িক সমাজ, পরিবেশ, জনসংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সামগ্রিক মানবিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে। সুতরাং বিভিন্ন সমাজ পরিবেশ ও সমসাময়িক অবস্থার বিবেচনায় বিয়ের সাধারণ বয়স বাড়বে ও কমবে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা, সমাজ, অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষার অবস্থা প্রভৃতি বিষয়গুলো বিবেচনা করে বলা যায়, এ দেশে মেয়েদের ২৮ এবং ছেলেদের ৩০ এর আগে বিয়ে করা অনুচিত এবং বহু সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সমস্যার কারণ।
পয়ত্রিশ/চল্লিশে বিয়ে করা আর বুড়ো বয়সে বাচ্চা নেয়া লজ্জার নয়, বরং অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আর যে ছেলেমেয়েরা যৌনচাপকে মাত্র ত্রিশ/পয়ত্রিশ পর্যন্ত সংবরণ করতে পারে না, এর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও পরিবারে নেই, তারা মূলত বিয়ে করেও ‘পাপ’ থেকে বাঁচতে পারে না। কারণ মানুষের চাহিদা অসীম। প্রবৃত্তিজাত কামনা-বাসনা সাধারণত সদাজাগ্রত। প্রাপ্তির অনুকুলে এটা লাগামহীন। তাই দেখা যায়, যৌনলালসায় বহুগামিতা, পরকীয়া, যৌনপল্লিতে যাওয়া, সমকামিতা, ধর্ষণ, পারিবারিক ঝগড়া ইত্যাদি বিবাহিতদের মধ্যেই বেশি।
সম্পাদকের মিনি কলাম
যে এই ছোট্ট জীবনে এতটুকু (৩০/৩৫ বছর পর্যন্ত) লাগাম পরাতে পারে না, তার কাছ থেকে জাতি আর কী আশা করতে পারে? আর এতটুকু ঝুঁকি নিতে গিয়ে যদি কারো জীবনে বিয়ের ফুলই না ফোটে, তবু হতাশা বা আক্ষেপের কিছু নেই। কারণ ঘটনাক্রমে এটি থেকে বঞ্চিত থাকতে হলেও স্রষ্টা এটা পুষিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন এই দুনিয়াতেও। এটা বিশ্বাস করা আজকের ছেলেমেয়েদের জন্য খুবই কঠিন। তাই তো আজ সমাজের সর্বত্র এই অবস্থা! সমকামিতা, পুরুষের সীমাহীন যৌনদুর্বলতা, ধর্ষণ, ব্যভিচার- এসবের মূল কারণ এখানেই।
এই বয়স পর্যন্ত জ্ঞানচর্চা, অর্থনৈতিক ভিত্তি ইত্যাদি মজবুত হবে। অধিক বয়স পর্যন্ত যৌবন থাকবে, জন্মহার কমবে, অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতা ও পরিস্থিতি সীমিত হবে ইত্যাদি। পয়ত্রিশ/চল্লিশে বিয়ে করা আর বুড়ো বয়সে বাচ্চা নেয়া লজ্জার নয়, গর্বের বিষয়।
সুতরাং বাংলাদেশের জনসংখ্যা, সমাজ, অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষার অবস্থা প্রভৃতি বিষয়গুলো বিবেচনা করে বলা যায়, এ দেশে মেয়েদের ২৮ এবং ছেলেদের ৩০ এর আগে বিয়ে করা অনুচিত এবং বহু সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সমস্যার কারণ। অন্যদিকে দেরিতে বিয়ে করা কোনোই সমস্যা নয়, বরং সীমাহীন উপকারী। যদি ছেলে-মেয়েদের যৌনতা নিয়ন্ত্রণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পথ-পদ্ধতি, প্রশিক্ষণ কেউ দিতে পারে। আর এর অভাবে বিয়ে করে বহুরকম সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা থেকে মুক্তি নেই, এটাই বাস্তব কথা।
আরো পড়ুন> প্রশ্নবিদ্ধ ফরীদ মাসউদের জঙ্গীবাদবিরোধী ফতোয়া
বিয়ে কখনোই যৌনচাপ নিয়ন্ত্রণের পথ নয়, যদি যথার্থ যৌনজ্ঞান, পর্যাপ্ত ধৈর্য, প্রশিক্ষণ, এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সঠিক গবেষণা এবং সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত না থাকে। এসবের অভাবে একদিকে দুয়েকটা শ্রেণি কম বয়সে বিয়ে করে জনসংখ্যার চাপ বাড়াবে, অর্থনৈতিক সমস্যা, রাস্তাঘাটে জ্যাম, জাগতিক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতাসহ অসংখ্যা সমস্যা বাড়াবে। কিন্তু তাদের যৌন লালসা কমবে না। সমকামিতা, তালাক, বহুবিবাহ, স্ত্রী-নির্যাতন, যৌনহতাশা ও যৌনপঙ্গুত্ব চলতে থাকবে। অন্যদিকে অন্য কয়েকটা শ্রেণি অধিক বয়সে বিয়ে করতে গিয়ে সমকামিতার বৈধতা চাইবে, পতিতাপল্লি ও মদ-গাঁজার বৈধতা চাইবে, অবাধ যৌনতার বৈধতা চাইবে। কিন্তু তবুও সমাজে তাদের দ্বারা ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, নারী ও স্ত্রী-নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যা, যৌনপঙ্গুত্ব মহামারির আকার ধারণ করবে।
জাকির মাহদিন : সমাজগবেষক, সাংবাদিক, কলামিস্ট
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]