“আমরা গর্ব করি আমার মা, আমার মা। অথচ নিজেদের অজ্ঞানে সেই মা'কে নিকৃষ্টতম ভাষার শিকার করিয়ে দেই। আমি যাকে মা তুলে গালি দিয়ে তার মা'কে অপমান করছি, ঠিক তেমনি সেই ব্যাক্তিটি প্রকাশ্যে যদি নাও পারে, অপ্রকাশ্যে নিশ্চয় গালি দিচ্ছে একই ভাষায়। তাহলে এসব কী করছি আমরা?”
‘মা’ শব্দটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শব্দ। মা এমন একজন মানুষ, যার মাধ্যমে স্রষ্টা মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠান। মা, যিনি কিনা দশমাস দশদিন আপন গর্ভে ধারণ করে সন্তানকে জন্ম দেন। সকল ব্যথা-বেদনা সয়ে সন্তান বড় করে তুলেন। জীবনের সব খুশি-আনন্দ বিসর্জন দেন সন্তানের মুখ চেয়ে। প্রত্যেকটি মানুষ প্রথম কথা শেখে মায়ের কাছ থেকে, এ জন্যই প্রত্যেক দেশের ভাষাকে বলা হয় মাতৃভাষা। আর প্রত্যেক ভাষার শ্রেষ্ঠ শব্দ হচ্ছে সেই ভাষায় ‘মা’।
আমরা কতোই না গর্ব করি মা শব্দটির জন্য। এমন কি আমরা সেই জাতি, যারা মাকে ‘মা’ ডাকার অধিকারের ভাষা আদায়ে রক্ত দিয়েছি। পৃথিবীর একমাত্র ভাষার জন্য জীবন দেওয়া জাতি আমরা। অথচ এই আমরাই নিজেদের সামান্য স্বার্থে সেই মা শব্দটাকে জুড়ে নিকৃষ্ট সব গালিগুলো দেই একে অন্যকে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অথবা তার উপরে রাগ ঝাড়তে বেছে নেই মায়েদের। তাদের মা তুলে জঘন্য জঘন্য গালিগালাজ করি। আবার অপর পক্ষও একই ভাষা ফেরত দেয়। কখনো ভেবে দেখেছি কি, আমরা নিজেদের এই স্বভাবের দ্বারা কতটা অবিচার করছি মা এর উপর? আমাদের দশমাস দশদিন পেটে ধরে একজন মা কি জন্ম দেন পৃথিবীর নিকৃষ্টতম ভাষাগুলো শোনার জন্য?
আমরা গর্ব করি আমার মা, আমার মা। অথচ নিজেদের অজ্ঞানে সেই মা’কে নিকৃষ্টতম ভাষার শিকার করিয়ে দেই। আমি যাকে মা তুলে গালি দিয়ে তার মা’কে অপমান করছি, ঠিক তেমনি সেই ব্যাক্তিটি প্রকাশ্যে যদি নাও পারে, অপ্রকাশ্যে নিশ্চয় গালি দিচ্ছে একই ভাষায়। তাহলে এসব কী করছি আমরা? ব্যক্তির রাগ ঝাড়তে অন্যের মা’কে অপমান করছিই, সাথে সাথে নিজের মাকেও একই পরিণতির শিকার করিয়ে ছাড়ছি। এক কথায় মা জাতিটাকেই বাজারে তুলে ছাড়ছি। এই তো আমরা মায়ের সন্তান, তাইনা? মাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলবো, মা দিবসে মাকে নিয়ে গল্প কবিতা লিখবো, তাকে নিয়ে সেলফি তুলবো, দেখাবো তাকে কতো ভালোবাসি, তারপর সামান্য স্বার্থে আরেকজনের মা’কে গালি দিব!
“সমাজের নিচুশ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চশ্রেণি পর্যন্ত কেউই বাদ নেই এই নিকৃষ্টতর কাজ থেকে। অবলীলায় করে যাচ্ছে এই নিকৃষ্ট কাজগুলো। রিকশাওয়ালা গাড়িওয়ালাকে, গাড়িওয়ালা রিকশাওয়ালাকে, মালিক শ্রমিককে, শ্রমিক মালিককে। স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে। যার উপরই রাগ হচ্ছে, তাকেই অপমান করার জন্য আমরা তার মা তুলে গালি দিচ্ছি। তরুণ সমাজ তো মা তুলে গালি দেয়াটাকে ট্রেডিশন বানিয়ে ফেলেছে।”
আপনি আমি যখন সামান্য স্বার্থে একজনের মা তুলে গালি দিচ্ছি, তখন কি ভেবে দেখেছি আমরা কতটা নিচু কাজ করছি? অন্যের মা’কে গালি দিয়ে যদি মনে করে থাকি পার পেয়ে গেলাম, আমার মা তো নয়। তবে মনে রাখা উচিত, মা শব্দটা যখন অপমানিত হয় তখন সেটি একজন মা নয়, পৃথিবীর সমস্ত মায়েরই অপমান। মা শব্দটা লাঞ্ছিত হওয়া মানে পৃথিবীর সকল মায়ের লাঞ্ছনা। অথচ ঈশ্বর আমাদের বেহেশত রেখেছেন নাকি এই মায়ের পদতলে। পিতা-মাতার ভাগের মাঝে ৪ ভাগের তিন ভাগই দিয়েছেন মা’কে। তাহলে বুঝে নিই, ঈশ্বরের কাছেও মা কতো মূল্যবান। যিনি কি না তার পরের স্থান মাকেই দিয়েছেন। মানব জাতির সৃষ্টির সবচেয়ে কষ্টকর দায়িত্বটা পালন করেন মা। আর সেই মা শব্দটাকেই কি না দিনে রাতে কীভাবে এবং কতভাবে অপমান করে চলেছি! সমস্ত নিকৃষ্ট ভাষায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অবলীলায় মা শব্দটাকে জুড়ে দিচ্ছি।
আরো পড়ুন> মেয়ের মা-বাবার সেবাও মেয়ের দায়িত্ব
সমাজের নিচুশ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চশ্রেণি পর্যন্ত কেউই বাদ নেই এই নিকৃষ্টতর কাজ থেকে। অবলীলায় করে যাচ্ছে এই নিকৃষ্ট কাজগুলো। রিকশাওয়ালা গাড়িওয়ালাকে, গাড়িওয়ালা রিকশাওয়ালাকে, মালিক শ্রমিককে, শ্রমিক মালিককে। স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে। যার উপরই রাগ হচ্ছে, তাকেই অপমান করার জন্য আমরা তার মা তুলে গালি দিচ্ছি। তরুণ সমাজ তো মা তুলে গালি দেয়াটাকে ট্রেডিশন বানিয়ে ফেলেছে। বন্ধুও বন্ধুকে কতো সহজেই মা’কে জড়িয়ে গালি দিচ্ছে, কি সহজ স্বাভাবিক ভাবছে বিষয়টাকে। শ্রেষ্ঠ মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের বড় জায়গা গর্ভধারিনী মাকে খারাপ ভাষাগুলো দিয়ে অপমান করে চলেছি। অথচ এই আমরাই কিনা নিজেদের সভ্য বলি, সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করি। অথচ সেই শ্রেষ্ঠত্বের জন্মদাত্রীকে প্রতিনিয়ত নিকৃষ্টতর শব্দ দিয়ে আঘাত করে চলেছি।
লেখকের সব লেখা
এতো শ্রেষ্ঠত্ব, এতো অর্জন দিয়ে আমরা কী করব, যেখানে নিজেদের গোড়াটাকেই অপবিত্র করে চলেছি? অন্যের মা’কে অপমান করছি জ্ঞানে-অজ্ঞানে, কিন্তু সেই অপমান শুধু সেই ব্যক্তির মা নয়, নিজের মাকেও করা হচ্ছে। সর্বোপরি পৃথিবীর সকল মা’কেই অপমান করা হচ্ছে। হ্যাঁ, জ্ঞানে অজ্ঞানে, শিক্ষিত অশিক্ষিত প্রত্যেকটি মানুষই এই কাজগুলো করছি। আজ থেকে আসুন না আমরা প্রতিজ্ঞা করি, পৃথিবীর এই শ্রেষ্ঠ শব্দ ‘মা’ শব্দটিকে সকল নিকৃষ্ট শব্দ থেকে মুক্ত করব। মা শব্দের কোনো অপমান হতে দেব না। পৃথিবীর সকল নিকৃষ্ট ভাষাকে কখনো মায়ের সাথে জুড়ে দিয়ে মা’কে অপমান করব না। একে অন্যকে আঘাত করতে কখনোই মাকে বেছে নেব না। মা’কে বড় বড় উপহার দেওয়ার চেয়ে আগে নিজেদের মনকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করি, আমার মায়ের সাথে পৃথিবীর সকল মায়ের সম্মান আমরা রক্ষা করব।
জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি : কলামিস্ট
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]