শনিবার রাত ১২:৪৮, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ছোট ও নতুনদের প্রতি অত্যাচার

সীমান্ত খোকন

নিজের মতের সাথে অন্যের মত না মিললেই আমরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করি। শত্রুতা শুরু করি ও অপমান করে কথা বলি। অথচ একবারও ভাবি না, তারও নিজস্ব মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। দ্বিমত পোষণ করা অন্যায় নয়।

মানুষ তার স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতা ভুলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে তার সীমারেখা কতটুকু তা সে নিজেও জানে না। আমাদের বাঙালি সমাজে অনধিকার চর্চা অনেকটা বেশি। সবাই সবাইকে নিজের অধিনস্ত মনে করে। যার সাথে যে কাজ করার কথা নয়, সেই কাজ করে বসি আমরা। অন্যকে নিজের মতো চালাতে চাই। ঘরের বউকে স্বামী যেভাবে চালায়, বাইরের মানুষটিকেও সেভাবে আমরা চালাতে চায়। ফলে সমাজে অশান্তি তৈরি হয়।

নিজের মতের সাথে অন্যের মত না মিললেই আমরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করি। শত্রুতা শুরু করি ও অপমান করে কথা বলি। অথচ একবারও ভাবি না, তারও নিজস্ব মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। দ্বিমত পোষণ করা অন্যায় নয়। বরং অন্যের উপর নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়া বা অন্যের মতামতকে সম্মান না করা অন্যায়। এই প্রবণতা আমাদের সমাজে খুব বেশি। জোর করে, এমনকি ধমক দিয়ে হলেও অন্যকে নিজের মতামত মানতে বাধ্য করা হয় আমাদের সমাজে। অনেক সময় আমার ঘরের ভিতর আমি কি করলাম আশপাশের লোকজনের কাছে সেই কৈফিয়ত দিতে হয়। নামাজ না পরলে নামাজিরা প্রকাশ্যে ঘৃণা করে।

এসব সইতে সইতে মানুষেরও  এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। মানুষ প্রতিবেশির মন জুগিয়েই এখন বেশি চলে। আমি যদি এই জামাটা পরি তাহলে প্রতিবেশি কি বলবে, আমি যদি বউকে নিয়ে প্রতিদিন পার্কে বা মার্কেটে যাই তাহলে প্রতিবেশি কি বলবে অথবা আমি যদি লম্বা চুল রাখি তাহলে লোকে কি ভাববে? মেয়েটা জিন্স প্যান্ট পরতে গিয়ে ৭বার ভাবে প্রতিবেশির কথা। আমি যদি রোজ রাত ১২টায় ঘরে ফিরি তাহলে পাশের বাড়ির তারা কি ভাববে? এসব ভেবেই আমরা এখন চলি নিজেকে অনেকটা নিজেকে বলি দিয়ে।

পরিবারের ছোট সন্তানদের প্রতি যে অত্যাচার করা হয়, সেই সমাজ ও পরিবারকে আপনি কি বলবেন? যে প্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মীর প্রতি পুরনো কর্মীদের অত্যাচার করাটাকেই সঠিক নিয়ম বলা হয়, সেটাকে আপনি কি বলবেন?

শুধু কি তাই? ‘আমর নামটা এমন কেন রাখলাম’ প্রথম পরিচয়েই এমন অবান্তর প্রশ্নও অনায়াসেই করে বসে যে-কেউ। প্রশ্নের আগে একবার ভাবে না, প্রথম পরিচয়েই এমন একটা ব্যাক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করে ফেলাটা আসলে কতটুকু সমিচিন। অনেকে অকপটে মানুষের সামনে এমন প্রশ্নও করে, ‘আপনার স্যালারি কত’, ‘কতটুকু পড়াশোনা’ ইত্যাদি। অনেকে চাকরির ভাইবা বোর্ডের মতো ইন্টারভিউও নেওয়া শুরু করে। কখনো কেউ যদি স্ট্রাইক করে বসে যে, ‘আপনার এমন ব্যাক্তিগত প্রশ্ন মোটেও ঠিক হচ্ছে না’। তখন তারা তখা সমাজ ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখে না। তারা বলে, ছেলেটা বেয়াদব, সম্মান দিতে জানে না।

তাদের কথা হলো, তোমার বাসর ঘরে কিভাবে কি করেছো তাও বলতে হবে। যদি তা না বলো তাহলে আবার জোর গলায় ওই প্রশ্নটা করবে। তবু যদি না বলো তবে তুমি বেয়াদব। এটাকে সুশীল সমাজ বলা যায়? এই সমাজে কি সুস্থ মানুষ বাচতে পারে? যে সমাজে বয়সে বড় ও ছোট হিসেব করে দোষগুণ মাপা হয়? যেখানে বড় সন্তানেরা অনায়াসে ছোটদের মারধর করলে সেটা দোষের নয়। পরিবারের ছোট সন্তানদের প্রতি যে অত্যাচার করা হয়, সেই সমাজ ও পরিবারকে আপনি কি বলবেন? যে প্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মীর প্রতি পুরনো কর্মীদের অত্যাচার করাটাকেই সঠিক নিয়ম বলা হয়, সেটাকে আপনি কি বলবেন?

সীমান্ত খোকন : প্রবাসী সাংবাদিক

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply