শহরের অস্থির জীবনে দেখেছি, বহু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ও উচ্চ শিক্ষিত মেয়েরা বিয়ের পর অনেকটা অনিচ্ছায় পারিবারিক অশান্তি এড়িয়ে শুধু গৃহকর্ম করেই জীবন কাটায়। শিক্ষকতার সুবাদে অনেক অভিভাবক মা’দের সাথে কথা হয়। শুনেছি ও দেখেছি, অনেক উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিন্মবিত্ত নারীদের মানসিক যন্ত্রণার কথা।
প্রতিটি মানুষই সৃজনশীল প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেয়। তাই জীবন চালিয়ে নিতে সবারই কর্মের বলয় সৃষ্টি করে নিতে হয়। যে কোনো নারী ও পুরুষ দুজনকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হয়। শুধু চাকরির প্রত্যাশায় বসে অলস সময় কাটাতে নেই। ছাদ-কৃষি কিংবা বেলকনিতে পাখি পালন, ইনডোর প্লান্ট, কবুতর পালন, টার্কি চাষ, একুরিয়ামে সৌখিন মাছের চাষ, কোয়েল পালন ও খরগোস পালন ইত্যাদি। সৌখিন সুচিকর্ম ব্লক বাটিক কিংবা সেলাই হতে পারে অবসরের অনুসঙ্গ। চারিদকে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।কর্মব্যস্ততা মানুষের মনকে ভালো রাখে। স্বল্প পরিসসরে নব নব সৃজনে উজ্জীবিত থাকে গৃহিণীর মন। বাড়তি কিছু আয় হয়। যা তাঁর শখ পুরণে সহায়তা করে।
যাপিত জীবনে প্রশান্তি পেতে, সংসারে সুখ আনতে হলে, প্রত্যেক গৃহিণীকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। স্বাবলম্বী হতে হবে প্রতিটি মেয়েকেই। এখন যুগ পাল্টে গেছে, শুধু স্বামীর অর্থের উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি গৃহিণীদের অর্থনৈতিক ছোট ছোট পদক্ষেপ একদিকে যেমন আর্থিক পরনির্ভরশীলতা থেকে রক্ষা করবে, অন্যদিকে নিজের মন-মানসিকতা এবং সৃষ্টিশীল ও স্বাধীন চিন্তা-চেতনারও বিকাশ ঘটাবে।
শহুরে জীবন এক আবদ্ধ জীবন। তাই গৃহিণীদের গৃহকর্মের পর অবসর বিনোদনের সুযোগ খুবই কম। ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকা, টিভি দেখা, খবর কাগজ পড়া কিংবা গল্প করে সময় কাটানো ছাড়া কায়িক শ্রমের কিংবা সৃজনশীল বুদ্ধি মেধা প্রয়োগের সুযোগ নেই বললেই চলে। ফলে খুব অল্পতেই মুটিয়ে যাওয়াসহ ডায়াবেটিস, প্রেসার ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের জন্ম হয়। শিক্ষিত মেয়েরা শুধু গৃহিণী হয়ে সংসার ধর্ম পালনে থাকলে খুবই হীনমন্যতায় ভোগে, গৃহে একপ্রকার মানসিক চাপেই থাকে। কেউ প্রকাশ করে কিংবা কেউ করে না।এমনও দেখেছি, নিজের স্কুল কিংবা কলেজ ভার্সিটির সহপাঠীদেরও এড়িয়ে চলে।
এমন মানসিক চাপ এড়িয়ে যেতে গৃহিণীদের অনেকেই ইন্টারনেটে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। তথ্যপ্রযুক্তি যুগে সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। রাজধানী, বড় বড় শহর ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে সাইবার অপরাধের ঘটনা। প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে সাইবার অপরাধ ঘটছে। পুলিশসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট সেলে প্রতিদিন জমা পড়ছে শত শত অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই নারী। ফলে দিন দিন সামাজিক সমস্যা বেড়েই চলছে।
