ঘটনা গত পরশু রাতের, গুলশান থেকে একটু আড্ডা মেরে ফিরছিলাম বাসায়। তখন বেজেছে রাত প্রায় ১১টা। মিরপুর ২এ পূর্ণিমা রেস্টুরেন্ট আর স্টেডিয়াম ৩নং গেটের মাঝ বরাবর হালকা জ্যাম এ পড়তেই পাশে একটা রিকশা এসে দাঁড়াতে লক্ষ্য করি একজন আপু রিকশা চালাচ্ছিলেন, প্রথমে ভাবি হয়তোবা মজা করে বা এমনি এমনি চালাচ্ছেন। কিন্তু সামনে থাকা পলিথিনে পানির বোতল থাকাতে খটকা লাগলো, কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করেই বসলাম, আপু, কিছু যদি মনে না করেন একটা প্রশ্ন করি?
উনি খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলেন, করেন ভাইয়া!
বললাম, রিকশা টা কি আপনিই চালান?
খুব সুন্দর, স্পষ্ট শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে বললেন, জ্বী ভাইয়া, আমি-ই চালাই।
একটু কষ্ট পেলাম তারপর জিজ্ঞেস করলাম, যদি সমস্যা না থাকে তাহলে বলবেন, কেন এটা আপনি চালান?
হাসতে হাসতেই বললেন, কি করবো ভাইয়া, বাসায় দুটো ছোট বাচ্চা, একজনের বয়স ২, আরেকজন গত রোজার ঈদের পর পরই হইছে, খাবার তো লাগে, না খেয়ে তো আর পারি না! আমি তো মা!
জিজ্ঞেস করলাম, আপনার স্বামী?
বললেন- গতবছরের প্রথম করোনা তে (তার মানে হয়তো আপু ২০২০এর মার্চ এর কথা বলছেন) উনি আরেকটা বিয়ে করেছেন, চলে গেছে, থাকে না আমাদের সাথে!
মনে হচ্ছিল আরো অনেক কথা বলি ওনার সাথে কিন্তু জ্যাম ছেড়ে দেয়, ওদিকে রাত ও বেড়ে গিয়েছে, বাসায় দুটো বাচ্চা হয়তো ঘুমোচ্ছে অথবা জেগে আছে ক্ষুধার্ত পেটে!
এর মধ্যে যা যা জানতে পারলাম, উনি পেটে বাচ্চা নিয়েই ৫-৬মাস চালিয়েছেন বাংলা রিকশা (প্যাডেলওয়ালা টা) তারপর এই দু’মাস, তিন মাস হলো পেয়েছেন এই ব্যাটারি যার জমা দৈনিক ২০০ বা ৩০০ (ঠিক করে শুনতে পারিনি, গাড়ির হর্নে)!
পথে অনেক ঝামেলা, একে তো মেয়ে মানুষ তারপর বয়স কম, রিকশাওয়ালার কথা তো বাদই দিলাম, ট্রাফিক পুলিশরাও নাকি বাঁকা কথা বা ইশারা-ইংগিত দিতে ছাড়ে না!
তারপরও জীবন যুদ্ধে হার মানতে নারাজ এই আপু সেটা যত টা না নিজের জন্য তার থেকেও বেশী বাসায় থাকা ঐ কলিজার টুকরো গুলোর জন্য!
ছবি তোলার রিকোয়েস্ট করাতে হেসেই বললো, হ্যা তোলেন ভাইয়া, সমস্যা নাই আর তারপর এই ভুবন ভোলানো মুচকি লাজুক হাসি, আহ্…!
ভাল থাকুক এই বোন, ভাল থাকুক পৃথিবীর সব মায়েরা!
আর বলছি ঐ সমস্ত “কুলাঙ্গার”দের যারা নষ্ট চোখে তাকাস এই সুন্দরের দিকে, অভিশাপ লাগবে, অভিশাপ লাগবে, অভিশাপ লাগবে!
উল্লেখ্য: এই লেখার প্রকৃত লেখক কে তা এখনো জানা যায়নি। তবে নোয়েল রেমন নামের একজনের একটি পোস্ট পাওয়া যায় একটি ফেসবুক গ্রুপে, গত ৩দিন আগের। এরপর থেকেই সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এটি ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে।
ক্যাটাগরি: নারী, প্রধান খবর, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]