নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত যতগুলো প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়েছে, সবগুলোই ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। ভোটার আইডি কার্ড সিস্টেমটি যত না সহজ করেছে, তার চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে মানুষকে। প্রযুক্তির সফল ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আগে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম প্রয়োজন হয়। তারা বারবার যে কোনো পদ্ধতির কথা মাথায় আসলেই অল্পসময়ে সারাদেশে প্রয়োগ করে বসে। পরে এর কুফল ভোগ করে জনগণ। শুধুই কি জনগণের হয়রানি? না একই সাথে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ অপচয় হয়?
বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে চলার খবর চারপাশে ডামাঢোলের সঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এর বাস্তব চিত্র দেখে মনে হয়, দেশ দিন-কি-দিন পিছিয়ে পড়ছে। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উদ্বোধনের পর দেশের মোবাইল কলরেট বেড়ে যায়। সাথে বাড়ে সরকারি ভ্যাটও। অথচ পুরো বিশ্বের নিয়ম হলো, আগে দেশের জনগণ এর ফলাফল ভোগ করে, তারপর তা আন্তর্জাতিক বাজারে যায়। অথচ বাংলাদেশের মানুষকে নিজ দেশের যে কোনো পণ্য বা যন্ত্র চড়া দামে কিনতে হয়। স্যাটেলাইট বা প্রযুক্তিগত যে কোনো পণ্য বা এর উৎপাদন নিয়মাবলী নিজ দেশের গবেষক-বিজ্ঞানীরা নিজেরা তৈরি করতে না পারলে তা চড়া দামে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যার দায় বহন করতে হয় দেশের জনগণকে। সরকার কেন এদেশের ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, প্রযুক্তিবিদদেরকে এত বিশাল অঙ্কের বাজেট দিয়ে পুষছে তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।
নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত যতগুলো প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়েছে, সবগুলোই ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। ভোটার আইডি কার্ড সিস্টেমটি যত না সহজ করেছে, তার চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে মানুষকে। প্রযুক্তির সফল ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আগে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম প্রয়োজন হয়। তারা বারবার যে কোনো পদ্ধতির কথা মাথায় আসলেই অল্পসময়ে সারাদেশে প্রয়োগ করে বসে। পরে এর কুফল ভোগ করে জনগণ। শুধুই কি জনগণের হয়রানি? না একই সাথে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ অপচয় হয়?
বর্তমানে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি তা হলো, আপডেট কোনো জিনিসের তথ্য পেলেই মানুষ এর পেছনে ছোটে। যেখানে ব্যাকডেটেড সম্পর্কেই সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। অথচ আপডেটেডটি ব্যাকডেটেডের সংস্করণ মাত্র। ব্যকডেটেড সম্পূর্ণ না করে আপডেট বাজারে আসলে এর ফলাফল ভাল না হওয়াটি স্বাভাবিক। যেখানে স্মার্ট কার্ড এখনো সবার হাতে পৌঁছেনি, সেখানে কী করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএম এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
নির্বাচনের বাকি মাত্র তিন থেকে চার মাস। এ অল্প সময়ে না নির্বাচন কমিশন নিজে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে, আর না জনগণকে প্রস্তুত করতে পারবে। এতে করে জনমনে বিভ্রান্ত হওয়ার যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে ১৪ দলের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগসহ ৭টি দল ইভিএম পদ্ধতিতে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করেছিল। বিএনপিসহ ১২টি দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেয়। তিনটি দল আংশিক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। একটি দল চার শর্তে ইভিএমে ভোট গ্রহণের পক্ষে মত দেয়। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০। সংলাপে অংশ নিয়েছিল ৩৯টি দল।
এসব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নির্বাচনকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করবে, তেমনি আরো অনেক বড় বড় সমস্যাও তৈরি হতে পারে।
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর
[sharethis-inline-buttons]