শর্তসাপেক্ষ কবিতা ‘সীমিত পরিসরে’ অনুমোদিত। সেসব শর্তগুলো পাওয়া গেলে কবিতা হচ্ছে ‘সালাদের’ মতো। সালাদ মূল খাবারের স্বাদ বাড়ায়। কিন্তু মূল খাবারের চাহিদা পূরণ করে না।
কবিতা কোনো জ্ঞান বা চিন্তাগত রচনা নয়, এমনকি জ্ঞানের কাচামালও নয়। কবিতা ও জ্ঞানগত রচনার একটা বড় পার্থক্য হল- কবিতা রচিত হয় প্রচণ্ড আবেগ-উত্তেজনা, বাড়াবাড়ি ও শত সহস্র মিথ্যা উপমা থেকে। আর জ্ঞান বা জ্ঞানগত আলোচনা গড়ে ওঠে এসবের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরু থেকে।
একজন জ্ঞানসাধককে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ, বাড়াবাড়িমুক্ত ও সত্যবাদী হতে হয়। ‘সামগ্রিক ও সমন্বিত’ দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটাতে হয়। আবেগ, উত্তেজনা, উস্কানী, ঘৃণামুক্ত হতে হয়। একজন জ্ঞানসাধকের একপাক্ষিকতা, খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি ও মিথ্যা উপমার ধারে-কাছেও ঘেষা যাবে না। অন্যদিকে একজন ‘কবি’র এসবেই অহর্নিশ বসবাস।
শর্তসাপেক্ষ কবিতা ‘সীমিত পরিসরে’ অনুমোদিত। সেসব শর্তগুলো পাওয়া গেলে কবিতা হচ্ছে ‘সালাদের’ মতো। সালাদ মূল খাবারের স্বাদ বাড়ায়। কিন্তু মূল খাবারের চাহিদা পূরণ করে না। তেমনি সমস্যাসঙ্কুল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বোঝার এবং সঠিক আলোচনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে সমন্বয় ও সমাধানে আসার কোনো জ্ঞানগত কাচামালও কবিতা সরবরাহ করে না।
আরো পড়ুন> আমি কেন অনলাইনে শিক্ষা-জ্ঞান বিরোধী
কবি অনেকটা ‘জাদুকরের’ মতো। তাই কবিতা নিয়ে লাফালাফি করা, জ্ঞানের অংশ মনে করা, ‘কবি’কে জ্ঞানীর মর্যাদা দেয়া, রাষ্ট্র গঠন, জাতি গঠন ও সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলোর সমাধান কবিতায় খুঁজে ফেরা নিতান্তই বোকামী।
সাহিত্যিকও অনেকটা সেরকমই। সাহিত্য মূলত গড়ে উঠে যৌনতা, অযৌক্তিক আবেগ, যতসব কল্পকাহিনি, প্রকৃতি নিয়ে বাড়াবাড়ি, মিথ্যার আশ্রয়, কোনো কিছুকে অতিরঞ্জিত করে বর্ণনা করা, সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ, পঞ্চেন্দ্রিয় ও প্রবৃত্তিজাত কামনা-বাসনা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে।
সুতরাং মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য, সততা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্রশ্নোত্তর, বিপরীতধর্মী শক্তির সমন্বয় ও বিকাশ- এসবের সূক্ষ্ম পর্যালোচনা কবিতা কিংবা সাহিত্য দিয়ে সম্ভব নয়।
জাকির মাহদিন: সম্পাদক, দেশ দর্শন
zakirmahdin@gmail.com
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম, সম্পাদকীয়, সম্পাদকের কলাম, সাহিত্য
[sharethis-inline-buttons]
লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