যাপিত জীবনে প্রশান্তি পেতে, সংসারে সুখ আনতে হলে, প্রত্যেক গৃহিণীকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। স্বাবলম্বী হতে হবে প্রতিটি মেয়েকেই। এখন যুগ পাল্টে গেছে, শুধু স্বামীর অর্থের উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি গৃহিণীদের অর্থনৈতিক ছোট ছোট পদক্ষেপ একদিকে যেমন আর্থিক পরনির্ভরশীলতা থেকে রক্ষা করবে, অন্যদিকে নিজের মন-মানসিকতা এবং সৃষ্টিশীল ও স্বাধীন চিন্তা-চেতনারও বিকাশ ঘটাবে।
আমাদের সমাজে এখনো অনেক উচ্চ শিক্ষিত মেয়েকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও চাকরি করতে দেয়া হয় না। প্রতিটি পরিবারে এমন বহু নজির আছে। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংএ আয় করা সম্ভব এবং বর্তমানে এই পেশায় নারীদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। কারণ এটি একটি স্বাধীন পেশা, যেখানে সময় বেঁধে কাজ করতে হয় না। তেমনি নিজের সুবিধামতো ঘরে বসেও আয় করা যায়। সেই দিক থেকে নিন্মবিত্ত ও গ্রামীণ নারীরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে। তারা ঘরের কাজের পাশাপাশি হাঁস-মুরগী পালন, ছাগল-ভেড়া পালন, পাশের ডোবা-পুকুরে মাছ চাষ, উঠোনের চারপাশে অথবা বাড়ির পাশের খালি জমিতে ফল-ফলাদি ও শাক-সবজির চাষ ইত্যাদি। তবে আশার বিষয় এই যে, বর্তমানে শহুরে জীবনের একঘেয়েমী কাটাতে গৃহিণীদের অনেকেই ঘরে বসে আয়ের উৎস হিসেবে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যেমন বিউটি পার্লার, বুটিক হাউজ কিংবা রাস্তার পাশের বাসা থাকলে আলাদা একটা রুমে লেডিস ফ্যাশনের বিভিন্ন উপকরণ, পোশাক বিক্রি, হোম মেইড রকমারি খাবারের দোকান ও হোম ডেকোরেটেড উপকরণ ইত্যাদি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে।
আধুনিক লেডিস কর্ণারগুলোতে ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত শুধু মেয়েরাই আসবে এবং দোকানের সেলসম্যান, ম্যানেজার, টেইলার মেয়েই হয়ে থাকে। ফলে পরিবেশ সুন্দর থাকে। তাই মেয়েরা অন্য কোনো হয়রানীর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ও থাকে না।স্বচ্ছন্দে পছন্দের কেনাকাটা করতে পারে। শহরে কিংবা গ্রামে ছোট ছোট আধুনিক পোশাকের দোকানের প্রতি শিক্ষিত মেয়েরা ঝুঁকছে। হাল ফ্যশানের পোষাকগুলো বাছাই করে কিনতে।
শহরের অস্থির জীবনে দেখেছি, বহু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ও উচ্চ শিক্ষিত মেয়েরা বিয়ের পর অনেকটা অনিচ্ছায় পারিবারিক অশান্তি এড়িয়ে শুধু গৃহকর্ম করেই জীবন কাটায়। শিক্ষকতার সুবাদে অনেক অভিভাবক মা’দের সাথে কথা হয়। শুনেছি ও দেখেছি, অনেক উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিন্মবিত্ত নারীদের মানসিক যন্ত্রণার কথা। শুধু চাকরি নয় বরং শিক্ষিত নারীরা নিজ পরিবেশেই ছোট ছোট শখ ও আয়ের উৎস খুঁজে নিতে পারে। মেয়েদের জীবন যেন রান্নার কিংবা সংসার নিয়ে অলস সময় কাটাতে না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা ও পরিবারের বড়দের যাবতীয় সহায়তা করা প্রয়োজন। এরই মাধ্যমে সব নারীরাই কাজে ব্যস্ত থেকে তাদের গৃহবদ্ধ দুর্বিষহ জীবনের নিরব রোদন আর দীর্ঘশ্বাস নিবৃত করতে সম্ভব হবে।
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা : কবি ও শিক্ষিকা
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]